রেইনট্রিতে ধর্ষণ: আসামিদের যে শাস্তি চায় রাষ্ট্রপক্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

অক্টোবর ১২, ২০২১, ০৩:৪২ পিএম

রেইনট্রিতে ধর্ষণ: আসামিদের যে শাস্তি চায় রাষ্ট্রপক্ষ

দেশের বহুল আলোচিত রাজধানীর বনানীতে রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলায় আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন সাজা চাইছে রাষ্ট্রপক্ষ। অপরদিকে, অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে আদালত বেকসুর খালাস দেবেন বলে মনে করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী।

মঙ্গলবার(১২ অক্টোবর) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারের আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করবেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আফরোজা ফারহানা আহমেদ (অরেঞ্জ) বলেন, ‘এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। মামলাটি যেহেতু ২০২০ সালের সংশোধনের আগে দায়ের করা হয়েছে, সেহেতু সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তে যাবজ্জীবনের বিধান রয়েছে। রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা (যাবজ্জীবন) প্রত্যাশা করছি।’

চাঞ্চল্যকর মামলাটির বিচার আজই শেষ হবে প্রত্যাশা করে  তিনি আরও বলেন, ‘মামলার বিচার আরও আগেই শেষ হয়ে যেত কিন্তু সাক্ষীরা আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচার শেষ হয়নি। আর মাঝে করোনার কারণে আদালত সাধারণ ছুটিতে থাকায় বিচার কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল।

বাদী পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ গণমাধ্যমে বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিয়েছেন। আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি তারা দোষী। আশা করছি আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা (যাবজ্জীবন কারাদণ্ড) হবে।’

অপরদিকে, মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি সত্য নয় দাবি করে আসামি পক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘ধর্ষণের কোনো সিম্পটম পাওয়া যায়নি। মেডিক্যাল রিপোর্টে তাদের বিরুদ্ধে ৯(১) ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। ডাক্তার এসে সাক্ষ্যেও এটা বলে গেছেন। ট্রায়ালের মাধ্যমে আসামিদের নিরাপরাধ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, তারা খালাস ও ন্যায়বিচার পাবেন।’

গত ৩ অক্টোবর মামলাটি যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে রায় ঘোষণার এ দিন ঠিক করেন একই আদালত। মামলার অপর আসামিরা হলেন, সাফাতের তার বন্ধু সাদমান সাকিব ও নাঈম আশরাফ ওরফে এইচএম হালিম এবং সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে অস্ত্রের মুখে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে ৬ মে বনানী থানায় পাঁচ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়।

ওই বছর ৭ জুন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।

মামলায় বলা হয়, আসামিদের মধ্যে সাফাত ও নাঈম ওই নির্যাতিত ছাত্রীদের বন্ধু। গত ২৮ মার্চ ঘটনার দিন ওই দুই ছাত্রী আসামি সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের যান। ওইদিন তাদের রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা আটকে রাখেন। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে আসামি সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ একাধিকবার তাদের ধর্ষণ করেন। শুধু তাই নয়,  ধর্ষণ করার সময় সাফাত গাড়িচালক বিল্লালকে দিয়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। ধর্ষিতরা ভয়ে এবং লোকলজ্জার কারণে এবং মানসিক অসুস্থতা কাটিয়ে উঠে ৬ মে বনানী থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

পরবর্তীতে ওই বছরের ৭ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক ইসমত আরা এমি আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করলে আদালত একই বছরের ১৩ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

Link copied!