কিছুদিন ধরেই চিত্রনায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক প্রযোজকের কিছু অভিযোগ নিয়ে চলচ্চিত্রপাড়ায় চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। শাকিব খানের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, মিথ্যা আশ্বাস ও ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ এনেছেন রহমত উল্লাহ নামের ওই প্রযোজক। এবার গণমাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছেন তিনি। ২৬ পৃষ্ঠার সেই পিডিএফ ফাইলে দেখা যায়, বর্বর এক ধর্ষণের বর্ণনা।
পুলিশের নথিতে দেখা যায় মামলার বাদী ধর্ষণের শিকার হওয়া ওই নারী এবং মামলার স্বাক্ষী প্রযোজক রহমত উল্লাহ। অস্ট্রেলিয়া পুলিশের ওই রিপোর্টে প্রযোজক রহমত উল্লাহকে ভুক্তভোগীর ‘আংকেল’নামে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার নাম ম্যাথিউ জন ক্রুকসন। নথিটির সত্যতা অস্ট্রেলীয় পুলিশের মারফত নিশ্চিত করা যায়নি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ওই রিপোর্ট থেকে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের সেন্ট জর্জ পুলিশ স্টেশনে মামলাটি করা হয়েছে। রিপোর্টে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত শাকিব খান ওরফে রানা। ক্যারিয়ারের প্রথমবার অস্ট্রেলিয়া গিয়েই এমন ধর্ষণকাণ্ড ঘটিয়েছেন ঢাকাই সিনেমার এই নায়ক।
ওই রিপোর্টে আরও দেখা যায়, ২০১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে নভোটেল দ্য গ্র্যান্ড প্যারেড অ্যাপার্টমেন্ট ৭২১ ব্রাইটন লা স্যান্ডস হোটেল কক্ষে রাত ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত, দুই ঘণ্টা ধর্ষণ করেন শাকিব খান। সে সময় ওই নারীর উপর পাশবিক নির্যাতন চালান ঢালিউডের এই নায়ক।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ওই রিপোর্টে আরও দেখা যায়, শাকিব খান রানা একজন বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অভিনেতা। ভুক্তভোগী তার আঙ্কেল রহমত উল্লাহ’র ফিল্ম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে প্রডিউসার হিসেবে কাজ করেন। অস্ট্রেলিয়ায় শাকিব খানের সাথে ভুক্তভোগি নারীর প্রথম দেখা হয় ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট। এরপর থেকে সেখানে শাকিব খানের নিয়মিত ট্রান্সপোর্ট, হোটেল, খাওয়া-দাওয়া ও যাবতীয় বিষয়াদি দেখাশোনা করেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়া পুলিশ রিপোর্টের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে শাকিব খানের কাছ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।
প্রসঙ্গত, শাকিব সব অভিযোগ অস্বীকার করে রহমত উল্লাহকে ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার প্রযোজক নয় বলে দাবি করেছেন গণমাধ্যমে। এ ধারাবাহিকতায় শনিবার (১৮ মার্চ) রাতে রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা করতে যান তিনি। পুলিশ মামলা না নিয়ে তাকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তবে অপারেশন অগ্নিপথ সিনেমার মহরতে শাকিব ও রহমত দুজনকেই দেখা গেছে।
একই অভিযোগে গতকাল রবিবার (১৯ মার্চ) দুপুরে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে যান শাকিব। সেখানে ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন বলে জানা যায়।
এর আগে, গত ১৫ মার্চ বিকেলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী সমিতি ও ক্যামেরাম্যান সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন প্রয়োজক রহমত উল্যাহ।
নির্মিতব্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ (২০১৭) সিনেমায় অসদাচরণ, মিথ্যা আশ্বাস, ধর্ষণ (এনএসডাব্লিউ পুলিশ রেফারেন্স নং: ই ৬২৪৯৪৯৫৯) এবং পেশাগত অবহেলার মাধ্যমে চলচ্চিত্রটির ক্ষতিসাধন চলচ্চিত্রের শুটিং সম্পন্ন করতে অথবা লগ্নিকৃত অর্থ ফিরিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় নিরুপায় হয়ে অভিযোগ করেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন তিনি।
এতে তিনি তার অভিযোগের সবিস্তার উল্লেখ করেছেন। সেখানে শাকিবের কোন রকমের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শুটিং বাতিল করে দেওয়া, ব্যয়বহুল ও বিরল খাবারের আব্দার, শুটিং টাইমে না আসা, শ্যুটিং ফাঁসিয়ে দেওয়া, তার ব্যয়বহুল যৌনাচার মেটানো, নিয়মিত ব্যয়বহুল পতিতালয়ে নিয়ে যাওয়া, এবং নারী সহ-প্রযোজককেও কৌশলে ধর্ষণ করার কথা উল্লেখ করেছেন। সেই ধর্ষণের ভুক্তভোগী ওই নারীকে তিনি অত্যন্ত পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করেছেন। গুরুতর জখমসহ রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। নির্যাতিতা তখন ওই ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। (এনএসডাব্লিউ পুলিশ রেফারেন্স নং: ই ৬২৪৯৪৯৫৯) নির্যাতিতা নিজেও একজন বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত নারী। পরে শাকিব খান ঘটনার পরপরই কাউকে কিছু না জানিয়ে অস্ট্রেলিয়া ছাড়েন।
প্রযোজক রহমত উল্লাহ তার অভিযোগে আরও লিখেছেন, ওই ঘটনার পর থেকে শাকিবের সাথে বিভিন্ন সময় যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। পরে ২০১৮ সালে তিনি আবার অস্ট্রেলিয়ায় গেলে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। সামাজিক চাপে এবং আরও নিগ্রহের ভয়ে নির্যাতিতা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় শাকিব সেই যাত্রায় ছাড়া পেয়ে যান।
অভিযোগকারী প্রযোজক বলেন, ধর্ষণের মতো জঘন্য অন্যায় তিনি করেছেন। আমার কাছে শাকিব সম্পর্কে অনেক দালিলিক প্রমাণ আছে। শাকিব খান আমার অনেক আর্থিক ক্ষতি করেছেন। সে যদি ক্ষতিপূরণ না দেয় তবে পর্যায়ক্রমে আমি তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
প্রসঙ্গত, আশিকুর রহমান পরিচালিত ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমাটি ২০১৭ সালে শুটিং শুরু হলেও আজও শেষ হয়নি এর কাজ। কারণ হিসেবে শাকিব খানের অসহযোগিতাকে দায়ী করেছেন সিনেমাটির প্রযোজক।