ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, ৩ উপজেলায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ২১, ২০২৪, ০১:২০ পিএম

ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, ৩ উপজেলায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

ছবি: সংগৃহীত

ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে পানির চাপ বাড়তে থাকায় জেলার পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া- এই ৩ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সেই সঙ্গে ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ছোট ফেনী নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, গত প্রায় ৩৭ বছর পর এলাকাবাসী আবারও এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে পড়ল।

পরশুরাম ও ফুলগাজীতে এরই মধ্যে বন্যার্তদের উদ্ধারে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনীর স্পিডবোট ও হেলিকপ্টার ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। আনন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য মোহাম্মদ সেলিম গণমাধ্যমকে বলেন, “ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় প্রতিবছর পাহাড়ি ঢলের পানিতে বন্যা হলেও ১৯৮৮ সালের পর এ ধরনের ভয়াবহ বন্যা আর হয়নি। তিন উপজেলায় প্রায় প্রতিটি বাড়ি ও বসতঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।”

পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া- এই ৩ উপজেলাবাসী পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কসহ স্থানীয় সব গ্রামীণ সড়ক, ফসলি মাঠ এখনও পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। এ ছাড়া পরশুরামে একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। সড়ক তলিয়ে যাওয়ার কারণে যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে কয়েকটি ডিঙ্গি নৌকাযোগে লোকজনকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হলেও প্রয়োজনের তুলনায় সেটা ছিল সামান্য। জেলা প্রশাসনের আহ্বানে বুধবার বিকেল থেকে সেনাবাহিনীর ছয়টি স্পিডবোট এরই মধ্যে বন্যায় আটকে পড়া পরিবারগুলোকে উদ্ধার শুরু করেছে।

ফেনী জেলা প্রশাসন জানায়, জেলার ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার সীমান্ত এলাকায় বিজিবি সদস্যরাও উদ্ধার কাজে নিয়োজিত আছেন। তাদের তিনটি স্পিডবোট কাজ করছে। 

এ ছাড়া সেনাবাহিনীর আরও ছয়টি স্পিডবোট আছে ও চট্টগ্রাম থেকে কোস্টগার্ড সদস্যরা রওনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি বিপৎসীমার প্রায় ১০০ মিলিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।

জেলা প্রশাসন, পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, ৩ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

গত ১ জুলাই ফেনীতে প্রথম দফা ও ২ আগস্ট দ্বিতীয় দফা বন্যার সময় বেড়িবাঁধের ১২টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। এবার তৃতীয় দফা বন্যার শুরু থেকেই বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে ৩ উপজেলার ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এদিকে অনেক এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব বলেন, “গত কয়েকদিনের অতিবৃষ্টি ও ভাঙনের স্থান দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে পৌরসভা ও তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় ১০০ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। ৫০০ পরিবারকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। আরও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার ও ৫০ টন চাল মজুদ আছে।”

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, “মুহুরী, সিলোনীয়া, কহুয়া নদীর পানি বেড়ে ফুলগাজী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ছে। অনেক ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।”

ফুলগাজী উপজেলায় মুহুরী, সিলোনীয়া নদীর বাঁধে নতুন করে ফাটল না দেখা দিলেও আগের ফাটল দিয়ে ও বাঁধ উপচে বন্যার পানি বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করেছে। বর্তমানে ফেনী-বিলোনিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক প্লাবিত হওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে উপজেলার সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে। 

ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও ছাগলনাইয়া পৌর এলাকার বেশির ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। গ্রামীণ এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, উপজেলার শর্শদি, পাঁচগাছিয়া ও ফাজিলপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।

দাগনভূঁঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, “উপজেলার সিন্দুরপুর, এয়াকুবপুর ইউনিয়নের কয়েক গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।”

টানা বৃষ্টিতে পানিতে তলিয়ে গেছে ফেনী শহরের পাড়া-মহল্লার সড়ক। অনেক বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহরিয়ার হাসান বলেন, “মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি বিপৎসীমা অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “সীমান্তের ওপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কোনও বাঁধ কেটে দিয়েছে কিনা জানি না। তবে সীমান্ত এলাকায় নদীতে অন্য যেকোনও সময়ের তুলনায় এবার পানি অনেক তীব্রগতিতে বাংলাদেশের দিকে নেমে আসছে। আর এতেই এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।”

ফেনীর জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার বলেন, “বন্যা পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে। পানিবন্দি মানুষ উদ্ধারে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছে।”

Link copied!