বরিশালে ব্যানার খোলা নিয়ে সংঘর্ষ: সিটি মেয়র ও ইউএনও যা বললেন

ডেস্ক রিপোর্ট

আগস্ট ১৯, ২০২১, ০৯:১১ পিএম

বরিশালে ব্যানার খোলা নিয়ে সংঘর্ষ: সিটি মেয়র ও ইউএনও যা বললেন

বরিশাল নগরের থানা কাউন্সিল (উপজেলা পরিষদ) কম্পাউন্ডে ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করাকে কেন্দ্র করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে হামলা, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর আনসারদের গুলিবর্ষণের ঘটনায় আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।বুধবার (১৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে, এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার  মধ্যরাতেই গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। অপরদিকে, একই রাতে উপজেলা  নির্বাহী কর্মকর্তা তার বক্তব্য গণমাধ্যমে তুলে ধরেছেন।

সিটি  মেয়র বলেন, ‘ঘটনার অবশ্যই জোরালো তদন্ত চাইব এবং অবশ্যই আমরা আইনের আশ্রয় নেব। মেয়র হিসেবে এভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব না। আমি মেয়র হিসেবে তাহলে ব্যর্থ। প্রধানমন্ত্রী আমাকে শপথ পড়িয়েছেন, আমার বাবা আছেন তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে, আমি আমার রেজিগনেশন লেটার দিয়ে দেব।’

অন্যদিকে, সংঘর্ষের ঘটনায় বুধবার মধ্যরাতেই গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে গুলি করার অর্ডার (ডেসপাসের অর্ডার) দেওয়া হয়নি, তবে আমার বাসার সামনে যখন আমাকে ঘিরে ধরা হবে তখন আনসার সদস্যরা তো আমাকে সেভ করার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক।’

বরিশাল মেয়রের বক্তব্য

মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ গণমাধ্যমে বলেন, ‘যে কাজ করতে গিয়ে এই ঘটনা, ওই কাজটি আমাদের নিয়মিত কাজ। এর আগে আমি আমার সংবাদ সম্মেলনে ব্যানার নিয়ে বলেছি, পুরনো ব্যানার বা ভুঁইফোড় সংগঠনের ব্যানারগুলো সরিয়ে ফেলার জন্য। এতে করে শহর পরিষ্কার হবে। আমি আমার নিজের ব্যানারটিও খুলে ফেলেছি।

ধারাবাহিকতা অনুযায়ী পরিষ্কার করতে করতে কর্মীরা থানা কাউন্সিলে গেছে। থানা কাউন্সিলের ভেতরে বিভিন্ন লোকজন, বিভিন্ন ব্যানার দেয়। সিটি করপোরেশনের লোকজন যেখানে কাজ করছিলো সেটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা’র (ইউএনও) বাসা না। ওখানে পুকুর আছে, যেখানে সাধারণ মানুষ গোসল করে, মসজিদ আছে, এছাড়াও অনেক অফিস আছে। ওখান থেকে পেছনে বসবাসকারী মানুষদের যাতায়াতের জন্য রাস্তাও রয়েছে।

সিটি করপোরেশনের কর্মীরা আমাকে জানিয়েছেন, ওখানে কাজ প্রায় শেষের দিকে ছিল, পরিষ্কার করে চলে আসবে সেই সময় ইউএনও সাহেব বের হয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের বলেন, কার কাছে জিজ্ঞাসা করে সেখানে গিয়েছে তারা। কর্মীরা বলেছে, তাদের গালাগালি করা হয়েছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনও সাহেবের বাসায় হামলার অভিযোগ তোলা হয়েছে। কিন্তু ইউএনও’র বাসার গেটের ভেতরে কি ঢুকেছে তারা?। সেখানে আমাদের ১ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন, প্রচার সম্পাদকের সঙ্গে সিনিয়রদের ঘটনা জানার জন্য সেখানে পাঠালাম।

মেয়র আরও বলেন, আমাকে যখন বললো যে গুলি হচ্ছে, তখন বাসায় আমি। সিটি করপোরেশনের সিও, মহানগর আ. লীগের অনেক নেতা উপস্থিত ছিলেন। আমি তাৎক্ষণিক একাই ঘটনাস্থলে চলে যাই। সিও সাহেবও পেছনে পেছনে রওনা দিলেন। যখন ঘটনাস্থলে গিয়ে হেলমেট খুলে কর্মীদের বললাম, তোমরা গেটের বাইরে দাঁড়াও কেউ ভেতরে যেও না। এরপর আমি একা থানা কাউন্সিলের গেট দিয়ে যখন ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম এবং বললাম আমি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র। তারা সে কথা শুনে অনবরত গুলি করা শুরু করল। এরমধ্যে পেছনে যে নেতা-কর্মীরা ছিলো তারা সকলে এসে মানবপ্রাচীর বানিয়ে আমাকে বাহিরে নিয়ে আসলো। তারপর ওখানে থেকে আমার খুবই খারাপ লাগছে, খুবই লজ্জা লাগছে। তাই আমি ওখান থেকে চলে আসছি। চলে আসার পরে শুনলাম আবারো গুলি হয়েছে। আমাদের প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটুকে রেখে আসছিলাম যাতে ওখানে অপ্রীতিকর কিছু না ঘটে।

