তামিম ও রিয়াদ প্রসঙ্গে যা বললেন হাবিবুল বাশার সুমন

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগস্ট ১৯, ২০২৩, ১০:০৩ পিএম

তামিম ও রিয়াদ প্রসঙ্গে যা বললেন হাবিবুল বাশার সুমন

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

এশিয়া কাপের বাইরে জাতীয় দলের পুলে থাকা অন্য ক্রিকেটারদের মধ্য থেকে ৮-১০জনকে নিয়ে বিশেষ ক্যাম্প করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। একাধিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, এই বিশেষ ক্যাম্পে ডাক পাচ্ছেন তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

শনিবার(১৯ আগস্ট) বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মুখোমুখি হয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দেন বর্তমানে টাইগারদের নির্বাচক প্যানেলের অন্যতম এই সদস্য।

নিউ জিল্যান্ড সিরিজের দল
আমাদের এশিয়ান গেমসের দলটা হয়ে যাবে। যারা এশিয়ান গেমসের দলে যারা, তারা এশিয়ান গেমসেই থাকবে। তারা আসলে নিউ জিল্যান্ড সিরিজটা খেলার সম্ভাবনা কম। কারণ এশিয়ান গেমস দলটাও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশের হয়ে খেলা। সেটাকে আমরা সেভাবেই গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের ক্রিকেটারদের গ্রুপটা যদি দেখেন, একটা নির্দিষ্ট গ্রুপের ক্রিকেটাররাই কিন্তু সব জায়গায় খেলছে না। আমাদের যে পুলটা আছে, তাদের মধ্য থেকেই হচ্ছে। এভাবেই আসলে করা হবে। এশিয়ান গেমসের দলটা একবার হয়ে গেলে আমরা আর চেঞ্জ করব না।

এশিয়ান গেমসের দল
এশিয়ান গেমসের জন্য নিয়ম অনুযায়ী একটা লম্বা গ্রুপ দিতে হয়েছিল, ২-৩ মাস আগেই। বড় ৩০ জনের একটা গ্রুপ পাঠানো হয়েছিল নিয়ম অনুযায়ী। আমরা সবশেষ যে এসএ গেমস খেলেছি, সেখানে এইচপির মতো প্রক্রিয়া ছিল। যেখানে ৪ জন ওভারএজ প্লেয়ার খেলতে পারবে। বাকিরা অনূর্ধ্ব-২৩। তো সেটা মাথায় রেখেই আমরা ৩০ জনের দলটা করেছিলাম। তবে এখন আর বয়সের বাধাটা নেই, উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা সেখানেই থাকার চেষ্টা করছি। তুলনামূলক তরুণ ক্রিকেটার নিয়েই দল করার চেষ্টা করেছি। ইমার্জিং দলেও আপনারা দেখেছেন, হয়তো কিছু ক্রিকেটার ছিল অভিজ্ঞ। তবে তাদের কারোরই বয়স খুব বেশি নয়, ২-১ জন ছাড়া। এশিয়ান গেমসও আমরা সেভাবে করার চেষ্টা করেছি। একইভাবে আমাদের যারা খেলে আসছে, আমাদের ভবিষ্যত, বর্তমানে ভালো করছে- এমন ক্রিকেটারদের নিয়েই দলটা গড়া হয়েছে। কারণ মাথায় তো একটা বিষয় ছিলোই যে এশিয়ান গেমসে ভালো করতে চাই। এর আগে আমরা গোল্ড জিতেছিলাম। সেটার পুনরাবৃত্তি করতে পারলে খুব ভালো লাগবে।

দল গড়ায় পদকে চোখ রাখা নাকি ব্যাকআপদের সুযোগ দেওয়া

দুটোই। আমি বলব, দুটোই ছিল আমাদের ভাবনায়। কারণ টি-টোয়েন্টিতে দেখেন, আমরা সবশেষ বিশ্বকাপ থেকেই আমরা কিন্তু একটা ভিন্ন রূপ দেওয়ার চেষ্টা করি। আমরা যদি সবশেষ বিশ্বকাপের দিকে তাকাই, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছি। পরের বিশ্বকাপের জন্য টি-টোয়েন্টি দলটা তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি টি-টোয়েন্টিতে আমাদের ফর্ম কিন্তু বেশ ভালো। গত ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে আমরা কিছু ফল পাওয়া শুরু করেছি। শুধু ভবিষ্যতের ব্যাপার নয়। আমরা যাদের নিয়েছি, তারা কিন্তু বর্তমানেও ভালো খেলছে।

এশিয়ান গেমসের অধিনায়ক

 অধিনায়ক ঠিক করার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় নিতে হয়েছে। কারণ এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হচ্ছে। একবার পরিবর্তন করতে হয়েছে। কারণ এশিয়া কাপের দলটা দেওয়ার আগে আমরা এশিয়ান গেমসের দল ঠিক করতে পারছিলাম না। এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপের তো একটা অগ্রাধিকার তো থাকবেই। সেজন্য আমাদের দলটা পরিবর্তন করতে হয়েছে। সবশেষ ইমার্জিংয়ে সাইফ হাসান অধিনায়ক ছিলেন। এখনও আমরা (এশিয়ান গেমসের অধিনায়ক) ঠিক করিনি। তবে তার সম্ভাবনা বেশি। সাইফ হাসান ছাড়াও আরও কয়েকজন ক্রিকেটার আছে, যাদেরকে অধিনায়কত্ব দেওয়া যেতে পারে। সেটা আমরা ঠিক করিনি।

তামিমের অভিজ্ঞতা দরকার, মাহমুদউল্লাহও তো অভিজ্ঞ এই প্রশ্নটা এর আগেও ক্লিয়ার করা হয়েছে। এখন এশিয়া কাপের দল নিয়ে ভাবাই ভালো।

তামিমের ব্যাপারে নতুন আপডেট

অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর পিঠের ইনজুরির কারণে এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে পড়লেও ফেরার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তামিম ইকবাল। ধীরে ধীরে তার উন্নতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। বিশ্বকাপের মতো ইভেন্টে তামিমের অভিজ্ঞতা ভীষণ প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তামিম কঠোর পরিশ্রম করছে। অনেক চেষ্টা করছে ফিরে আসার জন্য। আমার মনে হয় সময়ের আগেই ফিরে আসবে। নিউ জিল্যান্ড সিরিজেই তাকে ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী। কারণ বিশ্বকাপের জন্য তামিমকে আমাদের ভীষণ দরকার। তামিমের অভিজ্ঞতাটা, তামিমের পারফরম্যান্সটা আমাদের ভালো করার জন্য অনেক দরকার। তামিম যেভাবে পরিশ্রম করছে, নিজেকে সময় দিচ্ছেন, আমার মনে হয় তিনি সময়ের আগেই ফিরে আসতে পারবেন।

তামিম আজ ব্যাটিং করছে কি না

 আমার সঙ্গে আজকে তামিমের দেখা হয়নি। আমি পরে যাবো। শুরু করুক। আমাদের হাতে সময় আছে। বিশ্বকাপ অক্টোবরে। তার আগে অনেক সময় পাচ্ছেন। আমি আশাবাদী, নিউ জিল্যান্ড সিরিজের আগে ঠিক হয়ে যাবে। হয়তো কিছুটা নিগেলস থাকবে। সেটা তামিম জানেন। সেই ব্যাপারে নিজেই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তবে সুস্থ তামিমকে আমাদের ভীষণ দরকার। তার পারফরম্যান্স খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে বিশ্বকাপে আমাদের ভালো করার জন্য।

এশিয়া কাপে ওপেনিং কনসার্ন

আমার মনে হয় না কনসার্ন হওয়ার কিছু আছে। আমাদের লক্ষ্য একদম পরিষ্কার। আমরা যে ক্রিকেটটা খেলার চেষ্টা করছি। যদি দেখেন, আমাদের খেলার ধরনটা কিন্তু বদলেছে। আমরা যে ফিয়ারলেস ক্রিকেট খেলার কথাটা বলছিলাম, সেটা কিন্তু আমরা গত ২-৩ সিরিজ ধরে খেলছি। আমাদের পারফরম্যান্সে দেখতে পারবেন। ফিয়ারলেস ক্রিকেট খেলতে গেলে কিন্তু ক্রিকেটারদের ব্যাক করতেই হবে। কারণ এই ধরনের ক্রিকেটের যে মূল মন্ত্র যে, আপনি আপনার ইতিবাচক ক্রিকেটটা খেলবেন। এতে করে যদি ১-২ ম্যাচ রান নাও করেন, আপনাকে আপনার দল ব্যাক করবে। সেই আত্মবিশ্বাস দেওয়াটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ।

