নানা দেশে, নানা আয়োজনে বর্ষবরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ১৫, ২০২২, ০১:১৫ এএম

নানা দেশে, নানা আয়োজনে বর্ষবরণ

নানা ধর্মের মানুষ মিলেই আমাদের এই দেশ। ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো সাধারণত একই ধর্মের মানুষেরা পালন করেন। তবে পহেলা বৈশাখ পুরোপুরি ভিন্ন আঙ্গিকে উদযাপিত হয়। আমাদের দেশে সর্বজনীন বড় উৎসব পহেলা বৈশাখ। এ যেন বাঙালির চিরাচরিত ঐতিহ্য। নতুন বছরের আগমনে ধর্ম, বর্ণ, বয়স নির্বিশেষে সকলেই বর্ষবরণের উৎসবে মেতে ওঠে।

উৎসব পালনের ধরণ দিন দিন বদলে যায়। আগে গ্রাম ও মফস্বলে বসতো বৈশাখী মেলা। তাঁতের শাড়ি থেকে কাঠের পুতুল সবই পাওয়া যেত মেলায়। এখনও কোথাও কোথাও বৈশাখী মেলা হয়। কিন্তু খুবই কম। আবার শহরে এই দিনটি একটু অন্যভাবে পালন করা হত। কার্ড, ফুল দিয়ে প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা জানানোর রেওয়াজ ছিল। এখন এই ধরনও কিছুটা বদলেছে। উৎসব-অনুষ্ঠানে রেস্টুরেন্টের খাবার, পোশাক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ছবির কদর এখন বেড়েছে।

কেবল বাংলাদেশই নয়, দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছেও দিনটি বিশেষ উদযাপনের। এর মধ্যে ভারতের কয়েকটি রাজ্য, মিয়ানমার, নেপাল, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনাম অন্যতম।

পৃথিবীর সব দেশে নববর্ষ একই দিনে হয় না। এশিয়ার অনেক দেশেই নববর্ষ আসে এপ্রিলের দিকে। তবে খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদ্‌যাপন করার ক্ষেত্রে দ্বিধা নেই কোথাও।

খ্রিষ্টীয় বছর শুরু হয় রাত ১২টার পর। আনন্দ-উল্লাসের সঙ্গে বছরটা বরণ করে নেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে বহু দেশেই।

ভারত

ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সময় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রচলন শুরু হয়।

কিন্তু তারও বহু বছর আগে থেকে পঞ্জিকা দেখে যেসব দিন আর ক্ষণ উদযাপন হত, সেগুলো এখনো দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে পালন করা দেশটির সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে।

ভারতের কয়েকটি রাজ্যে বৈশাখ মাসের প্রথম দিন নববর্ষ উদযাপন করা হয়। হিন্দু সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, মনিপুর, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিল নাড়ু এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।



ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন নামে পালন হয় বৈশাখের প্রথম দিন:

* পাঞ্জাব- বৈশাখী

* কেরালা- ভিষু

* আসাম- বিহু

* তামিল নাড়ু- পুথান্দু

* উড়িষ্যা- পান সংক্রান্তি

* পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা- পহেলা বৈশাখ

স্পেন

বারোটি আঙুর খেয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়। বারোটি আঙুর বছরের বারো মাসকে নির্দেশ করে। তবে হ্যাঁ, রাত বারোটা বাজার ঠিক এক সেকেন্ড পূর্বে ঐ এক সেকেন্ডের মধ্যেই বারোটি আঙুর মুখে পুরে একসাথে খেয়ে ফেলতে হবে (কষ্টসাধ্য একটি ব্যাপার)। যদি কেউ এই কাজে সফল হয় তাহলে স্পেনের ঐতিহ্য আর বিশ্বাস অনুযায়ী নতুন বছর সেই ব্যক্তির জন্য খুব সাফল্যমন্ডিত হবে।

ভিয়েতনাম

ভিয়েতনামের উত্তরের সংখ্যালঘু জাতি বছরের শেষদিনে প্রতিদিন জল সংগ্রহ করার জলাধারে দলবেঁধে গিয়ে মোমবাতি জ্বেলে মাটিতে মাথা ছুঁইয়ে প্রণাম করে এক কলস জল নিয়ে আসে। এরপর ওই জল দিয়ে বছরের প্রথম দিন রান্না করে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে উৎসর্গ করার পর নিজেরা খায়। বছরের প্রথম দিনে স্যুপ জাতীয় খাবার থাকে না। এছাড়া অনেকে নদী বা পুকুরে কার্প মাছ ছাড়েন।



নেপাল

নেপালেরও রয়েছে নিজের নববর্ষ। বসন্তকালেই তারা নববর্ষের যে উৎসব করে, তা বিসকেট নামে পরিচিত। সাধারণত ১০ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলে এই উৎসব। সারা দেশ আনন্দে মেতে ওঠে। পয়লা জানুয়ারির আগের রাতটিতে নববর্ষের রাত হিসেবে ধরে নেপালেও উদ্‌যাপিত হচ্ছে নববর্ষ। তবে তা এখনো ডালপালা মেলেনি।

ভুটান

ভুটানকে ভূস্বর্গ বললে কেউ অবাক হয় না এখন। সে দেশের প্রকৃতিই জানিয়ে দেয়, এ এক অন্য জগৎ। যদিও ভুটান পর্যটকদের ব্যাপারে কিছুটা উদাসীন। কিন্তু সে দেশে নববর্ষ উদ্‌যাপন করার আলাদা আনন্দ আছে। ভুটানের নববর্ষ ইংরেজি নববর্ষের কাছাকাছি সময়েই হয়।

Link copied!