ঢাকা ওয়াসা : আবারও বাড়ছে পানির দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ২৩, ২০২১, ০৮:১৬ পিএম

ঢাকা ওয়াসা : আবারও বাড়ছে পানির দাম

প্রতিবছরের ন্যায় আবারও পানির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। যার ফলে একযুগে ১৪ বার বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে পানির দাম।  বর্তমানে প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির দাম ১৪.৪৬ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৫.১৮ টাকা করার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। যা চলতি জুলাই মাস থেকে কার্যকর হবে।  ২০০৯ সালে প্রতি ইউনিটের দাম ছিল ৫.৭৫ টাকা। আর বাণিজ্যিকভাবে ৪০.৬৫ টাকার বিপরীতে ৪২ টাকা ইউনিট প্রতি দাম নির্ধারণ করা হয়।

পানির দাম বৃদ্ধির কারণ

ওয়াসার আইন অনুযায়ী, ওয়াসার বোর্ড প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বাড়াতে পারে। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমোদন নিয়ে এবার পানির দাম ২৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গত বছরের জুলাই মাসে পানির দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন ইউনিটপ্রতি ৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছিল। 

বিভিন্ন প্রকল্পে দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধের জন্য পানির দাম বাড়ানো ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই বলে ওয়াসার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দ্য রিপোর্টকে বলেন। যার ফলে চলতি দুই বছরের মধ্যে ৪ বার দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। 

ওয়াসার সেবায় কতটুকু সন্তুষ্ট গ্রাহক?

ঢাকা ওয়াসার সেবায় গ্রাহকদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি অসন্তুষ্ট। ২০১৯ সালের এপ্রিলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করেছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

টিআইবি গবেষণায় আরও বলা হয়, ওয়াসার পানির নিম্নমানের কারণে ৯৩ শতাংশ গ্রাহক বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি পানের উপযোগী করে। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে বা সেদ্ধ করে পান করে। অন্যদিকে সাধারণ নাগরিকেরা বিভিন্ন সময়ে ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ, ময়লা থাকার অভিযোগ করে আসছে। ওয়াসার পানির মান কেমন এবং তা পানের উপযোগী কি না, তা দেখাতে গত বছরের ২৩ এপ্রিলে কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের সামনে পরিবার নিয়েই দাঁড়িয়ে ছিলেন জুরাইন নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়ক মিজানুর রহমান। তাঁর ইচ্ছা ছিল ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানকে ওয়াসার পানি দিয়ে বানানো এক গ্লাস শরবত খাওয়ানোর। সেদিন তাঁর আহ্বানে সাড়া দেননি এমডি।

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেন, ওয়াসার পানি ড্রিংকেবল হলেও ড্রিংকিং না। এটা খাওয়ার উপযোগী হবে যদি ফুটিয়ে খাওয়া হয়। বর্তমানে রাজধানীতে কোথাও পানির সংকট নেই। তাই পানির সরবারহ ও মান নিয়ে প্রশ্ন থাকা উচিৎ নয়।

তবে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, একদিকে ভালো মানের পানি দেওয়া হচ্ছে না, অন্যদিকে ঢাকা ওয়াসায় অনিয়ম–দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনা দিন দিন বাড়ছে। এগুলো দূর করলে অস্বাভাবিক হারে পানির দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না।

ঢাকায় পানির চাহিদা কেমন?

ঢাকা ওয়াসা ২৪ ঘণ্টায় ২৬৪ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করে এবং এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি বলে দাবি করেছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান।

বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার তিনটি পানি শোধনাগার এবং ৯৩০টি গভীর নলকূপ রয়েছে। তবে গভীর নলকূপ চালু রয়েছে ৮৭০টি। বর্তমানে ওয়াসার পানি উৎপাদনক্ষমতা ২৬০ কোটি লিটার। আর চাহিদা রয়েছে ২৩৫ কোটি থেকে ২৪০ কোটি লিটার। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হলেও রাজধানীর ৩ লাখ ৭৫ হাজার গ্রাহকের মধ্যে বেশির ভাগই পানির মান নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। কারণ, দাম বাড়লেও সে তুলনায় পানির মান ভালো হচ্ছে না।

Link copied!