স্বপ্ন যখন সত্যি, ছেলের সাথে প্রথমবার ঢাকা ঘুরলেন বাবা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ডিসেম্বর ২৫, ২০২২, ০৮:৪৯ পিএম

স্বপ্ন যখন সত্যি, ছেলের সাথে প্রথমবার ঢাকা ঘুরলেন বাবা

সমাবর্তনের ফি জমা দিতে পারেননি। টিউশনির টাকা জমিয়ে রাজধানীতে নিয়ে এসেছিলেন বাবাকে। সহপাঠীদের কাছ থেকে গাউন ধার করে বাবার সাথে ছবি তুলেছেন, এটাই তাঁর বড় পাওয়া। এই ছবি ফেসবুকে তুলে দিয়ে ওসমান লিখেছিলেন, ‘আমাকে গড়ার মূল কারিগর—বাবা, আজ আমার ক্যাম্পাসে। ৫৩তম সমাবর্তন, ঢাবি।’

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে ওসমান ও তাঁর বাবার গল্প উঠে এসেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ ওসমান বাবাকে নিয়ে আসেন রাজধানী ঢাকা দেখাতে।

ওসমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে। ভালো কোনো শার্ট-প্যান্ট কখনো পরতে পারিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর বাড়ি গেলেই বাবা কৌতূহল নিয়ে ঢাকার গল্প শুনতে চাইতেন। তখন থেকেই ভাবতাম, একদিন মা-বাবাকে ঢাকা ঘুরিয়ে দেখাব। আপাতত বাবাকে ঢাকা দেখাতে পেরেছি। চাকরি পেলে একদিন মাকেও নিয়ে আসব।’

নদীভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে দিনমজুরির ফাঁকে ফাঁকে একসময় পাকা কলা বিক্রি করে সংসার চালাতেন বাবা বুলু আকন্দ। সে সময় ওসমানও বসতেন কলার দোকানে। খেতের কাজও করেছেন তিনি। অভাবের সঙ্গে লড়াই করেই হরিখালী উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি উত্তীর্ণ হন। বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজ থেকে এইচএসসিতে তাঁর ফল ছিল ৪ দশমিক ৯০। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।

বুলু আকন্দের শখ ছিল, সদরঘাট দেখবেন। কারণ, ছোটবেলায় রেডিওতে গান শুনেছেন, ‘…সদরঘাটের পান খিলি তারে বানাই খাওয়াতাম।’ সদরঘাট ঘোরা শেষে এরপর একে একে জাতীয় সংসদ ভবন, লালবাগ কেল্লা, চিড়িয়াখানা, বিমানবন্দর, বুয়েট ক্যাম্পাস, হাইকোর্ট ভবনসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখেন বাপ-ছেলে। বাইরে থেকে দেখেন বঙ্গভবন ও গণভবন।

ছেলের পকেটের অবস্থা যে ভালো নয়, বাবা টের পেয়েছিলেন আগেই। রাতেই তিনি ওসমানের হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দেন। আবেগে বাপ-ছেলে দুজনের চোখই ভিজে আসে। পরদিন দুজন পদ্মা সেতু দেখতে বের হন। মাওয়া ঘাটে খান ইলিশ মাছ ভাজা। ২৭ নভেম্বর বাবাকে সঙ্গে নিয়ে বগুড়া ফেরেন ওসমান।

বাবাকে প্রথমবার ঢাকা দেখাতে পেরে ওসমান খুব খুশি। বললেন, ‘আমাকে নিয়ে বাবার অনেক স্বপ্ন। সরকারি চাকরি করে সুন্দর একটা বাড়ি করব। মা-বাবাকে নিয়ে সেই বাড়িতে উঠব। কলার দোকানের বদলে একটা বড় ব্যবসা হবে, বাবার কত স্বপ্ন! বাবাকে ঢাকায় আনতে পেরে আমার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।’

Link copied!