৮ বছর পর আইনের আওতায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা

সুইটি আক্তার

মে ৫, ২০২১, ০৬:৪১ এএম

৮ বছর পর আইনের আওতায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা

আট বছর পর হেফাজতের সেই সব নেতাকর্মীকে আইনের আওতায় আনছে পুলিশ। ইতোমধ্যে হেফাজতের অর্ধশত নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে  সংগঠনটির ৩০ জন কেন্দ্রীয় নেতাও রয়েছে। তাদের অনেকেই এখন ওইসব মামলায় রিমান্ডে আছেন।

২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরসহ বায়তুল মোকরাম ও পল্টন এলাকায় বেপরোয়া তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলাম। ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের নামে অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছিল তারা। ওই দিন রাজধানীজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা হয়। পরদিনও দেশের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চলে।

সেসময়  আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজধানীতে হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৫৩টি মামলা দায়ের করে। আসামি করা হয় হেফাজতের শীর্ষ স্থানীয় নেতাসহ কয়েক হাজার কর্মীকে। ৪টি মামলায় তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছিল। বাকি ৪৯টি মামলার মধ্যে ১৭টি মামলা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এবং ৩২টি মামলা পল্টন ও মতিঝিল থানা পুলিশের কাছে তদন্তাধীন রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ার কারণে পুরানো মামলাগুলো আবারও সচল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সেসময়ের করা মামলার এজাহারে নাম ছিল বিএনপি-জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতারও। তবে হেফাজতের তৎকালীন আমির শাহ আহমদ শফীকে কোনো মামলাতেই আসামি করা হয়নি। হেফাজত ছাড়াও ইসলামী ঐক্যজোট, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, নেজামে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়। সে সময় অল্প কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হলেও পরবর্তীতে তারা ছাড়া পেয়ে যায়।

সর্বশেষ গত ২৬ মার্চ ও পরবর্তী সময়ে যে নাশকতা হয়েছে সেই সব ঘটনায় আরও ১২টি মামলা হয়েছে। ২০১৩ সালের মামলার সঙ্গে বর্তমান সময়ের মামলায়ও পুলিশ হেফাজত নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মাহবুব আলম গণমাধ্যমকে বলেন,  চলতি রমজানেই দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি তৈরির নীলনকশায় মেতেছিল হেফাজতের নেতারা। রমজান মাসে বদরের যুদ্ধ হয়েছিল। আরেকটি বদর যুদ্ধের ডাক দিয়েছিল হেফাজত। ২৬ মার্চে শুরু হওয়া সহিংসতা রমজান পর্যন্ত টেনে আনার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এসব তথ্য গ্রেফতারকৃত নেতারা স্বীকার করেছেন।

এতদিনেও কেন একটি মামলারও চার্জশিট দেওয়া যায়নি? জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মাহবুব আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অনেকগুলো মামলায় তদন্তকাজ গুছিয়ে এনেছি। হেফাজতের অনেক নেতা এখন ওই সময়ের মামলায় রিমান্ডে আছেন। সবকিছু মিলিয়ে চার্জশিট দিতে একটু সময় লাগবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ বিষয়ে গনমাধ্যমকে বলেন, ‘হেফাজতের মধ্যে যারা সহিংসতায় জড়িয়েছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তাদের আর কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের সঙ্গে সমঝোতারও কিছু নেই।’

২০১৩ সালের ৫ মে’র তাণ্ডবের পরও তারা নির্বিঘ্নে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। হেফাজতের সাবেক আমির আহমদ শাফির সাথে সরকারের সখ্যতার কারণে সরকার তেমন কঠোর অবস্থান নেয়নি বলে ধারণা করা যায়। আহমদ শফীর মৃত্যুর পর গতবছর বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসারণ সংক্রান্ত বিতর্কের জেরে সরকারের সাথে হেফাজত নেতাদের সম্পর্কে চির ধরে। সবশেষ স্বাধীণতার সুবর্ণজয়ন্তি অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতার পর সরকার হেফাজতবিরোধী কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কমিটিও ভেঙে দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হেফাজত বর্তমানে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। আগে দুই দফা মিটিংয়ের পরও মঙ্গলবার (৪ মে) রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সমঝোতা জন্য বৈঠক করেছেন হেফাজতের শীর্ষ নেতারা। তবে সরকার আগের মতো হেফাজত নেতাদের আর পাত্তা দিচ্ছে না।

 

Link copied!