গতকাল শনিবার দিনভর নানা নাটকীয়তা শেষেও নিজের পতন ঠেকাতে পারলেন না পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। রবিবার প্রথম প্রহরে পার্লামেন্টে বিরোধী দলগুলোর আনা অনাস্থা ভোটে হেরে যান তিনি। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের ইতিহাসে অনাস্থা ভোটে কোনো প্রধানমন্ত্রী তার পদ হারালেন।
ইমরান খানের পর কে হচ্ছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী-এমন জল্পনা এখন দেশজুড়ে। প্রধানমন্ত্রী পদে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফের নাম। পাঞ্জাব রাজ্যের সাবেক এই মুখ্যমন্ত্রী ইমরান খানের সময় জাতীয় পরিষদে বিরোধী দলীয় নেতার ভূমিকা পালন করেছেন।
কে এই শাহবা শরিফ
ব্যাক্তিগত জীবন এবং শিক্ষা শাহবাজ পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই। এই মুহূর্তে পাক সংসদে বিরোধী দলনেতা।
ব্যক্তিগত জীবন ও শিক্ষা
আন্তর্জাতিক স্তরে সেভাবে পরিচিতি না থাকলেও পাকিস্তানের ঘরোয়া রাজনীতিতে দক্ষ প্রশাসক হিসেবে শাহবাজ শরিফের সুনাম রয়েছে।
পাকিস্তানের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই শাহবাজ ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের লড়াইয়ে বিরোধীদের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। রবিবার পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বরখাস্ত হন ইমরান।
শাহবাজ শরিফের জন্ম পঞ্জাবের লাহোরে। একটি পাঞ্জাবি ভাষী কাশ্মীরি পরিবারে তাঁর জন্ম। বাবা'র নাম মহম্মদ শারিফ। পাকিস্তানের নামকরা একজন ব্যবসায়ী এবং উদ্যোগপতিও বটে। শেহবাজও একজন ব্যবসায়ী। একাধিক ব্যবসা রয়েছে তাঁর নামে। পারিবারিক স্টীলে ব্যবসা রয়েছে। লাহোরের গর্ভমেন্ট কলেজ-ইউনিভার্সিটি থেকে আর্টসে স্নাতন করেছেন শেহবাজ। ব্যবসা করতে করতেই ১৯৮৫ সালে লাহোর চেম্বার অফ কমার্স এবং ইন্ডাস্ট্রির প্রধান হিসাবে কাজ করেছেন।
রাজনৈতিক ক্যারিয়ার
ব্যবসায়ী শাহবাজ শরিফ বড় ভাই নওয়াজ শরীফের হাত ধরেই রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৮৮ সালে পঞ্জাবের প্রত্যন্ত বিধানসভায় নেতা হিসাবে কাজ শুরু করেন। এরপর জাতীয় সংসদেও কাজ করেছেন। আর তা ১৯৯০ সালে। এরপর ১৯৯৩ সালে আরও একবার পঞ্জাব বিধানসভা থেকে নির্বাচিত হন শাহবাজ শরিফ। এরপর বিরোধী দলনেতা হিসাবে সংসদে কাজ করেন। এমনকি ১৯৯৭ সালে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবেও নির্বাচিত হয়েছেন নওয়াজের ভাই। কিন্তু ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানে হওয়া সেনা অভ্যুত্থানের কারণে শাহবাজ গোটা পরিবারকে নিয়ে লুকিয়ে সৌদি আরব চলে যান। সেখানেই কয়েক বছর কাটান। এরপর ২০০৭ সালে ফের একবার পাকিস্তানে ফিরে আসেন।
সেনাবাহিনীর সাথে সম্পর্ক
শাহবাজ শরিফের রয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তবে এই সম্পর্কটা বড় ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ছিল না। আন্তর্জাতিক বিশ্লেসকদের মতে,২২ কোটি মানুষের এই দেশের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতি নিয়ন্ত্রণ করে পাক সেনা। সেখানে পাক সেনার সঙ্গে সুসম্পর্ক ক্ষমতায় থাকার অন্যতম মূল চাবিকাঠি পাকিস্তানে।
শাহবাজ শরিফ পাকিস্তানে ফিরেই রাজনীতিতে নিজের জায়গা শক্ত করেন। ২০০৮ সালে তিনি আবারও পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে র্নিবাচিত হন। ২০১৩ সালে তৃতীয়বারের জন্যে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হন শেহবাজ। কিন্তু ২০১৮ সালে সাধারণ নির্বাচনে তাঁর পার্টি মুখ থুবড়ে পড়ে। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় চিনের চায়না পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর( সিপিইসি) প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে বেজিংয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করেছেন শেহবাজ শরীফ।
পাকিস্তান মুসলিম লীগের নেতৃত্ব
২০১৭ সালে প্রকাশিত পানামা পেপারসে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এন) প্রধান নওয়াজ শরিফের নাম থাকার পর শাহবাজ শরিফ পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ পার্টির প্রেসিডেন্ট হন। আর এর মধ্য দিয়েই পাঞ্জাবের প্রাদেশিক রাজনীতি ছেড়ে জাতীয় রাজনীতিতে পদার্পণ হয় শাহবাজ শরিফের।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাকিস্তানের ‘ভালো সম্পর্কে’ বিশ্বাসী শাহবাজ শরিফ। ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের পর থেকেই পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ কের এসেছেন যে তাঁর সরকের পতনের নেপথ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে শাহবাজ তাঁর দাদার মতোই মার্কিনপন্থী নীতিতে বিশ্বাসী। গতকাল আস্থা ভোটে বিরোধীদের জয়ের পর শাহবাজ পাক অ্যাসেম্বলিতে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমরা কারো বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেব না, কারো প্রতি অবিচার করব না এবং কাউকে জেলে পাঠাব না, আইন তার নিজস্ব পথে হাঁটবে।’