জুলাই ১৯, ২০২৫, ১২:২৬ পিএম
বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) মিশন কার্যক্রম শুরু নিয়ে জনমনে যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, সে বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সরকার বলছে, এই অংশীদারত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন, সামাজিক রীতিনীতি এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পরিপন্থী কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়িত হবে না।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয়ের সঙ্গে তিন বছরের একটি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করেছে বাংলাদেশ।
এর আওতায় দেশে একটি মিশন পরিচালিত হবে, যার লক্ষ্য মানবাধিকার উন্নয়ন ও সুরক্ষায় সহায়তা প্রদান।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, এই মিশনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি সহায়তা প্রদান, যাতে বাংলাদেশ তার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংক্রান্ত অঙ্গীকার পূরণে সক্ষম হয়। এর পাশাপাশি আইনি কাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা জোরদার করা হবে।
সরকার জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কার ও জবাবদিহির প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তবে সরকার স্বীকার করেছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আদর্শিক অবস্থান নিয়ে দেশের কিছু গোষ্ঠী উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ এমন একটি সমাজ, যেখানে শক্তিশালী ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ রয়েছে। অনেক নাগরিক চান, যেকোনো আন্তর্জাতিক অংশীদারত্ব যেন সেই মূল্যবোধকে সম্মান জানিয়ে পরিচালিত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ওএইচসিএইচআর মিশন শুধুমাত্র অতীতের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা—বিশেষ করে আগের সরকারের সময় সংঘটিত অপরাধ—নিয়ে কাজ করবে।
এটি কোনো সামাজিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্ল্যাটফর্ম হবে না, যা দেশের আইনি ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সরকার আশা প্রকাশ করেছে, এই মিশন সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করবে এবং স্থানীয় অংশীজনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় বজায় রাখবে।
জাতিসংঘ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতাকে পুরোপুরি সম্মান জানিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
এছাড়া, এই অংশীদারত্ব যদি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের স্বার্থের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে ওঠে, তাহলে সরকার প্রয়োজনে যেকোনো সময় চুক্তি থেকে সরে আসতে পারবে—বলে উল্লেখ করা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
সরকার আরও বলেছে, যদি আগের সরকারগুলোর আমলে এ ধরনের একটি মানবাধিকার মিশন থাকত, যখন বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গণহত্যার মতো অপরাধ দায়মুক্তির সঙ্গে সংঘটিত হতো, তাহলে অনেক অপরাধ তদন্ত ও বিচারপ্রাপ্ত হতো।
এই অংশীদারত্বকে সরকার একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে, যার মাধ্যমে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী করা এবং নাগরিক সুরক্ষা বাড়ানো সম্ভব হবে—দেশের মূল্যবোধ, আইন এবং জনগণের প্রতি জবাবদিহির ভিত্তিতে।