কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্তে নতুন করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ায় থাইল্যান্ড সোমবার বিমান হামলা চালিয়েছে। থাই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গোলাগুলিতে দেশটির এক সেনা নিহত হয়েছেন। দু’দেশই পরস্পরকে উত্তেজনা উসকে দেওয়ার জন্য দায়ী করছে। বাংকক থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
সোমবার ভোরে উবন রাচাথানি প্রদেশে কম্বোডীয় সেনারা থাই বাহিনীর ওপর গুলি চালায়। থাই সেনাবাহিনীর মুখপাত্র উইন্থাই সুভারি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সহযোগী ভারী অস্ত্রের আঘাতে আমাদের একজন সৈন্য নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন।’
উইন্থাই আরো জানান, কম্বোডীয় বাহিনীর হামলা ঠেকাতে থাইল্যান্ড ‘বিমান ব্যবহার করে কয়েকটি এলাকায় সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা শুরু করেছে।’
অন্যদিকে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোচেয়াতা অভিযোগ করেন, সোমবার ভোরে প্রেহ ভিহেয়ার ও ওদ্দার মিনচে প্রদেশে থাই বাহিনী তাঁদের ওপর আক্রমণ চালায়। তিনি বলেন, থাইল্যান্ড ‘ট্যাংক দিয়ে তামোন থম মন্দির ও প্রেহ ভিহেয়ার মন্দিরের আশপাশে একাধিক গোলা ছোড়ে।’
কম্বোডিয়া পাল্টা হামলা চালায়নি বলে তিনি দাবি করেন।
ওদ্দার মিনচে প্রাদেশিক প্রশাসনের মুখপাত্র মেট মিয়াসফিয়াকদে জানান, শতবর্ষী তামোন থম ও তা ক্রাবেই মন্দিরের এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সীমান্তের কাছে থাকা বহু গ্রামবাসী নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি জানান।
থাইল্যান্ডের সেকেন্ড আর্মি রিজিয়ন এক বিবৃতিতে জানায়, নতুন করে লড়াই শুরুর পর সীমান্তসংলগ্ন এলাকা থেকে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
থাই সেনাবাহিনী আরো অভিযোগ করেছে, কম্বোডীয় বাহিনী বুরি রাম প্রদেশের বেসামরিক এলাকায় বিএম-২১ রকেট নিক্ষেপ করেছে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
রোববার দুই দেশের মাঝে স্বল্প সময়ের একটি সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। থাই সেনাবাহিনী জানায়, ওই ঘটনায় তাদের দুই সদস্য আহত হয়েছে।
চলতি বছরের গ্রীষ্মে পাঁচ দিনের তীব্র সংঘর্ষে দুই দেশে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়। বাস্তুচ্যুত হয় প্রায় তিন লাখ মানুষ। পরে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও আসিয়ানের চেয়ার মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়।
অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে একটি যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষর করেন। নতুন বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণাও আসে। দুই দেশ যুদ্ধবিরতি বাড়াতে সম্মত হওয়ার পরই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
তবে গত মাসে থাইল্যান্ড ওই চুক্তি স্থগিত করে। সেনাদের আহত করার অভিযোগে একটি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণকে তারা দায়ী করে। এরপরই দুই দেশ আবারও পরস্পরের বিরুদ্ধে নতুন সংঘর্ষের অভিযোগ তোলে। কম্বোডিয়া জানায়, এসব ঘটনায় তাদের এক বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
দুই দেশের বিরোধের মূল বিষয় শত বছরের পুরোনো সীমান্ত মানচিত্র। ফরাসি ঔপনিবেশিক আমলে তৈরি মানচিত্র নিয়ে দ্বন্দ্ব এখনও রয়ে গেছে। সীমান্ত এলাকার কয়েকটি প্রাচীন মন্দিরের ওপর উভয় দেশের দাবি এই উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে।