`গালিব কে?-কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে-বলে দেবে-আমরা আর কি বলবো তার নামে?'- মির্জা গালিব।
সত্যিই গালিবের ব্যাপারে আমাদের ব্যাপারে আর বলার কিছুই নেই। ২৭ ডিসেম্বর ১৭৯৭ অর্থাৎ আজ থেকে ঠিক ২২৪ বছর আগে তাজমহল শোভিত শহর আগ্ৰায় এমন এক ক্ষণজন্মার জন্ম হয় যাকে সাহিত্য সমালোচক ও ঐতিহাসিকগণ উর্দু কাব্যের মহামতি সম্রাট রূপে তসলিম করেন। হ্যাঁ, এই মহানতম কবি অন্য কেউ নন- মির্জা আসাদুল্লাহ খান গালিব, যার আসাদুল্লাহ বেগ খান, কলমি-নাম গালিব।
গালিবের বাপদাদা ছিলেন আইবেক তুর্কি, সেলজুক বাদশাহদের বাদশাহি ছুটে যাওয়ার পর তারা গিয়ে সমরকন্দে ডেরা বাঁধেন।
১২ বছর বয়সে নওল কিশোর গালিব, দিল্লির পাট চুকিয়ে, আগ্ৰায় কদম রাখেন। তারপর বহু ভাড়া ঘরে এদিক ওদিক করে, যেই ঘরে থিতু হন তা ছিলো দিল্লির চাঁদনী চৌকের লাগোয়া মহল্লা বিল্লিমারাঁ, বিবি কাসিমজান গলির তিন কামরার ঘর, যেখানে তিনি জীবনের শেষ ছয় বছরের শ্বাস নিয়েছেন আর ওখানে থেকেই ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৮৬৯-এ ও পারে পাড়ি জমিয়েছেন।
এই ঘর লোকের মুখে গালিবের হাভেলী নামে পরিচিত।১৯৯৭ সালে ভারতের সরকারি পুরাতত্ত্ব বিভাগ ঐ ঘর অধিগ্রহণ করে তাকে হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করে।
হররোজ উর্দু সাহিত্যপ্রেমী ও গালিবের কাব্য সুধা পিয়াসীরা এই হাভেলি জিয়ারত করতে আসেন। হাভেলীর প্রশস্ত দালান মোগল স্থাপত্য রীতির নিশানা বহন করে, হাভেলীর পাথুরে দেওয়ালগুলোতে গালিবের বিশাল তসবির আর শায়েরি - কাব্যতে জীবন্ত হয়ে আছে - এর মধ্যে অনেক শায়েরি খোদ তার নিজের হাতের লেখা। হাভেলীতে হুক্কা এক জলজ্যান্ত গালিব এখনো আছে ভাস্কর্য হয়ে। এই ভাস্কর্যের পর্দা উন্মোচন করেন মশহুর উর্দু কবি, গীতিকার ও বুদ্ধিজীবী গুলজার।
গালিবের সাথে সাথে এই হাভেলীতে শেখ ইব্রাহীম যোক, বাহাদুর শাহ জাফর, মুমিনের মতো বিখ্যাত উর্দু কবিদের ছবিও এতে টাঙানো আছে।
বলা হয়, গালিবের নামকরা কবিতা সংকলন 'দিওয়ান-ই-গালিব'র সংকলন এই ঘরেই হয়। গালিব তার জীবনে মোগল সালতানাতের সিলসিলা টুটে যাওয়া থেকে শুরু করে, ১৮৫৭ সালের আজাদি যুদ্ধও দেখেছেন, আর তার কবিতায় এই দুই ট্র্যাজিডির কথা মূর্ত হয়ে ওঠে।
সফেদ মর্মর পাথরে ঢাকা গালিবের মাজার পুরানো দিল্লির দক্ষিণ ভাগের ঐ গলির বাঁ দিকে, যে গলি দিয়ে মশহুর সুফি বুযুর্গ হযরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মাজারে পৌঁছানো যায়।
লেখক ও অনুবাদক: কুতুব উদ্দিন চৌধুরী ইশতি
কবি , অনুবাদক, বাচিক শিল্পী