যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান এবং একই সাথে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড় থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এর ফলে কনজারভেটিভ পার্টির আরেক নেতা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাকের টোরি পার্টির প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে গেল।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, রবিবাবর রাতে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন বরিস জনসন।
এক বিবৃতিতে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী জানান,পার্লামেন্টের আইনপ্রণেতারা তাকে সমর্থন করা শর্তেও তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন। আপাতত প্রধানমন্ত্রীর হওয়ার দৌড়ে থাকা ঠিক হবে না বলে মনে করছেন তিনি। পার্লামেন্টে কনজারভেটিভ পার্টির আইনপ্রণেতারা ঐক্যবদ্ধ না হলে কার্যকরভাবে সরকার পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলেও বরিস মন্তব্য করেন।
তবে এবার সরে দাঁড়ালেও ২০২৪ সালের নির্বাচনে লড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বরিস জনসন। বিৃবতিতে কনজারভেটিভ পার্টির এই নেতা আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আগামী ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টিকে বিজয় এনে দিতে পারব।
বরিস জনসন সরে দাঁড়ানোয় এখন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। এরই মধ্যে তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টি দেশটির প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোর প্রধান শিরোনামে স্থান পেয়েছে।
দ্য টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বরিস জনসন সরে দাঁড়ানোয় ঋষি সুনাকের জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ পরিষ্কার হলো। ‘প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন ঋষি সুনাক’ এমন শিরোনাম ছিল ডেইলি মিরর ও দ্য সান’র।এছাড়া, এক্সপ্রেস শিরোনাম করেছে, বরিস সরে যাওয়ায় নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে অপেক্ষায় ঋষি সুনাক।
ঋষি সুনাক ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ও কনজারভেটিভ পার্টির নেতা হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেনি মরডান্ট। পেনি মরডান্ট সম্পর্কে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য আই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বরিসকে যারা সমর্থন করেছেন তাঁরা এখন সাবেক এই নারী প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে সমর্থন করবেন বলে মরডান্টের আশপাশের আইনপ্রণেতারা ধারণা করছেন।
বরিস জনসন সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পরই দ্য টেলিগ্রাফে নিজের লেখার লিংক টুইটার শেয়ার করেছেন পেনি মরডান্ট। এতে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হলে তার সরকার কোন ধরণের হবে তার একটি বর্ণনা দেন। পেনি মরডান্ট লিখেছেন, “একটি ঐক্যবদ্ধ, সংযমী ও সৎ সরকারই কেবল আগামী নির্বাচনের জন্য ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম এবং আমার সরকার এমনটাই হবে।’
ঋষি সুনাম প্রধানমন্ত্রী হলে তিনিই হবেন প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি যিনি সে দেশ চালানোর ভার পেলেন।
১৯৮০ সালের ১২ মে ব্রিটেনের বন্দর সাউদাম্পটনে জন্ম হয় ঋষির। বাবা চিকিৎসক। জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার কর্মী। তাঁর মায়ের নিজস্ব ওষুধের দোকান ছিল। স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে বাবা-মা অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত থাকলেও অক্সফোর্ড এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ঋষি কিন্তু সে সবের ধারেকাছেও যাননি। রাজনীতিতে নামার আগে তিনি ছিলেন পুরোদস্তুর এক জন বিনিয়োগ ব্যবসায়ী।
ব্রিটেনের অন্যতম বৃহৎ বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের তিনি ছিলেন এক জন সহপ্রতিষ্ঠাতা। ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালি থেকে বেঙ্গালুরু তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থা— সবেতেই ছিল তাঁর সংস্থার বিনিয়োগ।
ঋষি ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি বহুজাতিক সংস্থা ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণমূর্তির জামাই। ২০০৯ সালে ক্যালিফর্নিয়ায় তাঁর ভাবী স্ত্রী অক্ষতার নারায়ণমূর্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। সে বছরই তাঁরা বিয়ে করেন।
ঋষি ও অক্ষতার দুই মেয়ে হয়। নাম, অনুষ্কা ও কৃষ্ণা। বিশ্বে অন্যতম ধনী দম্পতি। উভয়ের মিলিত সম্পত্তির পরিমাণ ৭৩ হাজার লক্ষ পাউন্ড।
২০১৫ সালে কনজারভেটিভের হয়ে ভোট দাঁড়িয়ে রিচমন্ড ইয়র্কশায়ার থেকে জিতে সাংসদ হন তিনি। তার পর আর তাঁকে ফিরে তাকাতে হয়নি। দলে ক্রমশই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন ঋষি। বরিসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার আগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর একনিষ্ঠ সমর্থন ছিলেন তিনি। ফলে তাঁর মন্ত্রিসভা অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ঋষি।
প্রসঙ্গত, মাত্র ছয় সপ্তাহ আগে কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের দৌড়ে ঋষি সুনাককে হারিয়ে বরিস জনসনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন লিজ ট্রাস। তবে মাত্র ৪৫ দিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেন।