“দেশের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না”

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ২৩, ২০২৩, ০৭:১৭ পিএম

“দেশের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না”

ছবি: সংগৃহীত

“বাঙালি জাতিকে আমি আহ্বান জানাই, জাতির ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে।” এমনটাই মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, নেত্রকোণা, বরগুনা ও রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে এই সভার আয়োজন করা হয়।

আওয়ামী লীগের জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদেশে বসে নির্দেশ দিয়ে মানুষ পোড়াচ্ছে খালেদা জিয়ার ছেলে’। এ সময় শেখ হাসিনা আরও বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় আওয়ামী লীগ।

তিনি বলেন, ‘এই দেশ আমাদের, আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। কাজেই জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে বিশ্বে এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।’

এর আগে গত বুধবার সিলেটে হযরত শাহজালাল ও শাহপরাণের মাজার জিয়ারত করে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। মাজার জিয়ারত শেষে স্থানীয় আলিয়া মাদরাসা মাঠে জনসভা করেন শেখ হাসিনা।

২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি আমরা গড়ে তুলব। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই এ দেশে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। আর যারা নির্বাচনের ধোয়া তুলে আমাদের প্রতিদিন ক্ষমতা থেকে হটায়, তারা কখনো অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না। কারণ, তাদের প্রতিষ্ঠাই হয়েছে একজন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাত দিয়ে এবং ভোট চুরি করা ছাড়া কোনো দিন ক্ষমতায় আসে নাই।

তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট ৩০০ আসনে মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছিল।’

তিনি বলেন, তার পর থেকে তারা নির্বাচন বয়কট আর নির্বাচন নিয়ে খেলা, অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যা, মানুষের জীবন নিয়ে খেলা এই ধ্বংসযজ্ঞেই মেতে আছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের সেই অমোঘ উচ্চারণ ‘বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’ স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশি অর্থায়ন বন্ধের পর আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের যে ঘোষণা দিয়েছিলাম, আজকে তা করে দেখিয়েছি। আবারও প্রমাণ করেছি, বাঙালি ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ তাকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’

পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম উল্লেখ না করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সামান্য একটি ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে পারবে না বয়সের কারণে, সেটা বলার জন্য বিশ্বব্যাংক তাঁর পক্ষে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল। এরপরই আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করব।’

‘পদ্মা নদী রেলে করে পাড়ি দেওয়া, আজকে দিনকে সেই স্বপ্নপূরণের দিন হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী চলমান বিশ্বমন্দার প্রেক্ষাপটে দেশের সব অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোয় আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। এ লক্ষ্যে তাঁর সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং এরই মধ্যে ৮ লাখ ৪০ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীনকে ভূমি ও গৃহ দিয়েছে। সব জেলা-উপজেলায় মডেল মসজিদ করে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য দেশকে আরও উন্নত করা। ছাত্রছাত্রীদের বিনা মূল্যে বই দিচ্ছি। আড়াই কোটি শিক্ষার্থী বৃত্তি, উপবৃত্তি পাচ্ছে। যাতে দেশটা এগিয়ে যায়। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, এখন আমাদের লক্ষ্য, স্মার্ট বাংলাদেশ। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। ল্যাব করে দিয়ে কম্পিউটার শিক্ষা দিচ্ছি। লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং কর্মসূচির মাধ্যমে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সারকে প্রশিক্ষিত করেছি। ব্রডব্যান্ড–সুবিধা প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়ায় তারা বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘরে বসে দেশ–বিদেশের কাজ করে অর্থ উপার্জন করছে।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী রেলওয়ে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ব্যাপক পরিকল্পনা ও কার্যক্রম গ্রহণের বিস্তারিত তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের এই প্রকল্প, যেটা ভাঙ্গা পর্যন্ত এখন করেছি, সেটা ভাঙ্গা থেকে যশোরে সংযোগ হবে। আর যশোর থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত সংযুক্ত হবে। এমনকি বরিশাল, পটুয়াখালী থেকে পায়রা পর্যন্ত এই রেললইনকে যুক্ত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।’ 

ট্রান্স–এশিয়ান রেলওয়ের সাথে বাংলাদেশকে সংযুক্ত করাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৯টি জেলা-ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও যশোরকে সংযুক্ত করবে। প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা অংশ সমাপ্তির মধ্য দিয়ে নতুন তিন জেলা-মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় এল।

রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য (মুন্সিগঞ্জ-২) সাগুফতা ইয়াসমিন, সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন সংশ্লিস্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর।

অনুষ্ঠানে ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল যোগাযোগের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। এ সময় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান, প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!