স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যানসারে আক্রান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ৩১, ২০২২, ১১:৩২ পিএম

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যানসারে আক্রান্ত

সময়ে সময়ে সরকারের দেওয়া নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হলে পৌরসভার মেয়রকে অপসারণ করে প্রশাসক বসানোর বিধান রেখে ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) বিল-২০২২’ পাস হয়েছে। তবে এই বিলের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপি’র সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যানসারে আক্রান্ত’ বলেও মন্তব্য করেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্যরাও প্রশাসক বসানোর বিধানের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, এটা সংবিধান বিরোধী। 

বৃহস্পতিবার সংসদের বৈঠকে বিলটি পাসের জন্য উত্থাপন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগের বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করা হয়।

বিদ্যমান আইনে নতুন পৌরসভা গঠনের পর প্রশাসক বসানোর সুযোগ ছিল। নতুন আইনে মেয়াদোত্তীর্ণ পৌরসভায় প্রশাসক বসানো এবং সরকার চাইলে যে কোনো ব্যক্তিকে এই পদে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।  

বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) ও বিএনপি দলীয় সদস্যরা প্রশাসক বসানোর বিধানের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তারা বলেন, এটা সংবিধান বিরোধী। কারণ সংবিধানে সর্বস্তরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কথা বলা রয়েছে। বর্তমান সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিরোধিতা করলেও এখানে কেন অনির্বাচিত ব্যক্তিকে বসানো হবে এই প্রশ্ন তোলেন বিরোধী সদস্যরা। এই আইন পাসের প্রতিবাদে বিএনপি দলীয় সদস্য হারুনুর রশীদ কিছু সময়ের জন্য সংসদের বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করেন।

বিলটি নিয়ে আলোচনার সময় বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, “স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যানসারে আক্রান্ত। স্থানীয় সরকারগুলোর একটি বিরাট অংশের প্রতিনিধি বিনাভোটে নির্বাচিত, বিরাট অংশ প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে নির্বাচিত।” স্বাধীনতার ৫০ বছর পর মানুষ এমন স্থানীয় সরকার আশা করেনি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সাংসদ হারুনুর রশীদ আরও বলেন, “সংবিধানে সকল পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কথা বলা আছে।” বিলটিকে  বাকশালী পদ্ধতি চালুর চেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি। হারুনুর রশীদ বলেন, “জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এখন আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচি পালন করছে। জনগণকে সেখানে অংশ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। ভিন্নমতের কেউ সেখানে না গেলে তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে, এই উদ্দেশ্যে এই আইন করা হচ্ছে।”

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “সংবিধানে বলা হয়েছে নির্বাচিত ব্যক্তিদের দ্বারা স্থানীয় সরকার পরিচালিত হবে। প্রশাসক নিয়োগের বিধান সংবিধানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। নতুন পৌরসভা গঠনের পর প্রথমবার নির্বাচনের আগে একজন প্রসাশক নিয়োগ করা যেতে পারে, সেটা জরুরি প্রয়োজনে।  আমলাতন্ত্র দিয়েই যদি কাজ হতো তাহলে স্থানীয় সরকারের কোনো প্রয়োজন ছিল না।”

জাপার পীর ফজলুর রহমান বলেন, “যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকার কথা সেখানে অনির্বাচিত কেউ বসতে পারবেন না। এটা সংবিধানের স্পিরিট। তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনির্বাচিত সরকার এ কারণে এটা রাখা হয়নি। সেখানে কেন স্থানীয় সরকারে অনির্বাচিত ব্যক্তিকে বসানো হবে। এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।” 

জবাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, “জনগণ, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন জনের মতামত নিয়ে আইনে সংশোধনী আনা হচ্ছে। প্রশাসক নিয়োগের বিধান রাখার বিষয়টি যৌক্তিক। বিভিন্ন কারণে অনেক সময় নির্বাচন করা নিয়ে আইনগত জটিলতা তৈরি হয়। অনেকে এর সুযোগ নিয়ে থাকেন।”

Link copied!