স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থার চাকরিতে আগামী জুলাইয়ের পরে যোগদান করা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় যুক্ত হবেন। এ ব্যবস্থার মাধ্যমেই নির্ধারিত হবে তাদের পেনশন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গত বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, আগের পেনশন পাবেন না নতুন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। অবশ্য নতুন ব্যবস্থায় কোন কোন সংস্থার পেনশন সুবিধা বাড়বে, কোন কোন সংস্থার আর্থিক সুবিধা কমবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
বলা হয়েছে, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩-এর ১৪ ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সব স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা ও তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের চাকরিতে যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী, তারা যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই বা পরবর্তী সময়ে নতুন যোগদান করবেন তাদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত করা হলো।
অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গত বছরের আগস্টে চালু হওয়া সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতায় চারটি পৃথক স্কিম চালু রয়েছে। এর মধ্যে ‘প্রবাস’ স্কিমটি প্রবাসীদের জন্য। ‘প্রত্যয়’ স্কিম চালু করা হয়েছে বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য। অনানুষ্ঠানিক খাত অর্থাৎ স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য রয়েছে ‘সুরক্ষা’। আর ‘সমতা’ স্কিম নিম্ন-আয়ের মানুষের জন্য।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এর সঙ্গে ‘প্রত্যয়’ নামের আরও একটি স্কিম অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এই স্কিমের আওতায় রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের নতুন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পেনশন পাবেন। সেক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা এমনকি আগামী জুলাইয়ের আগে কেউ যোগদান করলে তারাও বিদ্যমান নিয়মে পেনশন পাবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন স্কিমের আওতায় পেনশন পাওয়ার ক্ষেত্রে চাঁদা কত হবে এবং চাঁদা পেনশনারকে বহন করতে হলে এ ক্ষেত্রে বেতন কাঠামো কেমন হবে, এসব চূড়ান্ত করে শিগগির একটি বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে। সরকারি কর্মচারীদেরও সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে সুবিধামতো সময়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে সরকার।’
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সীমিত কিছু প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে পেনশন ব্যবস্থা রয়েছে। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ডে (সিপিএফ) চাকরিজীবীরা জমা দেয় বেতনের ১০ শতাংশ এবং ওই প্রতিষ্ঠান দেয় ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। অংশীদারিত্বের এ তহবিল থেকেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবসরকালীন আর্থিক সুবিধা পান। এছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা চাকরিকালীন প্রতিবছরে দুই মাসের বেসিকের সমান গ্র্যাচুইটি পান। এই অর্থ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারের বাজেট থেকে দেয়া হয়। সর্বজনীন পেনশনের আওতায় এখন পর্যন্ত চারটি স্কিমে অংশগ্রহণকারীদের চাঁদার ভিত্তিতে পেনশন দেয়ার কথা বলা হয়েছে।’
আগামীতে রাষ্ট্রায়ত্ত বা স্বায়ত্তশাসিত ধরনের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশনের আওতায় পেনশন দেওয়া হলে তা কীভাবে নির্ধারণ হবে- জানতে চাইলে গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আলাদা একটি বিধিমালা প্রস্তুত হচ্ছে। নতুন বিধিমালার আলোকে বিষয়গুলো চূড়ান্ত হবে।’
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘১ জুলাইয়ের পর সংস্থাগুলোতে যারা নতুন নিয়োগ পাবেন, তারা পেনশন সুবিধা সম্পর্কে জেনেই আসবেন। কার্যকর করতে পারলে বিষয়টি খারাপ হবে না। আর সব নাগরিকের জন্যই যেহেতু সর্বজনীন পেনশন, সে বিবেচনায় পরের ধাপে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্যও তা চালু করা যেতে পারে।’