খরচ বাড়ায় হজে যেতে কমছে আগ্রহ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ১০, ২০২৩, ০৫:১৯ পিএম

খরচ বাড়ায় হজে যেতে কমছে আগ্রহ

তৃতীয় বারের মতো বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়ার নিবন্ধনের সময় বাড়াতে হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পেয়ে ১৬ মার্চ পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। হজে যাওয়ার আগ্রহ ক্রমেই নিম্নগামী হচ্ছে তার কারণ হলো হজের খরচ বেড়ে যাওয়া। এ কারণে সময় বাড়িয়ে দেওয়া হলেও নির্ধারিত কোটা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত হজযাত্রী না পাওয়া হজ এজেন্সিগুলো হজ খরচে সরকারের কাছে ভর্তুকি দাবি করছে।

বাংলাদেশ থেকে এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি পর্যায়ে ৯৭ হাজার ১১২ জন, সব মিলিয়ে এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে যেতে পারবেন।

গত ৭ মার্চ দ্বিতীয় দফা সময়সীমার শেষ দিন পর্যন্ত মোট ৫৬ হাজার ৩০১ জন চূড়ান্ত নিবন্ধন করেছেন। তাদের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে ৮ হাজার ৮৮৯ জন এবং বেসরকারি পর্যায়ে ৪৭ হাজার ৪১৮ জন নিবন্ধন করেছেন। এখনো সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৫৫ হাজারের বেশি কোটা খালি আছে।

এখনো এতবেশি কোটা খালি থাকার কারণ হিসেবে হজ খরচ বৃদ্ধিকেই দায়ী করছে হজ এজেন্সি ও হজে যেতে ইচ্ছুকরা।

এবার সরকারি পর্যায়ে খরচ ছয় লাখ ৮৩ হাজার এবং বেসরকারিতে ছয় লাখ ৭২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা বেশি।

কোরবানি, খাবার ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করার পর হজ প্যাকেজের প্রকৃত খরচ দাঁড়াবে ৮ লাখ থেকে সাড়ে ৮ লাখ টাকায়। যেখানে ২০২২ সালে সবমিলিয়ে হজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ ছিল পাঁচ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা।

মূল প্যাকেজে বিমান ভাড়া ৫০ হাজার টাকা বেড়ে দুই লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অথচ ওমরাহ পালনের ক্ষেত্রে বিমান ভাড়া মাত্র এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা।

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সহসভাপতি জহিরুল কবির চৌধুরী বলেন, আগে এই সময়ে আমাদের এজেন্সিগুলো হজযাত্রীদের পদচারণায় মুখর থাকত। এবার আর তেমন নেই। এবার যারা আসছেন তাদের অধিকাংশই চূড়ান্ত নিবন্ধন বাতিল করতে আসছেন।

তিনি জানান, মূলত খরচের কারণেই এবার অনেকে হজে যেতে পারছেন না। এখন যারা হজে যাবেন তারা ২০১৭-১৮ সাল থেকে নিবন্ধন শুরু করেন। তারা যে খরচের হিসাব মাথায় রেখে নিবন্ধন করেছিলেন এখন খরচ তার চেয়ে অনেক বেশি। তাই তাদের সাধ্যের মধ্যে আর নেই।

তাঁর কথা, যেসব কারণে হজের খরচ বেড়েছে তার মধ্যে বিমান ভাড়া, বাসা ভাড়া এবং সৌদি সরকারের শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপ অন্যতম। তবে সরকার কিছু বিষয় শিথিল করলে খরচ কমানো যেত। আমরা সরকারের কাছে বিমান ভাড়া কমানোসহ ভর্তুকি দাবি করেছি।

তিনি বলেন, আমাদের ৪৫ দিন হাজিদের সৌদি আরবে রাখতে হয়। আর তাদের আমরা মসজিদুল হারামের একদম কাছে রাখি। সরকার যদি আট-নয় কিলোমিটার দূরে রাখার অনুমতি দিত এবং সৌদি আরবে অবস্থানের সময় কমাত তাহলে খরচ অনেক কমে যেত। আর কোনো কোনো দেশ ভর্তুকি দেয়। এখন আমরা চাইলেও সেটা করতে পারব না। কারণ সরকার বলে দিয়েছে প্যাকেজের চেয়ে কম নেওয়া যাবে না।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ অনুবিভাগ) মো. মতিউল ইসলাম জানান, এবার হজের খরচ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া। এই কারণে বিমান ভাড়াও বেড়ে গেছে। তার ওপর সৌদি সরকার সেখানে খরচের ওপর শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপ করেছে।

হজ এজেন্সিগুলো বলছে, ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলো তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার মধ্যে হজ পালনের ব্যবস্থা করলেও বাংলাদেশে তার প্রায় দ্বিগুণ। এর জবাবে মতিউল ইসলাম বলেন, তারা কীভাবে করছেন আমার জানা নেই। তবে ভর্তুকি বা বিমান ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত আমরা নিতে পারি না। এটা অর্থ ও বিমান মন্ত্রণালয় নিতে পারে।

তবে জহিরুল কবির চৌধুরী বলেন, এটা এখানেও সম্ভব। তবে সেটা করতে হলে হাজিদের মসজিদুল হারামের একদম কাছে থাকার মানসিকতা বদলাতে হবে। হজের মূল কাজ ঠিক রেখে সেখানে অবস্থানের সময় কমালে খরচ অনেক কমে যাবে। এটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়।

হাবের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে আট লাখ ৭১ হাজার প্রাক-নিবন্ধন করলেও আট লাখ ৪৫৬ জনের সিরিয়াল অনুযায়ী চূড়ান্ত নিবন্ধন হয়েছে। এর মধ্যে তিন লাখ ৪৩ হাজার আগ্রহী আগেই নিবন্ধন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এখনো ৭১ হাজার প্রাক-নিবন্ধনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাকি আছে। চূড়ান্ত নিবন্ধনের সিরিয়াল অনুসারে হজে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। তবে সিরিয়াল উন্মুক্ত করা দেওয়া হলে হয়তো শেষ পর্যন্ত হজের কোটা পূরণ হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয় ১৬ মার্চের পর সেরকম সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে জানা গেছে।

তবে মতিউল ইসলাম আশা করেন শেষ পর্যন্ত কোটা পূরণ হবে। তিনি বলেন, সময় বড়িয়ে দেয়ার পর চূড়ান্ত নিবন্ধন বাড়ছে। তিনি জানান আজ (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত ৭০ হাজারেরও বেশি নিবন্ধন চূড়ান্ত হয়েছে।

জানা গেছে, পাকিস্তানে আনুমানিক হজ প্যাকেজ হবে প্রায় ১০ লাখ পাকিস্তানি রুপি, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪ লাখ টাকা। ভারতের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বছর প্রত্যেক হজ যাত্রীর জন্য এক লাখ রুপি ভর্তুকি দেবে। ভারতীয় মুসলমানদের প্যাকেজ হবে তিন লাখ রুপি, যা বাংলাদেশি চার লাখ টাকার মতো।

Link copied!