মে ২, ২০২৩, ০২:১১ পিএম
পথের পাঁচালী উপন্যাসটি পড়ে ফেলি সেই ছোটবেলাতেই। এরকম একটি ধ্রুপদী উপন্যাস পড়ার মুগ্ধতা তো ছিলই, ছিল ব্স্মিয়ও। বিস্ময়ের কারণ, আমার নিজেরও বেড়ে উঠা বাংলার নিভৃত এক পল্লীতে। পথের পাঁচালীর আখ্যানও এই পল্লীর প্রান্তর ঘিরেই। পড়তে গিয়ে আমি প্রতিটি মূহুর্তে উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র অপু ও দুর্গার বিচরণ ক্ষেত্র সেই নিভৃত পল্লী নিশ্চিন্দিপুরের পথ-ঘাট-প্রান্তরে নিজেকেও আবিস্কার করেছি। যেন আমিও অপু-দুর্গার সাথে বাঁশ বাগানে ঘুরছি। কাশফুলের মেলায় কিংবা ফসলের মাঠের আলে খেলছি। মেঠোপথ ধরে হাঁটছি। দূরের গ্রামের ট্রেন দেখার জন্য ছুটছি। মুষলধারে বৃষ্টিতে আমবাগান আর বাঁশবাগানে ভিজছি।
উপন্যাসে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রামবাংলাকে এতটাই বিস্তৃত এবং সুক্ষভাবে তুলে ধরেছেন যে, এটিকে গ্রামীণ জীবন বর্ণনাকারী সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্মগুলির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে নিশ্চিন্দিপুর নামের বাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের শিশু অপু ও তাঁর পরিবারের জীবনযাত্রার কথাই পথের পাঁচালীর মুখ্য বিষয়। অপুর বাবা স্বল্প আয়ের পুরোহিত হরিহর রায় কায়ক্লেশে চলেন, তবে সততা বিসর্জন দেন না। তিনি বসবাস করেন গ্রামটির ভাঙাচোরা এক বাড়িতে। তার আয়ে সংসার চালানো কঠিন। তাই তিনি বহু দূরের গ্রামে চলে যান ভাগ্যান্বেষণে। পরে যখন দীর্ঘ বিরতির পর সামান্য টাকাকড়ি নিয়ে বাড়ি ফেরেন, তখন আনন্দের হাট বসে তাঁর পরিবারে। এভাবে একবার দীর্ঘ বিরতির পর হরিহর যখন বাড়ি ফেরেন, তাঁর কিশোরী মেয়ে দুর্গা ততদিন মারা গেছে জ্বরে ভুগে। তখন হৃদয় বিদারক এক পরিবেশের সৃষ্টি হয় হরিহরের নিকষ আঁধারে ঢাকা ভাঙা পোড়োবাড়িতে।
সত্যজিৎ রায় পথের পাঁচালীর দৃশ্যধারণে নিমগ্ন। ছবি: সংগৃহীত
এক সময় নানা স্মৃতিঘেরা ওই গ্রামটিও ছেড়ে চলে যান হরিহর। তাঁর এই বিদায় যেন শুধু বিদায় নয়, অপুর জন্য একটি পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার সমান। কারণ এই গ্রামটিতেই যে তাঁর তাবৎ স্মৃতি, প্রিয় বোনটির সাথে বেড়ে উঠা, খুনসুটির কতই না স্মৃতি। সবই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই গ্রামে। পাঠক যখন উপন্যাসের শেষ ক’লাইন পড়েন, দৃশ্যটি নিজের মনে কল্পনা করেন, তাঁর হৃদয়ও অপুর মতো অসীম বেদনায় হাহাকার করে উঠে।
পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র অপু। ব্যক্তি বিভূতিভূষণের সার্থক প্রতিচিত্রই কেবল নয়, অপু যেন আমাদের সকলেরই বাল্যসংস্করণ। উপন্যাসের প্রাণপ্রতিষ্ঠা পায় অপুর মাধ্যমে।