আমি গুলিবিদ্ধ হয়নি, তবে আমাকে গুলি করা হয়েছে, আর সেগুলো আমার জ্যাকেটের কারণে শরীরের ভেতরে লাগেনি কিন্তু গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছি। আর গুলির সময় নেতা-কর্মীরা সামনে চলে আসায় তাদের গায়েই গুলিগুলো লেগেছে। কতজনের গায়ে লেগেছে তা আমি হিসেব করে বলতে পারবো না। কতজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন সে বিষয়েও এখন কিছু বলতে পারবো না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য

ঘটনার বিবরণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান বলেন, ‘যে অবস্থায় আমি আছি সেখানে বক্তব্য দেওয়ার মতো কোনো অবস্থা নেই। আমার কোভিডে আক্রান্ত বৃদ্ধ বাবা-মা সরকারি বাসভবনের ওপর থেকে দেখছিলেন কী হচ্ছে বাইরে।’

তিনি বলেন, বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ১৫-২০ জনের একটি দল মোটরসাইকেল নিয়ে আমাদের অফিস কম্পাউন্ডের পাশে ঘোরাঘুরি করছিলো। তখন আনসার সদস্যরা আমাকে জানায়, বেশকিছু ছেলে-পেলে আমাদের কম্পাউন্ডে প্রবেশ করেছে। এটা সিকিউর এলাকা তাই স্বাভাবিকভাবেই তারা এটা বলেছে। তখন তাদের আমি চলে যেতে বলার জন্য আনসার সদস্যদের বলি। এরপরপরই জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয় দিয়ে রাজীব নামে এক ব্যক্তি কারো পারমিশন না নিয়ে, কারো তোয়াক্কা না করে আমার বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। আমি নিচে নামার আগেই তাদের ঘরের দরজার সামনে দেখতে পাই।

সে তার পরিচয় দেওয়ার পর আমি বললাম, এতো রাতে কী কারণে এসেছেন এখানে। তখন সে জানায় নির্দেশনা রয়েছে তাই তারা ব্যানার ছিঁড়ছে। তখন আমি বললাম এটা সরকারি কম্পাউন্ড, এখানে সরকারি অফিস-আদালত রয়েছে, আমরা সরকারি অফিসাররা এখানে থাকি। আর এতো রাতে এখানে এগুলো শোভন নয়, কাইন্ডলি আপনারা চলে যান, কালকে যেটা করার করবেন। পার্টির যা সিদ্ধান্ত সেটা পরে বাস্তবায়ন করার অনুরোধ জানালেও সে বের হয়ে যাচ্ছে না, তো যাচ্ছে না। পরে আমি দাঁড়িয়ে থেকে তারা চলে গেলে মেইন গেট আনসার সদস্যদের সহায়তায় আটকে দেই।

ইউএনও বলেন, ‘এরপর আমরা উপরে বাবা মায়ের সঙ্গে বসা। তখন হঠাৎ করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ৬০-৭০ জন লোক এখানে আসে। আনসার সদস্যরা ভয়ে দৌঁড়ে উপরে উঠে এসে আমাকে জানায়, স্যার আপনার বাংলোর মধ্যে ৬০-৭০ জন ঢুকতাছে। তারা যখন আমার বাংলোর সামনে তখন আমি ঘর থেকে বের হয়েছি। তখন একজন আমাকে পরিচয় দিলেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহামুদ হাসান বাবু। তার পাশে বহু লোকজন, সেখান থেকে একজন খুব উচ্চস্বরে আমার বৃদ্ধ বাবা-মায়ের নাম ধরে গালিগালাজ করছিলো। তখন আমি তার কাছে জানতে চেয়েছি ভাই আপনার পরিচয়টা। তিনি তখন তার নাম সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত বলে জানায় এবং বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দাবি করেন। এ সময় তার পাশ থেকে একজন বলছিলো, তুই পরিচয় দিয়ে কি করবি?

ইউএনও বলেন, ‘এক সময় কথা বলতে বলতে যখন আমার পেছন দিকে লোকজন আসতে শুরু করে, তখন আমি বুঝতে পেরেছি যে আমাকে ঘিরে ধরা হচ্ছে। তখন আনসার সদস্যদের ইশারা দিলে তারা আমার কাছে চলে আসে। আনসাররা বাঁশি বাজালেও যখন তারা সরছিলো না তখন আনসার সদস্যরা ফোর্স করছে। তখন যে যার মতো করে দৌড়াইছে। আর তখন আমি নিজে মাহামুদ হাসান বাবুর হাত ধরে ফেলেছিলাম এবং আনসারের হাতে তুলে দেই। তাদের বের করে দিয়ে আমাদের গেট আটকে দিয়েছি। তারপরে দুইশ, তিনশ, চারশ না পাঁচশ আমি জানি না, বহু লোক এসে আমাদের সরকারি গেটটাকে ভেঙে তচনছ করে ভেতর থেকে ঢুকে আমার ঘরের বারান্দা পর্যন্ত চলে আসে। ভাগ্যিস আমার উপজেলার অফিসাররা চলে এসে তাড়াতাড়ি ঘরের দরজা আটকে উপরে নিয়ে যায়। কারণ ওরা নীচতলায় ঘরের ভেতর পর্যন্ত চলে এসেছিলো। যে সিচ্যুয়েশন সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্য দিয়ে না গেলে বোঝা যাবে না।

 

 

Link copied!