যে গ্রামের সবাই প্রতিমা কারিগর

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১, ০৩:০৫ এএম

যে গ্রামের সবাই প্রতিমা কারিগর

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে শরৎ মানেই নীল আকাশে ভেসে চলা সাদা মেঘের ভেলা। কাশবনে সাদা-নীল শাড়িতে আঁচল বিছিয়ে রমণীদের ইতস্তত বিচরণ। শিউলি বনে কমলা রঙের শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে আঁকা গল্প সম্ভার। একই সঙ্গে বাংলায় শরৎ মানে শারদীয় বার্তা নিয়ে আসা দুর্গাপূজা।

ঋতু পরিবর্তনে এখন বইছে শারদহাওয়া। নাগরিক কোলাহল আর যাপিত জীবনের নানা ব্যস্ততার মাঝে চুপিচুপি এসেছে শরৎ। আর প্রকৃতিতে যখন শরৎকাল আসে তখন কাশফুলই জানিয়ে দেয় শরতের আগমনী বার্তা। আবার এই কাশফুলই জানান দেয় দেবী দুর্গার আগমনী খবর। এমন উৎসবের পূজো আসতেই ব্যস্ত হয়ে যায় ঢাকার অদূরে ধামরাইর শিমুলিয়া গ্রামের কুমোর পাড়াও।

বিরামহীম শৈল্পিক একেকটি ছোঁয়ায় প্রস্তুত হতে থাকে মায়ের মূর্তি। বংশ পরম্পরায় এই গ্রামের প্রায় সবাই করেন এই প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রথমে মাটি কিনে এনে বাছাই ও প্রস্তুত করতে হয়। মাটি, খর ও বাঁশ দিয়ে প্রতীমার প্রাথমিক আকৃতি দেওয়ার পর। সেই মাটির সাথে পাঁট বা বাশেঁর গুঁড়ো মিশিয়ে শুরু হয় প্রতিমা তৈরির কাজ।

কেউ কেউ ক্যাটালগ দেখিয়ে প্রতিমার ফরমায়েশ দেন, কেউবা বায়না করেন শিল্পীর মনের কল্পনায় মায়ের প্রতিমা তৈরির। যে তুলির ছোঁয়ায় তৈরি হয় মা দুর্গা, সেই তুলিতেই তৈরি হয় অসুরের প্রতিমাও! 

[youtube-video]https://www.youtube.com/watch?v=eJlRiQLkYNg[/youtube-video]

গ্রামের গোবিন্দ চন্দ্র দাশ ৩৫ বছর ধরে ধরে মূর্তি তৈরির কাজ করেন। এরমধ্যে ১৫ বছর ওস্তাদের সাথে থেকে তালিম নিয়েছেন। এখন তার সাথে কারখানায় তার দুই ছেলেও কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘মানুষের মনকে সন্তুষ্ট করাই শিল্পীর সার্থকতা। কবির কলমে যেমন তৈরি হয় কবিতা, তেমনি শিল্পীর তুলিতে তৈরি হয় মায়ের প্রতীমা।’

সারা বছর এই তিনজন মিলেই করেন প্রতিমা তৈরির কাজ। তবে পূজোর সময় বিশেষ অর্ডার আসার পরে আরও চার জনকে নিয়েছেন এ কাজে। আগের বছর প্রতিমা তৈরির বায়না তেমন না থাকায় সংসার চালাতে অনেকটাই বেগ পেতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘করোনার আগে পূজার বাজেট থাকতো ২২ থেকে ২৫ লাখ। তা এখন নেমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ থেকে ছয় লাখে। আগের বছর মাত্র তিনটি প্রতিমা বানালেও এ বছর একটু অবস্থা ভাল। এ বছর তিনি ৯টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছেন।’   

গত বছর করোনার কারণে বন্ধ ছিল বেশিরভাগ অঞ্চলের পূজা। এটা তাদের গ্রামের প্রতিমা শিল্পীদের জীবন জীবিকায়ও প্রভাব ফেলেছিল। তবু হাল ছাড়েননি তারা। গ্রামের কেউই করেন নি পেশা বদল। বিধি-নিষেধের মাঝে আগের মতো জমকালো না হলেও এ বছর সবগুলো মন্দিরেই পূজো হচ্ছে। তবে কমেছে পূজার বাজেট, এই যা। 

কারিগর প্রদীপ কুমার পাল জানালেন, তিনি প্রতিমা বানান তিন পুরুষ ধরে। আগে এই কারখানা ছিল তার বাবার। এখন হয়েছে তার নিজের। তার তিন মেয়ে। প্রদীপ বলেন, করোনাকালে যে ক্ষতি হয়েছে, এখন যতো কাজই করি সেটি পুষিয়ে উঠা সম্ভব না। সে সময় এই কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় যাবার চিন্তা বহুবার এলেও তা ছাড়তে পারেন নি। এখন অবস্থা একটু ভাল হওয়ায় আবার নতুন করে কাজে ফিরছেন তারা। 

গোবিন্দ ও প্রদীপসহ গ্রামের অন্য প্রতিমা শিল্পীরা আশাবাদ জানালেন, মানুষের মনের অসুরের সাথে এবার দেবী নিঃশ্বেষ করবে করোনা মহামারীকেও।

Link copied!