রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারকে সহায়তার আশ্বাস দিল বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

জুন ১২, ২০২৩, ০৪:৪৫ এএম

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারকে সহায়তার আশ্বাস দিল বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখো রোহিঙ্গাদের সে দেশে ফেরত পাঠাতে সরকারের যেকোনো পদক্ষেপে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছে চীন, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা।

রবিবার (১১ জুন) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সাথে সরকারের বৈঠকে তারা এই আশ্বাস দেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া যেকোনো পদক্ষেপে তারা সহায়তা করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে দ্রুত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও তাদের স্থায়ী প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে।

মুখ্য সচিব বলেন, এই সংকটের একমাত্র সমাধান রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের মাতৃভূমিতে মর্যাদাপূর্ণ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, স্থানীয়দের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের একীভূত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

তোফাজ্জেল হোসেন বাস্তুচ্যুত এসব মানুষের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র তৈরিতে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী দূত ও প্রতিনিধিদের সহযোগিতা কামনা করেন।
ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক ও খাদ্য সহায়তার জন্য বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং অন্যান্য দাতা সংস্থার বরাদ্দ হ্রাসের বিষয়টি তুলে ধরেন এবং সহায়তার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

বৈঠকে সৌদি আরব, ইরান, ফিলিস্তিন, তুরস্ক, কাতার, কুয়েত ও চীনের রাষ্ট্রদূতগণ নিজ নিজ দেশের অবস্থান তুলে ধরেন এবং রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের যেকোনো উদ্যোগের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাসুদ বিন মোমেন, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মুস্তাফিজুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব কামরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।

সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসেফ ইসা আলদুহাইলান, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলী আবদুল্লাহ খাসেফ আল হামাউদি, কাতারের রাষ্ট্রদূত সেরায়া আলী আল-কাহতানি, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেন, কুয়েতের রাষ্ট্রদূত আলী আহমেদ ইব্রাহিম আল-ধুফাইরি, ওমানের রাষ্ট্রদূত আবদুল গাফফার আল-বুলুশি, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ এস. ওয়াই. রমাদান, ইরানের রাষ্ট্রদূত মনসুর চাভোশি, ইরাক দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মোহানাদ এ. আর. খালাফ আল-দাররাজি, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গুয়েন লুইস, বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধি জোহানেস ফন ডের ক্লাউ এবং বাংলাদেশে ডব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডম স্কাল্পসহ অন্যান্যরা বৈঠকে অংশ নেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করলে  সীমান্ত অতিক্রম করে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়৷  এর আগে থেকেই কক্সবাজারে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছিল। সবমিলিয়ে বর্তমানে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের নিয়ে সেংকটে পড়েছে সরকার। তাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপে মিয়ানমার প্রতিশ্রুতি দিলেও একজন রোহিঙ্গাকেও তারা ফেরত নেয়নি।  

Link copied!