ম্যালেরিয়া : শহরে কম তবে পার্বত্য অঞ্চলে রোগী বেশি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ২৫, ২০২২, ১১:৫০ পিএম

ম্যালেরিয়া : শহরে কম তবে পার্বত্য অঞ্চলে রোগী বেশি

বিশ্বের আগেই ম্যালেরিয়া নির্মূলে সাফল্য দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। যদিও মশার যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ জনগণ ডেঙ্গুসহ অন্যান্য রোগের আক্রমণ থেকে মুক্ত হতে পারছে না। তবে তুলনামূলকভাবে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ কম বলে জানায় তারা।

মশার প্রকোপ বাড়লেও ম্যালরিয়া রোগী কম

রাজধানীর মিরপুর, আজিমপুর, মোহাম্মদপুর, জুরাইন, মাতোয়াইল, পুরান ঢাকা সহ অনেক অঞ্চলেই চলছে মশার এই অত্যাচার। জুরাইনের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, দুই দিনের বৃষ্টিতে ড্রেনের পানি জমাট হয়ে রাস্তায় চলে আসছে। পাশাপাশি বাড়ছে মশা। মশার অত্যাচারে রাতে ঘুমানো মশকিল হয়ে যাচ্ছে। মশা মারারও কোন ধরনের পদক্ষেপ আমরা দেখছি না। 

একই অভিযোগ করেন আজিমপুরের বাসিন্দা সাহিদা খানম। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, সামনে বাচ্চার পরীক্ষা। কিন্তু মশার কারণে ঠিকমত পরাশুনা করতে পারে না। জানালা খুললেই মশার উত্তাপ বেড়ে যায়। গরমে জানালা না খুলেও থাকা যায় না।

তবে মশা বাড়লেও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ এখনো বাড়ে নেই। রাজধানী মিটফোর্ড হাসাপাাতালের বর্হিবিভাগের ৭ম তলায় গত বছর ডেডিকেটেড ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু রোগীদের জন্য স্পেশাল ওয়ার্ড করা হয়েছিলো। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রোগী না থাকার কারণে ওয়ার্ডটি বাতিল করা হয়েছে। এখন সেখানে নরমাল রোগীরাই ভর্তি হচ্ছেন। দুই একজন রোগী আসলে তাদের মেডিসিন বিভাগেই ভর্তি করা হচ্ছে। 

মেডিসিন বিভাগে গিয়েও কোন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগী খুঁজে পাওয়া যায় নেই। এ বিষয়ে মেডিসিন বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো মোস্তাফিজুর রহমান দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, আমরা এখনো সেভাবে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগী পাচ্ছি না। অনেকে জ্বর-ঠান্ডা নিয়ে আসে। তবে কারো মধ্যেই ম্যালেরিয়া হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। সপ্তাহ দুই-একের মাঝামাঝি দুই জন রোগী ভর্তি হয়েছিলো। তারাও সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছে। এর পর আর কাউকে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত পাওয়া যায় নেই।

পার্বত্য অঞ্চলে ম্যালেরিয়া বেশি

বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৬টি জেলার ৭২টি উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ রয়েছে। আর তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, এবং বান্দরবানে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুহার সর্বাধিক। এই তিন জেলাকে উচ্চ ম্যালেরিয়া প্রবণ অঞ্চল হিসেবে গণ্য করা হয়। দেশের মোট ম্যালেরিয়া রোগীদের মধ্যে ৯৪ শতাংশই এ তিন জেলায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ২০০৮ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ম্যালেরিয়াজনিত অসুস্থতা শতকরা ৯৪ ভাগ, মৃত্যু শতকরা ৯৩ ভাগ কমেছে। মোট ম্যালেরিয়া রোগীর ৯৪ শতাংশই তিন পার্বত্য জেলায়। ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলের আটটি জেলায় ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা মাত্র ১০ শতাংশ। আশা করা যাচ্ছে, এসব জেলায় ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।পুরো বিশ্ব ম্যালেরিয়ামুক্ত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ২০৫০ সালে। বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০৩০ সালে।

প্রতিষ্ঠানটি আরও জানিয়েছে, গ্লোবাল ফান্ড টু ফাইট এইডস, টিবি অ্যান্ড ম্যালেরিয়া (জিএফএটিএম)-এর আর্থিক সহায়তা বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া কার্যক্রমকে আরও সম্প্রসারিত, শক্তিশালী ও গতিশীল করেছে। বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া নির্মূলের জন্য জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কার্যক্রমের সঙ্গে ব্র্যাকসহ চারটি এনজিওর সমন্বয়ে গঠিত একটি কনসোর্টিয়াম যৌথ অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কাজ করছে।

২০২১ সালে বাংলাদেশ মোট ম্যালেরিয়া রোগী ছিল সাত হাজার ২৯৪ জন। আর এ বছর নয়জন ম্যালেরিয়া রোগী মারা গেছেন বলেও জানানো হয় অনুষ্ঠানে। ম্যালেরিয়ার উচ্চ হার থাকা অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় ম্যালেরিয়া সেবা বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

Link copied!