এডিস মশা বিস্তারের মূল কারণ নির্মাণাধীন ভবন ও ছাদ বাগান

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ২৬, ২০২১, ০৩:৫৯ এএম

এডিস মশা বিস্তারের মূল কারণ নির্মাণাধীন ভবন ও ছাদ বাগান

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি বৃদ্ধি পাচ্ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। প্রতিদিনই প্রায় সারাদেশে ২০০ থেকে ২৫০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। তার মধ্যে ঢাকাতেই ভর্তি হচ্ছেন ২০০ এর অধিক। শিশু আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যু। জুন-জুলাই মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা কম থাকলেও এই মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮৫৩ জন। তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪০ জনের। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গুর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করবে।

এডিস মশা বৃদ্ধির কারণেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। আর এই এডিস মশা বৃদ্ধির জন্য মূলত দায়ী করা হচ্ছে নির্মাণাধীন ভবন ও ছাদ বাগানকে। বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও শাস্তি প্রদানের পরও এখন পর্যন্ত বিষয়টির সুরাহা হয়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ছাদ বাগান গুলোতে পানি জমে থাকার কারণে এডিস মশা বিস্তার বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন ৫০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ডি এম শামিম। তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, উত্তরার বিভিন্ন বাসা-বাড়ির ছাদে বাগান, টয়লেটের বেসিন ও পরিত্যক্ত কমোড রাখা থাকে। যেগুলোতে বৃষ্টি হওয়ার পর পানি জমে থাকে। এই পানিতেই মশার লার্ভা জন্ম নেয়। এ ছাড়া নির্মাণাধীন ভবনগুলো কোন ধরনের নির্দেশনাই মানছে না। যার ফলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের কার্যক্রম চলমান রেখেছি। তারপর আজকে আমরা মসজিদের ইমাম, বাড়িওয়ালাদের সাথে মিটিং করেছি। তারা যাতে নিজের থেকে সচেতন হয় সেজন্য বার বার আলাপ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি যার বাসা বা ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাবে তাকে জরিমানার আওতায় নেয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রথমদিকে দক্ষিণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি থাকলেও দিনে দিনে তা উত্তরে প্রভাব বিস্তার করছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মিরপুর আর উত্তরা নিবাসী বেশি মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই দুই অঞ্চলকে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল বলে দাবি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

শুধু ছাদ বাগান নয়, অপরিকল্পিত নগরায়ন হওয়ার কারণে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনতে সমস্যা হচ্ছে বলে মনে করেন ১৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মতিউর রহমান। তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, 'আমাদের এলাকাগুলো অপরিকল্পিত। বিভিন্ন বাড়ি ও কন্সট্রাকশন বিল্ডিংগুলো কোন রকম নিয়ম না মেনে নিজেদের মতো স্বেচ্ছায় কাজ করছে। বিভিন্ন বাড়ি ও নির্মাণাধীন ভবনের ভিতরে আমরা লার্ভা পেয়েছি এবং সেগুলোতে আমরা জরিমানা করেছি। এখন প্রয়োজন সকলের সচেতনতা, সকলে সচেতন না হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে যাবে’।

নতুন করে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা মেয়রের নির্দেশে আমাদের ওয়ার্ডে ১০টি কমিটি গঠন করেছি। বাড়ির মালিক, মসজিদের ইমাম ও নির্মাণাধীন ভবনগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর আমরা আমাদের ওয়ার্ডগুলোকে ৫টি ভাগে ভাগ করেছি। এই ৫টি অঞ্চলে আমরা একসাথে মশক নিধন অভিযান চালাবো’।

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হলেও অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানান ১২ নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুরাদ হোসেন। তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, 'আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের অভিযান চলমান রেখেছি, তারপরও এই অঞ্চলে ডেঙ্গুর বিস্তার নিয়ন্ত্রণ হয়নি এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করছি। প্রতিদিন সকাল-বিকাল আমাদের মশক নিধন অভিযান চলে। পাশাপাশি আমরা মাইকিং করা থেকে শুরু করে সকল ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি’।

তবে নির্মাণাধীন ভবনের কারণে ডেঙ্গুর বিস্তার বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, নির্মাণাধীন ভবনগুলোকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। সকল জায়গার নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে আমরা বিশেষ অভিযান চালানোর ব্যবস্থা করছি। নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে বিশেষ অভিযান চালাতে পারলেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

Link copied!