জানুয়ারি ২২, ২০২২, ০৭:০০ পিএম
জমি দলিল করে না দেওয়ায় নিজের মাকে শ্বাসরোধে খুন করেন দুই ছেলে। ময়নাতদন্তে প্রতিবেদনে তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যার প্রমাণ মিলেছে। এ ঘটনায় ফুলজান ভানু নামে ওই মায়ের এক ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ওই ছেলে। এমনই ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলায়।
স্থানীয় সূত্র জা্নায়, ফুলজান ভানু উপজেলার পাচু মাতবরকান্দি গ্রামের মৃত আবদুল গফুর সিকদারের স্ত্রী। এ দম্পতির ১০ ছেলেমেয়ে। মাকে হত্যার অভিযোগে ছেলে হাবিবুর রহমান সিকদারকে (৪৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হত্যার সঙ্গে জড়িত আরেক ছেলে সেলিম সিকদার পলাতক রয়েছে।
জাজিরা থানা সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর জাজিরার পাচু মাতবরকান্দি গ্রামে স্ত্রী ফুলজান ভানুর মরদেহ বাড়ির পাশের একটি গাছ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। ওই সময় পরিবারের পক্ষ থেকে ফুলজান আত্মহত্যা করেছেন বলে জানানো হয়। পুলিশ মরদেহের ময়নাতদন্ত করে ভিসেরার রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। পরে পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে।
পরবর্তীতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফলে ওই নারীকে শ্বাসরোধে হত্যার প্রমাণ পাওয়া যায়। গত বৃহস্পতিবার ওই প্রতিবেদন হাতে পান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে অপমৃত্যুর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়।
পুলিশ শুক্রবার সকালে স্থানীয় কাজিরহাট বাজার থেকে ওই নারীর ছেলে হাবিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, আরেক ভাই সেলিম সিকদারের সহায়তায় তাঁরা মাকে হত্যা করেন। ওই দিন শরীয়তপুর আদালতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন হাবিবুর রহমান সিকদার। পরে তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
জবানবন্দির তথ্যের বরাত দিয়ে জাজিরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইকরাম হোসেন বলেন, ফুলজান ভানুকে তাঁর ছেলে হাবিবুর রহমান ও সেলিম সিকদার শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন। হাবিবুরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ি জমিজমার বণ্টন নিয়ে ভাই-বোনদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। ২৫ নভেম্বর রাতে সেলিম সিকদার ও হাবিবুর রহমান সিকদার তাঁদের নামে জমি লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দিলে অস্বীকৃতি জানান। ক্ষোভে দুই ভাই মায়ের গলা টিপে ধরেন। এতে শ্বাস বন্ধ হয়ে মা ফুলজান ভানু মারা যান। পরে বাড়ির পাশে একটি আমগাছে মরদেহ রশি দিয়ে ঝুলিয়ে দেন। পরের দিন তাঁদের মা আত্মহত্যা করেছেন, এমন প্রচারণা চালান তাঁরা।
ফুলজান ভানুর মেয়ে রুবিনা আক্তার গণমাধ্যমে বলেন, “আমরা ১০ ভাইবোন। বসতভিটা ছাড়াও চাষের ৮ বিঘা জমি রয়েছে। হাবিব ও সেলিম সব জমি চাষাবাদ ও ভোগদখল করত। ওই জমি বণ্টনের জন্য ২৮ নভেম্বর তারিখ নির্ধারণ ছিল। কিন্তু দুই দিন আগে মায়ের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। বিশ্বাসই করতে পারিনি তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তদন্ত করে পুলিশ বলছে, আমার দুই ভাই মাকে হত্যা করেছে। হাবিব ভাই আদালতে এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছে। যারা আমার মায়ের হত্যায় জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান গণমাধ্যমে বলেন, “মাকে হত্যা করার কথা এক ছেলে আদালতে স্বীকার করেছেন। তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরেকজনের নাম বলেছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাঁর বক্তব্য পেলে এ বিষয়ে আরও পরিষ্কার হওয়া যাবে।”