পলাশী কলোনীর বাসিন্দাদের ‘পানির বোঝা’

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ১২, ২০২২, ০৪:০০ এএম

পলাশী কলোনীর বাসিন্দাদের ‘পানির বোঝা’

নন্দলাল ঠাকুরের বয়স ৮৩ বছর। ৬০ বছর ধরে তিনি বাস করছেন পলাশী কলোনিতে। পাঁচ জনের পরিবার তাঁর। তাদের জন্য দুদিন পরপরই ছুটতে হয় পলাশী বাজারের নিচ থেকে পানি আনতে। এ জন্য তিনি ৫ লিটারের ৫টি বোতল সংগ্রহ করেছেন। সেগুলো ভর্তি করে পানি বয়ে নিয়ে যান নিজেদের ঘরের জন্য। একদিন এই পানির বোঝা না বইলে পরিবারের রান্না-বান্না সব বন্ধ হয়ে যায়।

সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে উপস্থিত আছেন বৃদ্ধ নন্দলাল। আজকেও এসেছেন পানি বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

এই বয়সেও কেনো এতো পরিমাণে পানি টানতে হয় জানতে চাইলে নন্দলাল বললেন, ‘কলোনির পানিতে সব সময় দুর্গন্ধ ছিলো। নতুন লাইন লাগানোর পর তা আর খাওয়ার উপযোগি নেই। এখন এখান থেকে দুদিন পরপর পানি বয়ে নিয়ে যাচ্ছি। পানি না নিলে রান্না-বান্না সব বন্ধ হয়ে যাবে। পাঁচ জনের পরিবারে ২৫ লিটারে দুই দিন যায়। প্রতিদিন আসা তো সম্ভব নয়, তাই দুই দিন পর পর এসে বেশি করে পানি নিয়ে যাই। এই পানির বোঝা বইতে ভাল লাগে না।’



নন্দলালের কথার সত্যতা মিলল কলোনিতে গিয়ে। বিশুদ্ধ পানির যে কি অভাব, সেটি টের পাওয়া গেল এখানে। কলোনির সবারই হাহাকার বিশুদ্ধ পানির জন্য। এলাকাবাসী জানালেন, তাদের কলোনির পানিতে আয়রন বেশি থাকে। বার বার ফুটানোর পরও গন্ধ দূর করা যায় না। ফলে পানি খাওয়া অসম্ভব হয়ে পরে। তাই পলাশীর বাজারের কল থেকে তাদের পানি নিয়ে আসতে হয়। ওয়াসার কোন কার্যকলাপ এখানে তারা কোনোদিন দেখেননি।
 
ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করেন রহমত আলী। তিনি বললেন, ‘ছয় মাস আগে লাইন লাগানো হয়েছিলো। তারপর থেকে পানি লালচে কালার ধারন করেছে। এটা সবাই জানে। কিন্তু সমাধানের কোন ধরনের উদ্যোগ আজ পর্যন্ত কেউ নেয়নি।’

পানির দুর্গন্ধ দূর করার ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা— এমন প্রশ্নে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ হাসিবুর  রহমান নিজের সমস্যার কথা তুলে ধরলেন। তাঁর বাসার পানিই দূর্গন্ধময় বলে জানান তিনি। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, আমরা নতুন লাইন সংযোজন করেছি। তারপর থেকে কিছু লাইনে পানির সমস্যা আরও তীব্র  হয়েছে। আয়রনের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু এলাকাবাসীরা না আমার বাসায়ও পানির অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। গোসলও করা যাচ্ছে না এই পানিতে। ওয়াসাকে আমরা বার বার এইটা জানিয়েছি। এখন ওয়াসা জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিলে হয়তো আমরা কিছুটা পরিত্রাণ পাবো।



শুধু পলাশীর কলোনী নয়, বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা গেছে রাজধানী ফার্মগেটের তেজতুরি পাড়ায়ও। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তেজতুরি পাড়া বড় মসজিদের সামনে দীর্ঘলাইন। বেলা বাড়ে কিন্তু লাইন কমে না। সবাই ২ লিটার, ৫ লিটারের ৪-৫টা বোতল নিয়ে লাইনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছেন। কলের সামনেও রয়েছে ৫-৭ জনের বোতল। এলাকাবাসী জানালেন, প্রায় ৬-৭ মাস ধরে পানিতে ভীষণ দূর্গন্ধ। কোনো ভাবেই এই দুর্গন্ধ দূর করা যায় না। এ পানি খাওয়ার পর অনেকের ডায়রিয়াও হয়েছে। মরে যাওয়ার মতো অবস্থাও হয়েছে কারো কারো। তাই আমরা কষ্ট করে হলেও এখান থেকে পানি বয়ে নিয়ে খাই।

এলাকার বাসিন্ধা জাকারিয়া দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এ পানির লাইন সরাসরি সুয়ারেজ লাইনের সাথে যুক্ত হয়েছে। যার কারণে উৎকট দুর্গন্ধ ও লালচে রঙ হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা চলছে। কাউন্সিলরকে বলার পরও কোন সমাধান হয়নি।



ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামীম হাসান এ বিষয়ে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, এলাকার অনেক জায়গায় পানির গন্ধ আছে। আমরা ওয়াসাকে এ বিষয়ে অবগতও করেছি। ওয়াসার লোকজনও একবার দেখে গেছে। ওয়াসার লোকজন বলতেছে এমনটা হওয়ার কথা নয়। তারা কাল (মঙ্গলবার) আবারও দেখবে যে কোথায় সমস্যা হচ্ছে। আর আমরা ঈদের পর রাস্তার কাজ শুরু করবো। তখন আমরা পুরো বিষয়টা তদারকি করে পানির লাইনগুলো ঠিক করে দেবো।

এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের সাথে কয়েকবার তাঁর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করা হয়নি।

Link copied!