মার্চ ১, ২০২৩, ০১:২০ এএম
এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মানসিক নির্যাতন ও ধর্ষণের হুমকি পাওয়া দুই শিক্ষার্থী ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য সরব প্রতিবাদী হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ওই শিক্ষার্থী ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য অভিযোগ দিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, আমার সাথে অন্যায় হয়েছে। মানসিকভাবে এখনো বিপর্যস্ত। আমি আশা করছি, ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ আমার অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। আমি তথ্যপ্রমাণসহ অভিযোগ দিয়েছি। এর শেষ দেখব।
স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার আইইআরের দ্বিতীয় ব্যাচের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে ওই ছাত্রীকে নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ভুক্তভোগী আইইআরের পঞ্চম ব্যাচের ছাত্রী। তাঁর অভিযোগ অনুযায়ী, নির্যাতনের ঘটনায় নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিফা হক ওরফে শেফা ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুর রহমান। তাঁরা একই ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী।
মারধরসহ নির্যাতনের বিষয়ে আরেকটি অভিযোগ তুলেছেন ইনস্টিটিউটের তৃতীয় ব্যাচের আরেক ছাত্র। ভুক্তভোগী ওই দুজন সোমবার দুপুরে আইইআরের তৃতীয় ব্যাচের চেয়ারম্যান আকতার বানুর কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী উল্লেখ করেছেন, কিছুদিন ধরে তিনি ইনস্টিটিউটের কয়েকজন বড় ভাইবোনের মাধ্যমে ক্রমাগত মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন। ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি তাঁর ইনস্টিটিউটের একজন বড় ভাইয়ের সাথে ক্যাম্পাসের বাইরে একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যান। সেখানে ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান, আতিফা হকসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সেখানে অশালীন কথাবার্তা ও অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকেন। পরে তাঁরা আরও নানাভাবে তাঁদের মানসিকভাবে হেনস্তা করেন।
লিখিত অভিযোগ মতে, রবিবার তাঁকে ফোন দিয়ে দেখা করার জন্য আতিকুর ও আতিফা চাপ দিতে থাকেন। বাধ্য হয়ে তিনি তাঁর কয়েকজন সহপাঠীকে নিয়ে বিভাগের সামনের চায়ের দোকানে যান। সেখানে তাঁর চরিত্র নিয়ে নানা রকম গালিগালাজ করে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়। সাথে থাকা অন্য সহপাঠীদেরও হেনস্তা করা হয়। তাঁকে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি এবং ক্যাম্পাসে তাঁর টিকে থাকা অসম্ভব করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
ঘটনাটির অডিও রেকর্ডে আতিফা হকের মতো একজনকে বলতে শোনা যায়, ওকে হলে গিয়ে ধরব। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাচের মানুষের সাথে ও ঘুরে বেড়িয়েছে। ওকে প্রটেকশন দিলে ওর লাইফ আরও দুর্বিষহ করব। ওর ক্যারেক্টার যদি আমি না...তাহলে আমার নাম শেফা না। ওকে যেখানে পাব, সেখানে...’
ইনস্টিটিউটের পরিচালক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক, অপ্রীতিকর ও একই সাথে উদ্বেগের। এগুলো প্রতিহত করা উচিত। এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাউন্সেলিং করা দরকার। আর অভিযোগ গুরুতর হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তিনি শুনেছেন, এ ধরনের অভিযোগ এসেছে। অভিযোগটি তাঁর কাছে এলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আসাবুল হক বলেন, তিনি বিষয়টি অবগত হয়েছেন। ইনস্টিটিউটের কাছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দিয়েছেন। সেখানে এ বিষয়ে তদন্ত হবে।
নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগও। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেছেন, আইইআরের ঘটনাটি সম্পর্কে ছাত্রলীগ অবগত হয়েছে। এ ঘটনার যদি সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই ছাত্রলীগ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে। কেউ ছাড় পাবে না।