মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই হবে আসন্ন বাজেটের প্রধান চ্যালেঞ্জ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ৬, ২০২২, ০৩:১৮ পিএম

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই হবে আসন্ন বাজেটের প্রধান চ্যালেঞ্জ

আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই হবে প্রধান চ্যালেঞ্জ। মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে রাখার বিষয়টিকে মাথায় রেখেই বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। একইসঙ্গে ঊর্ধ্বমুখী ডলারের বাজারকে ঠান্ডা রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নিতে হবে। ডলারের বাজারের ভারসাম্যহীনতা দূর করতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভর্তুকি ও প্রণোদনা কমানো যেতে পারে। আপাতত রেমিট্যান্সের প্রণোদনা উঠিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া যেকোনো মূল্যে ঘাটতি বাজেট সীমিত রাখতে হবে।

আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সংসদে পেশ হবে ৯ জুন। বাজেট নিয়ে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, এবার সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ভিন্ন। ডলারের বাজারের ভারসাম্যহীনতা দূর করতে বাজেটে কিছু পদক্ষেপ থাকতে পারে। দারিদ্র্য, বৈষম্য কমানো ও শিক্ষা-স্বাস্থ্যে ভালো বরাদ্দ থাকতে হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বাড়ছে। জাহাজের ভাড়া বেড়েছে। অভ্যন্তরীণভাবেও কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবে দেশেও কিছু পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।

সার ও ডিজেল কেনায় সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এখানে অ্যাডজাসমেন্ট (মূল্য সমন্বয়) প্রয়োজন। ৪২ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি ৮৫ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকতে পারে। এই ভর্তুকি সামাল দিতে হবে। প্রতি ৮ টাকায় ১ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, তাহলে অন্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হবে কীভাবে? সার-ডিজেলে সবাই ভর্তুকি পায়, ছোট-বড় সব কৃষকই পায়। এখন সারের মূল্য ধরে রাখা ঠিক হবে কি না, তা ভাবতে হবে। ভর্তুকি সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভর্তুকি রেখে কিছু ক্ষেত্রে মূল্য সমন্বয় করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানোর কথা হচ্ছে। কখন কত টাকা বাড়ানো হবে, তার স্বচ্ছ ঘোষণা থাকতে হবে। বাড়ানোর যৌক্তিকতা ঠিকমতো তুলে ধরতে হবে। গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো। এর যুক্তি দেওয়া হলো— এলএনজির দাম বেড়েছে। কিন্তু এলএনজি কতটুকু ব্যবহার হয়, তাও ভাবতে হবে। গ্যাস ফুরিয়ে গেলে বলতে হবে যে আমাদের গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে সহায়তা বাড়াতে হবে। এর বিকল্প কিছু দেখছি না। প্রাথমিক শিক্ষা, বৃত্তি, বয়স্ক ভাতা— এসব খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তার যেসব ক্ষেত্রে দুর্নীতি কম হয় এবং স্বচ্ছতা আছে, সেসব খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। তিনি আরও বলেন, এখন রেমিট্যান্সে ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজন দেখছি না। এখানে ক্যাশ ইনসেনটিভ রাখার প্রয়োজন নেই। যেসব কর্মসূচি দারিদ্র্যবান্ধব নয়, সেসব ভর্তুকি বা প্রণোদনায় সাশ্রয় করতে হবে। ঘাটতিকে সীমিত রাখতে হবে। চলতি অর্থবছরে যে ঘাটতি হবে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে এর চেয়ে বেশি ঘাটতি রাখার পক্ষে আমি নই। ঘাটতি থাকবেই। কিন্তু যেকোনো মূল্যে ঘাটতি বাজেটকে সীমিত রাখতে হবে।

বিলাস পণ্য বা কিছু কিছু পণ্যে রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) বাড়ানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জাহিদ হোসেন বলেন, রেগুলেটরি ডিউটি বাজারে ডলারে চাহিদা বাড়াবে, আর মূল্যস্ফীতির চাপও বাড়াবে। যদি এটা বাড়াতে হয়, তাহলে মূল্যস্ফীতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে, সরকারকে তাও ঘোষণা করতে হবে। জাহিদ হোসেন বলেন, আমদানি করতে হয়— বাজেটে এমন সরকারি ব্যয় কমাতে হবে। যেখানে বিদেশি অর্থায়ন নেই, অর্থাৎ যে অর্থ সরাসরি ডলারে মেটানো যাচ্ছে না, সেখানে ব্যয় কমাতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার সঙ্গে ডলারের বাজারকেও ঠান্ডা রাখতে হবে। এগুলো করতে না পারলে প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। এছাড়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়াতে হবে, কারণ এখানে আমরা খুব কম খরচ করি।

Link copied!