স্থানীয় আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ফিরল সুপ্রিম কোর্টের হাতে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ২, ২০২৫, ০২:০৩ পিএম

স্থানীয় আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ফিরল সুপ্রিম কোর্টের হাতে

ছবি: সংগৃহীত

বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, ছুটি, শৃঙ্খলার মতন বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ নির্বাহী বিভাগের কাছ থেকে ফের সুপ্রিম কোর্টের অধীনে ন্যস্ত করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে হাই কোর্ট।

সেই সঙ্গে তিন মাসের মধ্যে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ স্থানীয় আদালতের (অধস্তন আদালত) নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার এ রায় দিয়েছে।

এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করিম।

রায়ের পর আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “বিচারকদের শৃঙ্খলা, বদলি, ছুটি- সবকিছু ন্যাস্ত থাকবে সুপ্রিম কোর্টের উপরে, মাঝখানে চলে গিয়েছিল রাষ্ট্রপতির উপরে; আজকের এই রায়ের মাধ্যমে পুনরায় সুপ্রিম কোর্টের উপর ন্যস্ত করা হলো। একইসাথে ২০১৭ সালে সাবঅর্ডিনেট বিচার বিভাগীয় অফিসারদের জন্য যে ডিসিপ্লিনারি রুলস করা হয়েছে, এই রুলস অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছে এবং আগামী তিন মাসের মধ্যে সেপারেট জুডিশিয়াল সেক্রেটারিয়েট গঠন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে- রায় প্রাপ্তির দিন থেকে তিন মাসের মধ্যে।

“একটি সার্টিফিকেট দিয়েছেন হাই কোর্ট যে, এটি খুবই সাংবিধানিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- এইজন্য এটি সরাসরি আপিল যেন হয়, সেজন্য সার্টিফিকেট ইস্যু করেছেন। আমি মনে করি এই যে, বিচার বিভাগের স্বাধীনভাবে কাজ করার এবং মাথা উঁচু করার দাঁড়াবার যে ইতিহাস, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গৌরবোজ্জ্বল নতুন যাত্রা।”  

অ্যামিকাস কিউরি শরীফ ভূঁইয়া বলেন, “১১৬ অনুচ্ছেদকে পরবর্তীতে যেভাবে সংশোধন করা হয়েছিল, সেই সংশোধন-সবগুলোকে আজকে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। আপনারা জানেন যে, ১১৬ অনুচ্ছেদ- ১৯৭২ সালের সংবিধানে যেভাবে ছিল, তাতে অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের উপর ন্যস্ত ছিল।

“পরবর্তীতে এটাকে চতুর্থ, পঞ্চম এবং পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংশোধন করে এই কর্তৃত্ব রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়। এবং আরো কিছু সংশোধনী করে রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে এ কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে বলা হয়।

“পঞ্চম সংশোধনীটা আগেই আপিল বিভাগ বাতিল ঘোষণা করেছিলেন। আজকে ১১৬ অনুচ্ছেদের চতুর্থে এবং পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করা হয়। যার ফলে ১১৬ অনুচ্ছেদ ১৯৭২ সালের অবস্থায় ফিরে গেছে। এতে করে অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত হয়েছে।”

গত বছরের ২৫ অগাস্ট ১০ জন আইনজীবীর পক্ষে মূল সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট রুল জারি করে বিদ্যমান সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চায়।

বর্তমান সংবিধানের (সংশোধিত) ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “অধস্তন আদালতের দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে।”

১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, “বিচারকর্ম বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্বে নিযুক্ত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধান সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত থাকবে।”

পরে এ অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনায় বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, ছুটি, শৃঙ্খলা ইত্যাদি নির্বাহী বিভাগের আওতায় চলে আসে। এসব কাজ রাষ্ট্রপতির পক্ষে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ করে থাকে।

মামলাটি বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাই কোর্ট বেঞ্চে শুনানি ও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল। তবে গত ২৪ মার্চ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় বেঞ্চটি ভেঙে যায়। এরপর নতুন বেঞ্চ নির্ধারণের আবেদন করেন রিটকারী আইনজীবী শিশির মনির।

গত ২০ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ রিট আবেদন নিষ্পত্তির জন্য হাই কোর্ট বেঞ্চ গঠন করে দেন। এরপর শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করা হলো।

Link copied!