লিটন দাস ক্লাস ক্রিকেটার। বড় মাপের ক্রিকেটার। আমি চাইব যে, এই অফ ফর্মটা, আমি নিশ্চিত ও সময়মতো কাটিয়ে উঠবে। অনেক সময় হয় না, অনেক ভালো ফর্মে থাকতে থাকতে... ক্রিকেটারদের তো ব্যাড প্যাচ আসে।আমি মনে করি ওর এখন ব্যাড প্যাচ চলছে। সামনে ঠিক হয়ে যাবে। আর যারা আছে, নাঈম শেখ পুরোনো ক্রিকেটার। আগেও খেলেছেন। হয়তো ফিরে এসেছেন অনেক দিন পরে। যখন একজন ক্রিকেটার অনেক দিন পর ফিরে আসে, তাকে একটু সময় দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের স্কিল নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সবাই স্কিলফুল প্লেয়ার। বড় মঞ্চে তাদের ভালো খেলার সম্ভাবনা বেশি, আমি বিশ্বাস করি।

 তামিম-রিয়াদদের নিয়ে আলাদা ক্যাম্প

দেখুন আমাদের একটা দল তো যাচ্ছেই। আমাদের বিশ্বকাপের এখনও দুই মাস সময় আছে। এই সময়ে অনেকের ইনজুরির কনসার্ন হতে পারে। সব কিছু মাথায় রেখেই আমাদের পুলটা... ৩০-৩২ জনের একটা পুল তো আছেই, সবাই যেন অনুশীলনে থাকে, যখন যাকে দরকার হয়, যদি কেউ দুর্ভাগ্যবশত ইনজুরিতে পড়ে, যেটা খেলারই অংশ। তাহলে যেন সবাইকে সুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়। যেহেতু আমাদের এখন কোনো ঘরোয়া ক্রিকেট নেই, কেউ ক্রিকেট খেলছেন না। এই সময় সবাইকে অনুশীলনে রাখাটা গুরুত্বপুর্ণ। সেটাই আসলে চেষ্টা করা হচ্ছে। যেহেতু সময় আছে, ২-১ দিনের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে।

কে কে থাকবে, কোন ৮ জন থাকবে তা এখনও আমরা ঠিক করিনি। তবে ৩২ জনের পুল আমরা আগেই করেছিলাম। মোস্ট লাইকলি তাদের বাইরে থেকে কেউ থাকবেন নাকি সেখান থেকেই থাকবে সেটা হয়তো ঠিক করা হবে।

এশিয়া কাপ নিয়ে প্রত্যাশা

সাবেক অধিনায়ক হিসেবে বলব, এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন হয়। এখানে সেরা ক্রিকেটটাই খেলতে হবে। বাকি যে দলগুলো আছে, সবাই কিন্তু সময়ের সঙ্গে অনেক এগিয়েছে। গত ৪-৫ বছরের চেয়ে আফগানিস্তান অনেক এগিয়েছে, শ্রীলঙ্কাও গুছিয়ে নিয়েছে। ভারত, পাকিস্তান অনেক শক্তিশালী। বাকি দলগুলা কিন্তু খুব ভালো। আমাদের সেরা ক্রিকেটটাই খেলতে হবে, যদি ভালো করতে হয়। গত ১ বছরের পারফরম্যান্স যদি দেখেন, তাহলে তো আমরা আশাবাদী হতেই পারি। তবে সেই পারফরম্যান্সের রিপিট করাটা খুব জরুরি। কারণ বড় টুর্নামেন্টে সেরা ক্রিকেটটাই খেলতে হবে। আমার মনে হয়, দল হিসেবে আমরা প্রস্তুত আছি। দল হিসেবে আমরা ভালো করছি। গত ১ বছর ধরে আমরা আমাদের খেলার ধরন সম্পর্কে পরিষ্কার, কী ধরনের খেলা খেলতে চাই, সেটা এখন আমরা পরিষ্কার। যদি টুর্নামেন্টে আমরা রিপিট করতে পারি, তাহলে অবশ্যই এশিয়া কাপে ভালো করা সম্ভব। তবে এটি অবশ্যই অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এই ধরনের টুর্নামেন্ট সবসময়ই চ্যালেঞ্জ হয়। এশিয়া কাপে বাংলাদেশ আগেও ফাইনাল খেলেছে। তখন আমরা জিততে পারিনি। আশা করছি, যদি এরকম পরিস্থিতিতে যেতে পারি, এবার হয়তো মিস করব না।

Link copied!