এমন একটি উপন্যাসকে উপজীব্য করে সিনেমা বানানো বড় এক চ্যালেঞ্জের বিষয়। আমি এ জীবনে বহু সিনেমা দেখেছি। যদিও আমি সিনেবোদ্ধা নই, তবে সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, উপন্যাস থেকে সিনেমা বানাতে গিয়ে বিশ্বের অনেক পরিচালকই সফল হননি। কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের ক্ষেত্রে বলতে গেলে বলা যায়, তিনি এ ক্ষেত্রে দারুণভাবে সফল হয়েছেন। উপন্যাসটি যেহেতু আগেই পড়া, সেই হিসেবে খুতখুতে একটি মন নিয়েই সিনেমাটি প্রথমবার দেখতে বসেছিলাম। খুব সম্ভবত সেটি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই। পথের পাঁচালী চলচ্চিত্র দর্শনের সেই অভিজ্ঞতা তরুণ আমাকে বিমুগ্ধ করেছিল। যে কারণে এখনো আমি চলচ্চিত্রটি অপার বিস্ময় নিয়ে দেখি আর একজন বিস্ময়কর পরিচালকের মনোজগত নিয়ে ভাবনায় ডুবি। প্রতিবার সিনেমাটি দেখার সময় চোখে জল জমে, এর অন্যথা হয়নি কখনো।
উপন্যাসটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন ১৯২৫ সাল থেকে ১৯২৮ সাল নাগাদ। আর সত্যজিৎ রায় এই উপন্যাসকে ভিত্তি ধরে সিনেমা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দুই যুগ পর ১৯৫৫ সালে। আগেই বলেছি, উপন্যাসকে ভিত্তি করে সিনেমা তৈরি অত্যন্ত কঠিন একটি চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে ষোলোআনা সফল হয়েছিলেন সত্যজিৎ। তিনি সিনেমাটি তৈরি করতে যে শ্রম আর প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন, তা নিয়েও অনেকগুলো সিনেমা তৈরি করা যাবে। কিছু চলচ্চিত্র তৈরিও হয়েছে।
পথের পাঁচালী বদলে দিয়েছিল তৎকালের সিনেমার ধারনাও। ছবি: সংগৃহীত
সত্যজিতের পথের পাঁচালী শুধু বাংলা চলচ্চিত্রই নয়, বিশ্বচলচ্চিত্রের পুরো কাঠামো বদলের পথ দেখিয়েছে। সত্যজিৎ রায়ের কুশলী পরিচালনায় উপন্যাসটি সেলুলয়েডের মাধ্যমে রূপালি পর্দায় নবজন্ম লাভ করে। ছবিটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমাদৃত প্রথম দক্ষিণ এশীয় চলচ্চিত্রের মর্যাদা লাভ করে, যা পরবর্তীতে পরিণত হয় সর্বকালের অন্যতম মাস্টারপিস বা সেরা চলচ্চিত্রে। সিনেমাটিতে চিরায়ত বাংলার অপরূপ আনন্দ-বেদনার আখ্যানে যে উপন্যাস রচনা করেন বিভূতিভূষণ, সত্যজিৎ সেলুলয়েডের মাধ্যমে তাকেই নান্দনিক সুষমায় ফুটিয়ে তোলেন।
এই সিনেমায় হরিহর রায়, যিনি কিনা খুব ভালো ব্রাহ্মণ নন, নিশ্চিন্দিপুর গ্রামে খুব কষ্টেসৃষ্টে বসবাস করতে থাকেন। হরিহর রায়ের দূর সম্পর্কের আত্মীয় ইন্দিরা ঠাকুর এসে হরিহরের বাড়িতে আশ্রয় নেন। তিনি এক বৃদ্ধ বিধবা, যার দেখাশোনা করার জন্য কেউ ছিল না। কিন্তু হরিহরের স্ত্রী সর্বজয়া ছিল একজন বদমেজাজী মহিলা, যিনি ইন্দিরাকে সহ্য করতে পারেন না। তাই বৃদ্ধাকে বসবাসের জন্য একটি কুঁড়েঘর দেওয়া হয়। তবে সর্বজয়ার ছয় বছরের মেয়ে দুর্গা, ইন্দিরা ঠাকুরকে খুব ভালোবাসে এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁর সাথে বসে রূপকথা শুনে। এসব দৃশ্য সত্যজিৎ রায় এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে, উপন্যাসের পাঠকদের ভাবনার জগৎ একেবারে এলোমেলো করে দেয়। পথের পাঁচালী উপন্যাসের পাঠক এবং পথের পাঁচালী সিনেমার দর্শক যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যান।
মা সর্বজয়া, বাবা হরিহরের সাথে পুত্র অপু। ছবি: সংগৃহীত
হরিহর-সর্বজয়া দম্পতির শিশুপুত্র অপু, কিশোরকন্যা দুর্গা প্রকৃতির সৌন্দর্য ও রহস্যের প্রতি অপার কৌতূহলী ও সংবেদনশীল দুটি চরিত্র। অপু ও তাঁর বোন দুর্গা সর্বদা নতুন নতুন দুঃসাহসিক কাজ, যেমন: জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো, আদিবাসী খেলায় অংশগ্রহণ এবং গোপনে ফুল ও ফল পাড়া প্রভৃতির জন্য বাইরে ঘুরতে বের হয়। গ্রাম্য উৎসব, মেলা, যাত্রা ইত্যাদি গ্রাম্য জীবনের একচেটিয়া প্রবাহে বৈচিত্র্য ও রোমাঞ্চ অপু-দুর্গাকে ভাসিয়ে নেয়। অস্থির কিন্তু পুরোপুরি নির্দোষ মেয়ে দুর্গা হঠাৎ করে মারা যায় জ্বরে, যা পুরো পরিবারকে শোকে ডুবিয়ে দেয় এবং তাঁর ছোটো ভাইকে একা করে দেয়। হরিহর দীর্ঘ সময়ের জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে যায় ও জীবিকা অর্জনের জন্য মরিয়া হয়ে সংগ্রাম করতে থাকে। বাড়ি ফেরার পর হরিহর নিশ্চিন্দিপুর ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তারা সব গোছগাছ করে রেলওয়ে স্টেশনে যায়। ট্রেন ছাড়লে তারা ট্রেনে উঠে এবং তাদের সুখ-দুঃখের সকল স্মৃতি চিরকালের মতো পেছনে রেখে যায়।
হরিহর যেন আমাদেরই নিম্নবিত্ত বা নিম্নমধ্য বিত্তের এক প্রতীকী চরিত্র। হরিহরের মাঝেই যেন আমরা আমাদের বাপ-চাচাদের দেখতে পাই। সৎ জীবীকার জন্য কঠোর পরিশ্রমী এক মুখ এই হরিহর। তাঁর স্ত্রী অভাবে পড়ে মেজাজ বিগড়ানো নারীতে রূপ নিয়েছেন, ঝগড়াটে এই চরিত্রও আমাদের গ্রামবাঙলারই এক মুখ। সিনেমায় এসব চরিত্র অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সত্যজিৎ। কিছু দৃশ্য বর্ননায় তিনি উপন্যাসের উপর কলম চালিয়েছেন। তাতে বরং ঘটনাটির মহিমা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন: উপন্যাসের একটি ঘটনা ছিল, ইন্দির ঠাকরুণের মৃত্যু। ইন্দির মারা যান প্রতিবেশীর বাড়ির মণ্ডপে। সিনেমায় সত্যজিৎ দেখিয়েছেন বাঁশ বাগানের মাঝে মরে পড়ে আছেন ইন্দির। অপু ও দূর্গা তাঁকে আবিস্কার করে। সত্যজিৎ চেয়েছেন, অপু-দুর্গা কাছ থেকে দেখবে ইন্দিরকে, সেটিই অপুর প্রথম কাছের মানুষের মৃত্যু অভিজ্ঞতা। এই ক্যামেস্ট্রি দর্শকমনে নিদারুণ হাহাকার তোলে।
