আরাভের বান্ধবী পলাতক কেয়াকেও খুঁজছে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ২০, ২০২৩, ০৮:৩৯ পিএম

আরাভের বান্ধবী পলাতক কেয়াকেও খুঁজছে পুলিশ

দুবাইয়ের জুয়েলারি ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের বান্ধবী সুরাইয়া আক্তার কেয়াকেও খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২০১৮ সালে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খানকে খুন করার পরই ঘটনাস্থল থেকে বান্ধবী কেয়াকে নিয়ে সটকে পড়েন রবিউল ইসলাম। পরে দেশ থেকে পালিয়ে প্রথমে ভারতে যান। সেখানে আরাভ খান নামে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে দুবাইয়ে চলে যান। এখন তিনি দুবাইয়ের বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ী।

পুলিশ সদস্য হত্যা মামলার বিচার এখনো চলছে। আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর এ মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলার বিচার শুরুর আগে থেকেই আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান ও তার বান্ধবী সুরাইয়া আক্তার কেয়া পলাতক। তবে এ মামলায় অন্য ছয় আসামি এখনো কারাগারে আটক রয়েছেন।

কারাগারে আটক আসামিরা হলেন: রহমত উল্লাহ, স্বপন সরকার, মিজান শেখ, আতিক হাসান, সারোয়ার হাসান ও দিদার পাঠান। এই মামলায় রবিউল ছয় নম্বর আসামী। 

সর্বশেষ পলাতক আরাভের অবস্থান দুবাই নিশ্চিত হওয়া গেলেও মামলার আরেক আসামি সুরাইয়া আক্তার কেয়া কোথায় আছেন, তা শনাক্ত করতে পারেনি মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্তকারী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের ধারণা দেশেই রয়েছেন কেয়া। তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন তারা।

তবে কেয়ার বাবা মেহেরপুরের স্বল্প আয়ের একজন কৃষিজীবী। তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তার মেয়ে মেডিকেলে পড়তে ঢাকায় গিয়েছিল। সেখানে ‘আরাভের’ সাথে জড়িয়ে তার মেয়ে ‘অপরাধের জগতে’ জড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ কর্মকর্তা খুনের ঘটনার পর দেশ ছাড়ে।

সম্প্রতি আরব আমিরাতের দুবাইয়ে একটি গয়নার দোকান উদ্বোধন হয়েছে আরাভের। সেটি উদ্বোধন করতে বাংলাদেশ থেকে উড়ে যান ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, অভিনেত্রী ফারদিন দীঘি, ইউটিউবার হিরো আলমসহ বিনোদন জগতের আরও কয়েকজন। আর সেই আয়োজন ঘিরে দেশে শুরু হয় তোলপাড়। এরপরই মামলাটিতে গতি আসে।

বর্তমানে মামলাটি ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফয়সল আতিক বিন কাদেরের আদালতে বিচারাধীন। আলোচিত এ হত্যার বিচার শুরু হলেও সাক্ষ্য গ্রহণ আর এগোয়নি। এ হত্যা মামলার মোট ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে কারোর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়নি। সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৮ জুলাই একমাত্র মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলম খানের আংশিক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। জেরার পর্বও শেষ হয়নি। আগামী ২১ মার্চ সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য মামলাটির দিন ধার্য রয়েছে।

জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধন করার পর ব্যাপক আলোচনায় আসে জুয়েলার্সের মালিক আরাভ খান। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়া ও বিনোদনজগতের অনেক তারকাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দিয়েছিলেন আরাভ খান। তখনই তাকে পুলিশ সদস্য হত্যা মামলার আসামি বলে শনাক্ত করে ফেলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।

গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যমতে, আরাভ জুয়েলার্স নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক আরাভ খানের আসল নাম রবিউল ইসলাম। বাংলাদেশের গোপালগঞ্জে তার বাড়ি। তিনি সোহাগ মোল্লা, হৃদয় শেখ, আপন— এ রকম কয়েকটি নামে পরিচিত।

মামলা ও নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, নারীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করে বিত্তশালীদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া একটি চক্রের কবলে পড়েন মামুন ইমরান খান। এরপর তাকে ধরে নিয়ে হত্যার পর পেট্রোল ঢেলে লাশ পুড়িয়ে গাজীপুরের জঙ্গলে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা।

আট বছরেও শেষ হয়নি অস্ত্র মামলা

২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি রবিউল ইসলাম ওরফে ওরফে হৃদয় ওরফে আরাভ খানের বিরদ্ধে উপপরিদর্শক সুজন কুমার কুণ্ডু বাদী হয়ে রাজধানীর রমনা মডেল থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে একই বছরের ১ মার্চ আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। এ মামলায় ওই বছরের ১০ মে আদালত অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। তবে বিচার শুরু হলেও গত আট বছরে এ মামলার বিচার কাজ শেষ হয়নি। এ মামলায় ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ আরাভ খান জামিন পান। পরে আদালত ওই বছরের ২৪ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। এ মামলায় মোট ২০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ২৮ মার্চ এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

চুরির অভিযোগ কারাগারে ছিলেন আরাভ

২০১৭ সালে জুন মাসে এক বন্ধুর ডিএসএলআর ক্যামেরা চুরির মামলায় কারাগারে গিয়েছিলেন আরাভ খান। মামলাটি হয়েছিল রাজধানীর গুলশান থানায়। সে বছরই গ্রেপ্তার করে জেল খাটেন আরাভ। পরে জামিনে বের হয়ে আসেন। সেই মামলার বিচারকার্য এখনো চলছে। তবে এ মামলায় সাক্ষী না আসায় বিচার কাজ আটকে গেছে। ২০১৮ সালের ৭ মে আদালত আরাভ খানের উপস্থিতিতে এ মামলায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। বিচার শুরুর পর ২০১৯ সালের ১৪ মে আদালত তার জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এ মামলায় ১৬ বার সাক্ষীর প্রতি সমন দেওয়া হয়। তবে ২০১৯ সালের ১৪ মে এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ হয়। তা ছাড়া আর কোনো সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। তবে কোনো সাক্ষী উপস্থিত না হওয়ায় পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১২ জুন ‍দিন ধার্য রয়েছে।

আরাভের আয়নাবাজির মামলা

হত্যা মামলার আসামি আরাভ খান নিজের পরিবর্তে ঢাকায় ক্রিকেটার হতে আসা আবু ইউসুফ লিমন নামের একজনকে আসামি হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করেন। এরপর অন্যের রূপ ধারণ করে জামিনের জন্য আত্মসমর্পণ ও অপরাধে সহায়তার অপরাধে ২০২১ সালের ১ জুন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী এএসএম শাহাদাৎ আলী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে একই বছরের ২৮ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক অনিল চন্দ্র রায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার মহানগর হাকিম আতাউল্লাহের আদালতে বিচার শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে।

সর্বশেষ গত ২৯ জানুয়ারি এ মামলার অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে আসামিপক্ষ সময়ের আবেদন করায় আগামী ১৫ মে অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য করে আদালত। এ মামলার আসামিরা হলেন: মো. আবু ইউসুফ, মো. রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয়, জুবায়ের আহমেদ বাপ্পি, জিএম ফরহাদুল মজুমদার ও এডভোকেট শোহেল মো. ফজলে রাব্বি। এ মামলায় পলাতক আরাভ খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।

Link copied!