রোজায় লেবু বেচেই লালে লাল কৃষক সামাউল

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ২৭, ২০২৩, ০১:৩৬ পিএম

রোজায় লেবু বেচেই লালে লাল কৃষক সামাউল

উন্নত জাতের সিডলেস বা বিচিবিহীন লেবু চাষ করে লালে লাল হয়েছেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার কদমপুর গ্রামের কৃষক সামাউল ইসলাম। তার বাগান থেকে প্রতিবছর যে পরিমাণ লেবু উঠে তা থেকে খরচ বাদে তিনি কোটি টাকার বেশি পাচ্ছেন। এই আয়ে তাঁর পরিবারে ফিরেছে সুদিন, হচ্ছে অন্যদের কর্মসংস্থানও। জেলার অন্য কৃষকরাও এই লেবু বাগান করে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে আগ্রহী। 

মুকসুদপুর উপজেলার কৃষক সামাউল আড়ই একর কৃষি জমি লিজ নিয়ে গত বছরের প্রথম দিকে শুরু করেছিলেন উন্নত জাতের বিচিবিহীন এই লেবুর চাষ। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বাগানে বাম্পার ফলন দেখা গেছে। রাজধানী ঢাকায় যখন লেবুর জন্য হাহাকার, তখন এই কৃষক গুনছেন টাকা।

সামাউলের একই জাতের আরও অন্তত ১০টি বাণিজ্যিক বাগান গড়ে উঠেছে; তারাও ভাল করছেন। আগে কলা, পেয়ারা, মাল্টা, কুল চাষ করে সাফল্য পেয়েছিলেন; এবার লেবুতে বাজিমাত করেছেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার কদমপুর গ্রামের এই কৃষক এখন অনেকের আইডল।

সামাউলের বাগানে বারি লেবু-৪ জাতের লেবুই বেশি। সুগন্ধি ও সারা বছর ফলন ধরে। প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ৫০০টি লেবু পান তিনি।

Lemon farm

কৃষক সামাউলের লেবু বাগান। ছবি: সংগৃহীত

ওই কৃষক জানালেন, ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসে লেবুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। রোজায় সপ্তাহে পাঁচদিন তিনি লেবু তোলেন। তখন প্রতিদিন আট থেকে ১০ হাজার লেবু বিক্রি করেন। আকার ভেদে প্রতিটি লেবু ছয় থেকে আট টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করেন। এ মাসে যেহেতু লেবুর চাহিদা বেশি গড়ে ১৫ লাখ টাকার লেবু বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি। 

জমি লিজ নিয়ে বাগান করেছেন তিনি। তাঁর লেবু বাগানের বয়স তিন বছর। প্রথম বছর থেকেই তিনি ফলন পাচ্ছেন। এখন সেই ব্যবসা কোটি টাকার ঘরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। পাইকাররা বাগানে এসে লেবু কিনে ঢাকা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করেন। তাঁর দেখাদেখি এলাকা ও আশপাশের উপজেলায় একই জাতের আরও অন্তত ১০টি বাণিজ্যিক বাগান গড়ে উঠেছে। তারাও ভাল করছে।   

সামাউল বলেন, আমার বাগানের লেবুর ফ্লেভার ভাল। লেবুতে বিচি নেই। এ ছাড়া প্রচুর রস আছে। লেবুটি সালাদ ও শরবতে বেশি ব্যবহৃত হয়। এই কারণে বাজারে এই লেবুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এম এম কামরুজ্জামান বলেন, তিন বছর আগে আমাদের উৎসাহে সিডলেস বারমাসী বারি লেবু-৪ চাষ শুরু করেন এই কৃষক। আমরা তাকে চারা, সার, ছত্রাকনাশক প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছি। তিনি এখন সফল চাষি।

গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এইচ এম খায়রুল বাশার বলেন, এই জাতের একটি গাছ ৩৬৫ দিনে ৫০০-৬০০ লেবু দিতে সক্ষম। প্রতিদিন গড়ে একটি গাছ থেকে দুটি লেবু সংগ্রহ করা যায়।

লেবুটি সুগন্ধযুক্ত; তাই শরবত ও সালাদে এটি সবচেয়ে বেশি সমাদৃত। সারাদেশে বারমাসী এই লেবুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ কারণে গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর অঞ্চলে লাভজনক এই লেবুর চাষ দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে।

কদমপুর গ্রামের কৃষকরা জানান, সামাউল একজন সফল কৃষক। তিনি ১৫ বছর আগে যশোর থেকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে আসেন। লেবুতে তিনি বাজিমাত করেছেন।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা সদর বাজারের আড়তদাররা জানান, ওই কৃষকের লেবুর সাইজ বড়, রস বেশি ও সুগন্ধিও। এই কারণে তাঁর লেবু একটু বেশি দামে বিক্রি করা যায়। বাজারে চাহিদাও বেশি। আমি তাঁর লেবু বিভিন্ন জেলায় চালান করি।

Link copied!