পথের পাঁচালীর ট্রাজিক চরিত্র দুর্গা। ছবি: সংগৃহীত
ইন্দির ঠাকুরণ অসাধারণ অভিনয় করেছেন ওই দৃশ্যে। সত্যজিতের নিজের ইম্প্রোভাইজেশন পুরো এই দৃশ্যটি। তাঁর কাছে মনে হয়েছে, বাঁশ বাগানের মাঝে, অপু আর দূর্গা তাঁর মৃতদেহ আবিষ্কার করাটা অন্যরকম একটি মাত্রা নিয়ে আসবে এবং তিনি যে সঠিক ছিলেন, তা আমরা সিনেমাটির ওই দৃশ্যে দেখে নতুন করে আবিস্কার করি। এরকম বহু দৃশ্য বর্ননায় সত্যজিৎ ইম্প্রোভাইজেশনের আশ্রয় নিয়েছেন এবং সফল হয়েছেন।
পথের পাঁচালীর কেন্দ্রীয় চরিত্র অপু। ছবি: সংগৃহীত
‘পথের পাঁচালী’তে বিখ্যাত অনেক দৃশ্য কলমের তুলিতে এঁকেছেন বিভূতিভূষণ। সত্যজিৎ সেই নিরিখে সেলুলয়েডে তুলে এনেছেন অপু-দূর্গার প্রথম রেল দর্শন, দূর্গার চুরি করা মালাটা অপুর দেখতে পাওয়া এবং পানা-পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে সত্যটাকে মহাকালের অতলে ডুবিয়ে দেওয়া, ভিটে ছেড়ে যাবার পর ঘরের ভেতর সাপের ঢুকে যাওয়া, দূর্গার জন্য বাবার শাড়ি নিয়ে আসার মতোন হৃদয় তোলপাড় করা দৃশ্যাবলী।
ইন্দির ঠাকরুন ও দুর্গা। ছবি: সংগৃহীত
সিনেমার আবহ সঙ্গীত যে বড় একটি ফ্যাক্টর বা নিয়ামক, সত্যজিৎ সেই সত্যটিও এই সিনেমায় প্রমাণ করেছেন। চলচ্চিত্রটির আবহ সঙ্গীত করেছিলেন বিশ্ববন্দিত সেতার বাদক রবিশঙ্কর। তিনি সে সময়ে তাঁর কর্মজীবনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে ছিলেন। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাগ ব্যবহার করে এই চলচ্চিত্রের সঙ্গীতাবহ তৈরি করা হয়েছিল, যার অধিকাংশই সেতার ব্যবহার করে করা হয়েছিল। এই চলচ্চিত্রের সঙ্গীত সম্পর্কে দ্য ভিলেজ ভয়েস-এর একটি সংখ্যায় বলা হয়েছিল, 'একই সাথে শোকপূর্ণ ও উল্লসিত' এবং এটি দ্য গার্ডিয়ান-এর ২০০৭ সালের ৫০ সেরা চলচ্চিত্রের সঙ্গীত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। এই আবহ সঙ্গীত দ্য বিটলস, বিশেষ করে জর্জ হ্যারিসনকেও প্রভাবিত করেছিল।
স্বামী হরিহরের কাছে কন্যা দুর্গার মৃত্যু সংবাদ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন সর্বজয়া। ছবি: সংগৃহীত
গ্রামীণ জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাতে গড়ে ওঠা ‘পথের পাঁচালীর’ কাহিনী সত্যজিতের হাত ধরে পেয়েছে নতুন মাত্রা, যা আজ অবধি মানুষের মনে দাগ কেটে যায়।
