ছবি: সংগৃহীত
গাজীপুরের বাসন থানার চান্দনা চৌরাস্তায় রিয়াজ টাওয়ারের ৬ষ্ঠ তলায় মাল্টিপয়েন্ট বিডি নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ৯৮ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় মূল হোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এই চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো– মো. আব্দুর রহমান, রবিউল ইসলাম, উজ্জ্বল ও মিরাজ।
শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআই জেলা ইউনিটের পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘গত ১৪ এপ্রিল মাল্টিপয়েন্ট বিডির অফিসের কার্যক্রম চলাকালীন অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা অফিসে প্রবেশ করে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে অস্ত্রের মুখে ভয় দেখানোসহ অফিসের কয়েকজনকে এলোপাথাড়িভাবে মারপিট করে। একপর্যায়ে আসামিরা অফিসের ভল্টে থাকা নগদ ৯৮ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরের দিন প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ একরামুল হক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এ ব্যাপারে জিএমপি পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে ২৩ এপ্রিল ঢাকার ফকিরাপুল কাঁচাবাজার এলাকা থেকে মূল হোতা আব্দুর রহমান ওরফে রাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, ‘পরে আব্দুর রহমান ওরফে রাজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২৮ এপ্রিল লুণ্ঠিত ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা উদ্ধার ও ঘটনায় জড়িত রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। ৩০ এপ্রিল ভোলা জেলার দুলারহাট থানার শিকদারের চর কিল্লার মাঠ এলাকা থেকে আসামি দুই ভাই উজ্জ্বল ও মিরাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে আসামিদের হেফাজত থেকে লুণ্ঠিত ২২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।’
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আব্দুর রহমান ওরফে রাজন দুই মাস আগে চান্দনা ঈদগাহ মাঠে ঘুরতে গেলে রবিউলের সাথে তার পরিচয় হয়। তখন রাজন জানায় তাদের অফিসে অনলাইনে ক্যাসিনো এবং অবৈধ লেনদেনের ব্যবসা চলে। এই আলোচনার ১০-১৫ দিন পর রবিউল আব্দুর রহমানকে নিয়ে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিরাজের কাছে যায়। মিরাজের কাছে তাদের অফিসে অনলাইন ক্যাসিনোর ব্যবসার কথা বলে। পরে মিরাজ তার আপন ভাই উজ্জ্বলকে নিয়ে তার কাছে আসে এবং উজ্জ্বল ঢাকায় মিন্টু রোডে ডিবি অফিসে চাকরি করেন বলে জানায়। মিরাজ ও উজ্জ্বল মিলে পরিকল্পনা করে তারা ডিবি পরিচয়ে নগদ ডিস্টিবিউটর অফিসে ঢুকে কম্পিউটার তল্লাশি দিয়ে ক্যাসিনোর সাথে সম্পৃক্ততার তথ্য সংগ্রহ করে অফিসের টাকা–পয়সা হাতিয়ে নেবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী উজ্জ্বল, মিরাজসহ আরও ৪ জন নগদ ডিস্টিবিউটর অফিসে প্রবেশ করে ডিবির পরিচয় দিয়ে অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে অফিসের ভল্টের থাকা ৯৮ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়।’
ঘটনার বিষয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আসামি আব্দুর রহমান ওরফে রাজন ঘটনার দিন পূর্ব পরিকল্পনা করে একটি তালা কিনে আসামি উজ্জ্বলকে দেয়। ঘটনার পর আসামি উজ্জ্বল তালা দিয়ে অফিসের বাইরের দিক থেকে সবাইকে তালাবদ্ধ করে দেয়। পরে আব্দুর রহমান অভিনয় করে তালা ভেঙে তাদের উদ্ধার করে। ঘটনার পর মিরাজ, আব্দুর রহমানের বাসায় গিয়ে তাকে লুটের ৩ লাখ টাকা দেয়।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘ঘটনায় জড়িত উজ্জ্বল ও মিরাজ জানায়, ঘটনার দিন তারা মোট ১০ জন ছিল। উজ্জ্বল ও মিরাজসহ ৬ জন প্রতিষ্ঠানের ভেতরে প্রবেশ করে এবং অপর ৪ জন নিচে দাঁড়িয়ে পাহারা দেয়। আসামিরা প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে ৩টি ব্যাগে নগদ অফিসের ভল্টের থাকা টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।’