হামাস কেন ইসরায়েলে হঠাৎ করে হামলা চালাল

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ৮, ২০২৩, ০৮:৫৫ পিএম

হামাস কেন ইসরায়েলে হঠাৎ করে হামলা চালাল

হামাসের হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫০ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন সংঘাত নতুন কোন ঘটনা নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বারবার অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল। আবার পাল্টা আক্রমণ হিসেবে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। তবে সংঘাত যেভাবেই হোক না কেন, এর মূল্য দিতে হয়েছে ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষকে।

প্রশ্ন হলো, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের এই সংঘাত কেন চলছে বছরের পর বছর? কেনই বা বারবার গাজায় অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল?

ভৌগোলিকভাবে ইসরায়েল ও মিসরের মাঝখানে অবস্থান গাজা উপত্যকার। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর দখল করা ভূখণ্ডের মধ্যে শুধু গাজা থেকেই সেনা ও বসতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারা একেই গাজা থেকে নিজেদের দখলদারির অবসান বলে মনে করে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এখনো গাজার অধিকাংশ সীমান্তই নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েলি বাহিনী। শুধু দক্ষিণের সীমান্তচৌকির নিয়ন্ত্রণ মিসরের হাতে।

ইসরায়েল গাজার সীমান্ত, নৌ ও আকাশপথগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো মানুষ বা মালামাল গাজায় ঢোকা কিংবা বের হওয়া—সবই হচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যে। ইসরায়েলের দাবি, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এটা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু ইসরায়েলের এ তৎপরতার কারণে গাজার বাসিন্দারা কার্যত অবরুদ্ধ। গাজাবাসী তাদের আর্থসামাজিক দুরবস্থার জন্য দায়ী করে ইসরায়েলকে। আর হামাসসহ কট্টর ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলের এ তৎপরতাকে অসহনীয় ও অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ২০০৮ সালে গাজায় বড় ধরনের অভিযান চালায় ইসরায়েল। এরপর ২০০৯, ’১২, ’১৪, ’১৮, ’২১ এও চলেছে বড় বড় অভিযান। হামাসকে দমনের নামে এসব অভিযান পরিচালনা করা হলেও এর মূল্য দিতে হয়েছে ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষকে।

একদিন আগেও শনিবার সকালে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে ব্যাপক রকেট হামলা চালায়। হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে ঢুকে পড়লে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জবাবে ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালানো শুরু করে ফিলিস্তিনের গাজায়।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামাসের হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫০ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় গাজায় ২৩০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উভয় পক্ষে আহত হয়েছেন হাজারো মানুষ।

হামাস ইসরায়েলে এ অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’। দখলদার ইসরায়েলের হাত থেকে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতাই এ অভিযানের লক্ষ্য বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি।

একই সঙ্গে ইসরায়েলে আবার সক্রিয় হয় ‘আয়রন ডোম’। ‘আয়রন ডোম’ বিশ্বের অন্যতম সেরা ও অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।

তবে এবার হামাসের রকেট হামলার মাত্রা ছিল নজিরবিহীন। তাই গাজা থেকে ছোড়া অনেক রকেট ইসরায়েলের আয়রন ডোমের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়। এ কারণে ইসরায়েলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে।

কিন্তু হঠাৎ করে কেন এই হামলা চালালো হামাস?

এক. হামাসের মুখপাত্র খালেদ কাদোমি আল-জাজিরাকে বলেছেন, দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো নৃশংসতার জবাবে এই সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে।

দুই. সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মুসলিমদের পবিত্র স্থাপনা আল-আকসা মসজিদ চত্বরে ইহুদিদের অনুপ্রবেশের ঘটনা বেড়েছে। ফিলিস্তিনিরা এ ধরনের অনুপ্রবেশের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। এ নিয়ে আল-আকসায় মুসল্লিদের ওপর বেশ কয়েকবার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী।

হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, ‘আল-আকসার মর্যাদা রক্ষায় আমরা এই যুদ্ধ শুরু করেছি।’

Link copied!