রোহিঙ্গাদের আর্থিক সহায়তা কমিয়ে দেবে জাতিসংঘ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩, ১১:৫৯ পিএম

রোহিঙ্গাদের আর্থিক সহায়তা কমিয়ে দেবে জাতিসংঘ

তহবিল ঘাটতির কারণ দেখিয়ে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পরিমাণ কমানোর পরিকল্পনা করছে জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তাকারী সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। আগামী মাস থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাদ্য সহায়তা বাবদ মাথাপিছু বরাদ্দ ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলার করা হবে।

শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় আগামী ১ মার্চ থেকে মাসিক সহায়তার পরিমাণ ১৭ শতাংশ কমিয়ে জনপ্রতি ১০ ডলার করা হবে। একই সঙ্গে তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকলে এপ্রিল থেকে সহায়তার পরিমাণ আরও কমতে পারে। মহামারী এবং বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির কারণে দাতারা বাজেট কমিয়ে দেওয়ায় তারা এ পদক্ষেপ নিচ্ছে।  

আন্তর্জাতিক দাতা গোষ্ঠীর কাছে সাড়ে ১২ কোটি ডলারের জরুরি তহবিল চেয়ে ডব্লিউএফপি বলেছে, ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দাদের এক তৃতীয়াংশই শিশু, পুষ্টির অভাবে যাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, বেশিরভাগেরই ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম। এই অবস্থায় তাদের খাদ্যের জন্য জরুরি তহবিল না পেলে তার প্রভাব হবে ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী।   

ডব্লিউএফপির এমন সিদ্ধান্তে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক মিখাইল ফাখরি এবং মিয়ানমারের মানবিক পরিস্থিতি বিষয়ক প্রতিবেদক টম অ্যান্ড্রু বলছেন, সহায়তা কমিয়ে দেওয়া হলে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা এসব রোহিঙ্গাদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। যা তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে। কারণ, শরণার্থীরা পুরোপুরি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। তাদের সহায়তার তহবিলে ঘাটতি হলে তার ফল হবে বিপর্যয়কর। রোজার মাসের আগে এভাবে রোহিঙ্গা মুসলমানদের রেশন কমিয়ে দেওয়ার ঘোষণা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলে জানান তারা।

ডব্লিউএফপির এশিয়া ও প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক জনি আইলিয়েফ বলেন, যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এই জনগোষ্ঠীকে যেতে হয়েছে, যেখানে খুব বেশি সুযোগও তাদের সামনে নেই, সেখানে এভাবে তাদের রেশন কমিয়ে দেওয়া আমার কাছে অচিন্ত্যনীয়।

এদিকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, সহায়তা কমিয়ে দেওয়া হলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই শরণার্থী শিবিরে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে সঙ্কট এবং পুষ্টিহীনতা আরও বাড়বে।

আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের বাংলাদেশ পরিচালক ওন্নো ভান মানেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, আন্তর্জাতিক দাতারা যদি ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শিশু এবং তাদের পরিবারের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তা হবে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা এই জনগোষ্ঠীর প্রতি প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ। 

কক্সবাজারে বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলছেন, এই পর্যায়ে এসে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হলে শরণার্থীরা কাজের খোঁজে আরও মরিয়া হয়ে উঠবে। তাতে তাদের ক্যাম্পের মধ্যে রাখা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে কক্সবাজার, টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে বসবাস করছেন ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা।

 

Link copied!