অথচ এই সিনেমাটি ছিল সত্যজিৎ রায়ের প্রথম সিনেমা। তিনি যখন এই সিনেমাটি বানাবেন বলে স্থির করেন, সেটি ১৯৫০ সালের কথা, ততদিনে বিভূতভূষণ গত হয়েছেন। তাঁর সদ্য বিধবা হওয়া স্ত্রীর কাছে সত্যজিৎ রায় ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাস নিয়ে সিনেমা বানাতে চাইলে তিনি মানা করেননি বরং বিভূতিভূষণের মনে সবসময়ের এ ধরনের একটা ভাবনা ছিল বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
ইন্দির ঠাকরুনের চরিত্রে চুনীবালা দেবী দুর্দান্ত অভিনয় করেন। ছবি: সংগৃহীত
এরপরই সত্যজিৎ রায় সিনেমাটির চরিত্রগুলোর জন্য অভিনয় শিল্পী খুঁজতে শুরু করেন। ‘খুঁজতে শুরু করেন’ না বলে অভিযানে নামেন বললেই যুক্তিযুক্ত হয়। অপুর বাবা হরিহরের চরিত্রের জন্য মঞ্চনাটকের কানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঠিক করা হয়। অপুর চরিত্রের জন্য পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন দিতে হয়েছিল। তারপরও মন মতো কাউকে পাননি সত্যজিৎ। অবশেষে বিজয়া রায় তাঁর বাসার পাশের ছাদে সুবীর ব্যানার্জিকে খেলতে দেখেন, এভাবেই অপুর চরিত্রের জন্য তাকে ঠিক করা হয়। দূর্গার চরিত্রের জন্য উমা দাশগুপ্তকে খুঁজে পান এক বন্ধুর মাধ্যমেই।
অপুর মায়ের চরিত্র, সর্বজায়ার চরিত্রের জন্য সত্যজিতের এক বন্ধু তাঁর স্ত্রীর নাম প্রস্তাব করেন, করুনা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু করুনা মঞ্চ নাটকে কাজ করলেও সিনেমাতে কাজ করতে প্রথমে রাজি হননি। পরবর্তীতে সত্যজিৎ রায়ের সাথে কথা বলে সব মিলিয়ে রাজি হন। ইন্দির ঠাকরুনের চরিত্রের জন্য চুনীবালা দেবীকে ঠিক করা হয় যার সাথে দেখা হবার সাথে সাথেই সত্যজিৎ রায়ের জহুরি চোখ বুঝে ফেলে যে উনাকে দিয়েই চরিত্রটি করানো যাবে।
এভাবে যখন চরিত্রগুলো পেয়ে যান সত্যজিৎ, তারপরই বসেন দৃশ্যগুলোর স্কেচ করতে। এটি তাঁর নিজস্ব মুন্সিয়ানা। এভাবেই তিনি এক পর্যায়ে দারুণ এক স্ক্রিপ্ট দাঁড় করিয়ে ফেলেন চলচ্চিত্রটির জন্য। এরপর প্রযোজক পেতেও তাঁকে পোহাতে হয় নানা ঝক্কি। ধারদেনা, স্ত্রীর গহনাপত্র, সরকারের আর্থিক অনুদান— সব মিলিয়ে বিরাট এক চ্যালেঞ্জ সত্যজিৎ রায়কে পাড়ি দিতে হয়। সত্যজিৎ রায় ও তাঁর টিমের অমিত মেধা ও শ্রমের ফসল এই আইকনিক চলচ্চিত্রটি সর্বকালের সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্রের স্বীকৃতি পেয়েছে। চলচ্চিত্রটি নিয়ে এখনো গবেষণা করেন এ অঙ্গনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
লেখক: সম্পাদক, দ্য রিপোর্ট । ইমেল: lutforrahmanhimel@gmail.com