ফাইল ফটো
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন, ঠিক সেই সময়ের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এক দিনও পিছিয়ে যাবে না—এ কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
শনিবার দুপুরে কুমিল্লার কোটবাড়ীতে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) ময়নামতি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘টেডএক্স কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি’র দ্বিতীয় আয়োজন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শফিকুল আলম বলেন, “নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। অধ্যাপক ইউনূস যে সময়ের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা বলেছেন, সেই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন হবে। এক দিনও পেছাবে না। শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সেরা একটি নির্বাচন উপহার দেবে এই সরকার। সব প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হবে যাতে কেউ বৈষম্যের অভিযোগ করতে না পারেন।”
প্রেস সচিব জানান, নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে।
আসনভিত্তিক অনুপাত (PR) পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে শফিকুল বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা চলছে। অনেক দেশে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তিন-চার বছর লেগে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রজ্ঞার কারণে ইতোমধ্যে আটটি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। সাতটি বিষয়ে আলোচনা চলছে এবং তিনটি বিষয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিটি বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে।”
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সরকার আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে কঠোরভাবে কাজ করছে। প্রতিটি ঘটনার পর আমরা দেখছি ভালো অগ্রগতি হচ্ছে। কেউ বলতে পারবেন না, এমন কোনো অপরাধ ঘটেছে যার বিচার হয়নি। বিশেষ করে ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর ঘটনায় দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা হচ্ছে।”
গোপালগঞ্জকে আলাদা করার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, “গোপালগঞ্জের মানুষও বাংলাদেশের মানুষ। এই সরকার কাউকে বৈষম্য করে না। গোপালগঞ্জকে আলাদা করার কোনো সিদ্ধান্ত সরকারের নেই।”
৫ আগস্ট “জুলাই সনদ” ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, “এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না ওই দিন ঘোষণা হবে কি না, তবে আমরা চেষ্টা করছি। অন্যান্য দেশে এমন রাজনৈতিক সমঝোতা অনেক সময় লাগে, কিন্তু আমাদের দেশে প্রতিদিনই রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে বৈঠক করছে। যেসব বিষয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি, সেগুলো নিয়েও কাজ চলছে। আমরা আশাবাদী, সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়েই জুলাই সনদ ঘোষণা সম্ভব হবে।”
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, টেডএক্স হলো টেডের অনুমোদিত একটি প্ল্যাটফর্ম, যার মূলমন্ত্র ‘আইডিয়াস চেঞ্জ এভরিথিং’। টেড একটি মার্কিন অলাভজনক সংস্থা, যা বিশ্বজুড়ে কনফারেন্স আয়োজন করে যেখানে বক্তারা ১৮ মিনিটে তাঁদের উদ্ভাবনী ভাবনা, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের ধারণা তুলে ধরেন।
এবারের টেডএক্স কুমিল্লা ইউনিভার্সিটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘দ্য নেক্সট ওয়েভ’, যার মূল ভাবনা ছিল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও দিকনির্দেশনা নিয়ে চিন্তাভাবনা। অনুষ্ঠানে সমাজ, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সাংবাদিকতা, সংগীত ও উদ্যোক্তাসহ নানা খাতের ১১ জন বক্তা তাঁদের অনুপ্রেরণামূলক গল্প শোনান।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা ইউনিভার্সিটিতে প্রথমবারের মতো টেডএক্স ইভেন্ট আয়োজন করা হয়েছিল। ওই বছরের ১৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়টি এই আয়োজনের জন্য টেড-এর আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পায়।