মে ৩, ২০২৩, ১০:২৩ এএম
২০০৬ সালে হত্যা করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহেরকে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলের করা মামলার রায় অবশেষে নির্ধারিত হলো। এর আগে আসামিরা রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেছিল। এবার খারিজের রায় প্রকাশিত হয়েছে। এর ফলে এ মামলার আসামি শিক্ষক মহিউদ্দিন ও কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীরের ফাঁসি কার্যকরে আর কোনো বাধা রইল না। বুধবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৮ সদস্যের আপিল বেঞ্চ সাক্ষর করার পর ২১ পাতার পূর্ণাঙ্গ এ রায় প্রকাশিত হয়।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে হত্যার শিকার অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহত অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাত পরিচয়দের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
২০০৮ সালের ২২ মে আলোচিত এই হত্যা মামলার রায় দেন রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত। রায়ে চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেওয়া হয়। দণ্ডিতরা হলেন- রাবি ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসারের কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের সম্বন্ধি আব্দুস সালাম। খালাসপ্রাপ্ত চার্জশিটভুক্ত দুই আসামি হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী। পরে ওই বছরই (২০০৮) বিচারিক আদালত থেকে আইন অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরাও আপিল করেন। উভয় আবেদনে শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট।
ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন- রাবি'র সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম। ফাঁসির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া দুই আসামি হলেন- মো. জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের সমন্ধি আব্দুস সালাম।
এরপর আসামিরা আপিল বিভাগে আপিল করেন। পাশাপাশি যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামির দণ্ড বৃদ্ধি চেয়েও পৃথক আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত বছরের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল রাখেন। পরে ১৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। এরপর আসামিরা রিভিউ আবেদন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত রায়ের দিন ধার্য করা হয়।
গত বছর আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে হত্যা প্রসঙ্গে বলা হয়, আসামিদের স্বীকারোক্তিগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, হত্যার এ ষড়যন্ত্রে মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনই মুখ্য এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করছিলেন। আমাদের এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন শুধুমাত্র প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি পেতেই ড. তাহেরকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেন। তার ধারণা ছিল, ড. তাহের বেঁচে থাকলে অধ্যাপক হিসেবে তার পদোন্নতি পাওয়া সম্ভব নয়। আপিলকারী জাহাঙ্গীর আলম এবং আবেদনকারী আব্দুস সালাম ও নাজমুল আর্থিক সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার জন্য অধ্যাপক তাহেরকে হত্যার জন্য ড. মহিউদ্দিনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন।