পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?

মুশফিকুর মুজাহিদ

মার্চ ৪, ২০২১, ১০:৫৪ পিএম

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?

সংসদীয় কায়দায় বিপ্লব এক প্রকার প্রহসন- নকশালপন্থীরা তাই বলতো। নকশাল আন্দোলনের রক্তস্নাত অধ্যায়কে পাশ কাটিয়ে পশ্চিমবঙ্গে সংসদীয় পথেই সমাজবদলের স্বপ্ন দেখিয়ে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী)-সিপিআইএম ক্ষমতা দখল করে সেই আশির দশকে। তারপর বামফ্রন্টের জোটবদ্ধ শাসনের যবনীকা ঘটেছে কংগ্রেসের হাত ধরে রাজনীতিতে উঠে আসা নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে। সর্বভারতীয় যুব কংগ্রেস থেকে কংগ্রেস,এরপর দল ভেঙে মমতা নিজের দল 'তৃণমূল কংগ্রেস' গড়ে তুলেছিলেন। জ্যোতি বসুর পর পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শাসনামলে ২০০৪ সালে মমতার রাজনৈতিক উত্থান ঘটে প্রবল প্রতাপে। তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকারের গৃহীত ভূমি অধিগ্রহণ নীতির প্রতিবাদে রাজপথ কাপিয়েছিলেন তিনি। সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে টাটার গাড়ি কারখানা আটকে দিতে মমতা টানা ২১দিন অনশন করেছিলেন। লড়াই করতে করতে মমতা ২০১১ সালে তিন দশকের বামফ্রন্ট শাসনকে উৎখাত করেন।

তৃণমূলে যোগ দেওয়া তারকাদের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত।

মমতার দলে একে একে হাজির হয়েছিলেন ক্ষুব্ধ-হতাশ সিপিআইএম, হতাশ নকশাল, বামপন্থী মনোভাবাপন্ন একদল শিল্পী, অভিনেতা, চিত্রকর, কবি, গায়ক থেকে অনেকেই। মমতা তখন অনেকের কাছে কলকাতার ভøাদিমির লেনিন। মমতার মাঝে বিপথগামী সিপিআইএমের বিকল্প দেখছেন তখন অনেকে। সোভিয়েত পতনের পর বামযুগের শেষশয্যা যারা দেখেছিলেন তারা মমতার মাঝে খুঁজে পেয়েছেন একজন গণমুখী, উদারবাদী সোশ্যাল ডেমোক্রেট শাসকের প্রতিচ্ছবি। এরপর আরেকদফায় মমতার দল বিধানসভা দখল করেছিল ২০১৫ সালে। লোকসভাতেও তার দাপট ছিল চোখে লাগার মতো। কিন্তু সেসব এখন অনেকটাই ফিকে হয়েছে। মমতার দলের এক সময়ের শীর্ষ নেতারা এখন অনেকেই কেন্দ্রের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ভারতীয় জনতা পার্টিতে (বিজেপি) নাম লিখিয়েছেন। ভারতে ধর্মরিপেক্ষ-বহুত্ববাদের পীঠস্থান পশ্চিমবাংলায় এবার নাকি বিজেপি ক্ষমতায় আসছে। এ নিয়ে টালামাটাল পশ্চিম বঙ্গের রাজনীতি।

কলকাতার রাজনীতিতে এখন প্রতিদিনই নতুন নতুন ঘটনা ঘটছে। তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ থেকে একদম নিচুতলার কর্মীদের অনেকেইবিজেপিতে যোগদান করছেন। এ তালিকা সময়ের সঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে। বলা যেতে পারে, বিজেপির হাত ধরে দল ভাঙাভাঙির এই রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গে এসে যেন আরো গতি পেয়েছে। তৃণমূলের এক সময়ের দ্বিতীয় শীর্ষ কর্তাব্যক্তি মুকুল রায়কে বিগত লোকসভা ভোটের আগে বিজেপিতে যোগদান করিয়ে বিজেপি প্রথম মাস্ট্রারস্ট্রোক খেলে। এরপর  মুকুল রায় তৃণমূল ভাঙানোর খেলায় নেমে পড়েন। তৃণমূল থেকে নির্বাচিত ভাটপাড়া বিধানসভার সাবেক বিধায়ক অর্জুন সিংকে দলে ভিড়িয়ে লোকসভায় ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল থেকে জিতিয়ে আনে বিজেপি। তৃণমূলের সাবেক যুবনেতা নীতীশ প্রামনিককে দলে যোগদান করিয়ে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতিয়ে নিয়ে গেছে বিজেপি, বিষ্ণুপুরের তৃণমূল সাংসদ সৌমিত্র খাঁকেও বিজেপি দলে টানে এবং জিতিয়ে আনে। এর বাইরে বীরভূমের এক সময়ের তৃণমূল বিধায়ক অনুপম হাজরাকে বিজেপিতে যোগদান করিয়ে তৃণমূলের মিমি চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করানো হয় যাদবপুর থেকে। যে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে কোনোদিন ২-৪ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি তারাই এবার লোকসভায় ১৮টি আসন দখল করে। লোকসভা নির্বাচনের পর যেন তৃণমূলের দশা তাসের ঘরের মতো। মমতার মন্ত্রিসভায় ডাকাবুকো নেতা রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীও দল ত্যাগ করেছেন।

শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: সংগৃহীত।

শুভেন্দু নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেতা এবং রাজ্যের প্রবীণ কংগ্রেস নেতা মেদিনীপুরের প্রভাবশালী অধিকারী পরিবারের কর্তা শিশির অধিকারীর ছেলে। বলা হয়, বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেসে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পর তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যার শক্ত জনভিত্তি রয়েছে। শুভেন্দুর দলত্যাগের পর মেদিনীপুর ও তার আশেপাশের অঞ্চলের বহু নেতাকর্মীও দল ছেড়েছেন। এরপর কদিন আগে দল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন রাজ্যের সদ্যসাবেক মন্ত্রী ও বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এরও অনেক আগে দল ছেড়ে বর্তমানে বিজেপিতে আছেন কলকাতা করপেরেশনের সাবেক মেয়র, বিধায়ক ও সাবেক মন্ত্রী শোভন চট্টপাধ্যায়। শোভন চট্টপাধ্যায়েরও রাজ্যরাজনীতিতে বেশ প্রভাব রয়েছে। রাজ্যসভার সাংসদ দীনেম ত্রিবেদী রাজ্যসভায় দাড়িয়েই দল ত্যাগ করেছেন সদ্যই।

এর মধ্যে মুকুল, শুভেন্দু, শোভন; সবাই তৃণমূলের প্রথম সারির নেতা। এ তো গেল প্রথম সারির নেতাকর্মীর কথা। তৃণমূলের বিধায়ক লক্ষীরতন শুক্লা দলত্যাগ করেছেন, ক্রিকেট প্রশাসক জগমোহন ডালমিয়ার মেয়ে ও তৃণমূলের বিধায়ক বৈশালি ডালমিয়া দলত্যাগ করে বিজেপিতে, বিধায়ক মিহির গোস্বামী, বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, অভিনেতা ও তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা রুদ্রনীল ঘোষ, এরকম আরো বেশ কয়েকজন বিধায়ক এখন বিজেপিতে। মোটকথা, পশ্চিবঙ্গের রাজনীতিতে এখন এমন সব নাটুকে ঘটনা ঘটছে যে, রাত পোহালেই মনে হয়- আজ কে যাচ্ছেন বিজেপিতে! মোটামুটি বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এখন বেশ চাঙা। রাজনীতিতে কটু কথা আর আগ্রাসী মেজাজের জন্য তিনি পরিচিত। একজন করে দলে ভেড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তার গলার স্বর যেমন চওড়া হচ্ছে সর্বভারতীয় নেতৃত্বও মমতার দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ছেন।

বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখল করতে মরিয়া। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি থেকে শীর্ষ নেতা মন্ত্রীরা তো বটেই নরেন্দ্র মোদিও রাজ্যে কয়েক দফা আসার পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। ভোটের এখনো মাস দুয়েক বাকি। কিন্তু মমতার সঙ্গে যুজুধান বিজেপি পাশার ঘুটি সাজাচ্ছে এখন থেকেই। বিজেপি উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য আগে থেকে বিশেষ কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের পরামর্শে পরিচালিত দলটি এ অঞ্চলে ভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতাদের দিকে নজর দিয়েছে বেশ আগেই।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রচারণা। ছবি: সংগৃহীত।

এ অঞ্চলের শক্তিশালী আঞ্চলিক দল ও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের দলে ভিড়িয়ে অচেনা এসব জায়গায় লড়াই করার ক্ষেত্র তৈরি করছে তারা। যেমন, অসমের বিজেপি নেতা হেমন্ত বিশ্বশর্মা এক সময় কংগ্রেসের এই অঞ্চলে প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। ত্রিপুরার শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল সেন এক সময় কংগ্রেসের নেতা ছিলেন, এখন বিজেপিতে । এই দুজনই তাদের রাজ্যে শক্তপোক্ত লোক। রাজ্যের আনাচেকানাচে সংগঠন গড়ে তোলায় তাদের ভূমিকা রয়েছে। এই কৌশলে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি প্রথম হাত বাড়িয়েছে তৃণমূলের এক সময়ের দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি মুকুল রায়ের দিকে। তাকে দলে টানার পর ২০১৭ সালের পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি নজরকাড়া সাফল্য পায়। এরপর বিজেপি আরো শীর্ষ নেতাদের দলে টানে। তৃণমূল থেকে শুরু করে বিজেপির সবচেয়ে বড় আদর্শিক শত্রু বামপন্থী- কাউকেই দলে টানার ক্ষেত্রে পিছপা হয়নি বিজেপি।বিজেপির মালদা অঞ্চলের বর্তমান সাংসদ খগেন মুর্মু এক সময়ের প্রভাবশালী জেলা সিপিআইএম নেতা। লোকজসভা ভোটের আগে আগে দলে এসেছেন তিনি। এর ধারাবাহিকতায় বিজেপি গত লোকসভা নির্বাচনে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাফল্য পেয়েছে। অর্থাৎ পশ্চিবঙ্গে বিজেপি তাদের পরীক্ষিত কৌশলে এখন পর্যন্ত সফল। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের মাঠে বিজেপি যে জোর টক্কর দেবে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে-এ কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। অথচ বিজেপির জন্য পশ্চিবঙ্গ কোনো সময়ই সুখকর ছিল না।   

এ পরিস্তিতি কিভাবে তৈরি হলো? 

তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বামফ্রন্ট শাসনের লড়াইটা ছিল কার্যত- মমতা বনাম বামফ্রন্ট। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে বামফ্রন্ট সরকারের ভূমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে গড়ে ওঠা মমতার মাটিকামড়ানো আন্দোলন ও বামফ্রন্টের ক্যাডারদের হামলা-নির্যাতন, পুলিশি নির্যাতন, হত্যা-খুন-ধর্ষণের চক্রব্যুহে মমতা পাশে পেয়েছিলেন সকল রাজনৈতিক শক্তিকে। বামফ্রন্টের দু:শাসন হটানোর ডাক দিয়ে মমতা তখন অনেকের কাছে আশার প্রদীপ। মমতা সেই নেত্রী যিনি পশ্চিমবঙ্গের বিগত রক্তপাতের ইতিহাসকে পিছনে ফেলে সোনালী সময় এনে দেবেন। পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে সিপিআইএম, কংগ্রেস, আরএসপি থেকে শুরু করে সকল স্তরের মানুষরা তৃণমূল কংগ্রেসে ভিড় করেছেন। সরকারী ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সিপিআইএমসহ সকল বিরোধীদলকে জোর করে, ভয় দেখিয়ে, লোভ দেখিয়ে তৃণমূলে যোগদান করিয়েছেন। বিরোধীদলগুলোর কার্যালয় দখল করেছেন, নেতাকর্মীদের বাড়িছাড়া করে, নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে প্রতিপক্ষের রাজনীতি করার জায়গা কার্যত নাই করে দিয়েছেন মমতার সরকার। পঞ্চায়েত ভোটে ৩০% আসনে বিনাভোটে প্রার্থীদের জিতিয়ে এনেছেন।

এ সময় গ্রামবাংলায় ভোট দেওয়ার অধিকার নস্যাৎ করা হয়েছে, নারদা-সারদা-রোজ ভ্যালির মতো বড় আর্থিক কেলেঙ্কারিতে দল প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বিজেপিও মোক্ষম সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইকে কাজে লাগিয়ে কেলেঙ্কােরিতে অভিযুক্ত নেতাদের ভয় দেখিয়ে গেছেন। অভিযুক্ত নেতারাও পিঠ বাঁচাতে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। মুকুল, শোভন থেকে শুভেন্দু- সবার বিরুদ্ধেই আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে এখন পর্যন্ত এসব আর্থিক কেলেঙ্কারির কোনো অভিযোগপত্র দেয়নি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটি। এর অর্থ হলো বিষয়টিকে ঝুলিয়ে রেখে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাচ্ছে তারা। বিরোধী রাজনৈদিক নেতাদের ভয় দেখিয়ে দলে টানার কৌশল ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে কাজে লাগিয়ে বেশ সফল তারা। পশ্চিমবঙ্গেও সে ফর্মুলা চলছে।

এখন ভোটের মাঠের অবস্থা কী

রাজ্যের সাবেক শাসক বামফ্রন্ট কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে লড়াই করেছে গত লোকসভা নির্বাচনে। এতে কোনো আসনই পায়নি বামফ্রন্ট। অধিকাংশ প্রার্থী জামানত হারিয়েছে। কংগ্রেস  মাত্র দুটি আসন পেয়েছে। এর মধ্যে একটি লোকসভায় বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীর। পরবর্তী উপনির্বাচনগুলোয়ও এই জোট তৃতীয় অবস্থানে ছিল। বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে কোনো জরিপেই দেখা যাচ্ছে না, বাম-কংগ্রেস ভালো অবস্থান তৈরি করতে পারবে। বাকিটা নির্বাচন হলে বোঝা যাবে। রাজ্য রাজনীতিতে কংগ্রেসের সঙ্গ জোট করে আবারো ভোটে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে বামপন্থীরা। এক সময়ের প্রবল প্রতিপক্ষ সিপিআইএমের সঙ্গে গাঁটছাড়া বাধা নিয়ে অস্বস্তি একপাশে সরিয়ে রেখে প্রথমদফার আসনরফা ইতিমধ্যে সেরে ফেলেছেন কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তৃণমূলও প্রতিদিনই সভা সমাবেশ করছেন। মমতা বন্দোপাধ্যায়ও ঘোষণা দিয়েছেন- ভোটের মাঠে তাকে দেখে ভোট দিন, আর কাউকে নয়। এর মধ্যে রাজ্যের ৩০% সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে। বামশাসনের পর সংখ্যালঘু মুসলিম ভোট একচেটিয়া তৃণমূলই পেয়ে এসেছে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি একটু জটিল হয়েছে।

সংখ্যালঘু ভোট

 পীরজাদা আব্বাস সিদ্দীকি । ছবি: সংগৃহীত।

ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আবু বকর সিদ্দীকির তৃতীয় প্রজন্ম পীরজাদা আব্বাস সিদ্দীকি এবার নতুন দল ঘোষণা করেছেন। তাঁকে নিয়ে মুসলিম ভোটের একটি অংশ আলোড়িত হচ্ছে। তিনি 'ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট' নামের দল গঠন করে সেখানে দলিত, আদিবাসী, তপশিলীসহ মূলধারার জনগোষ্ঠীর বাইরের সকল জনগোষ্ঠীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এ দলে। হায়দ্রাবাদের মুসলিম নেতা ইতিমধ্যে যিনি বেশ আলোচিত তিনিও রয়েছেন এ আলোচনায়। অল ইন্ডিয়া মুসলিম ইত্তেহাদুল মুসলেমিন তথা মিম পার্টির নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি তাঁকে সমর্থনের কথা জানিয়ে গেছেন। আব্বাস সিদ্দীকির সঙ্গে বাম-কংগ্রেসেরও জোট আলোচনা চলছে। যদি এ জোট সত্যি হয়, তবে রাজ্যের ভোটের চিত্র খানিকটা অন্যরকম হবে। কারণ, এ রাজ্যের মুসলিম ভোট প্রায় ১০০-১২০টি আসনে নির্ণায়ক ভূমিকা নেয়। বিশেষ করে মালদাহ-মুর্শিদাবাদের বিধানসভাগুলোয় এ ফ্যাক্টর আরো বেশি করে প্রভাবক। কাজেই এতগুলো আসনের  হিসেবনিকেশ করতেই হবে। এসব ভোট এক সঙ্গে বাম-কংগ্রেস-আব্বাস সিদ্দীকির গরে গেলে তখন এই মোর্চা সুবিধা করবে। তবে, সেটা ঠিক কতটা প্রভাব ফেরবে তা সময়ের সঙ্গে আরো পরিষ্কার হবে। এই জোটটি যদি বেশ প্রভাব ফেলে তাহলে বিজেপি ও তৃণমূল উভয়েরই ক্ষতি। বিজেপির জন্য ক্ষতি এই কারণে যে, তখন সংখ্যালঘুরা মোটাদাগে একপাশে ভোট দেবে।

কিন্তু উল্টো পরিস্তিতিও আছে। কোনো কারণে এই ভোটগুলো যদি বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে তাহলে পরিস্তিতি আবার ভিন্ন হবে। যদি আব্বাস সিদ্দীকি, তৃণমূল ও বাম-কংগ্রেস জোট আলাদাভাবে ভোটে লড়াই করে তাহলে এসব ভোট মোটে তিন ভাগ হচ্ছে। এর ফলে  বিজেপির তখন সুবিধা হবে। কারণ, বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতির ফলে হিন্দু ভোটের বড় অংশ তারা পাবে। সংখ্যালঘু ভোট যত ভাগ হবে বিজেপির ততো লাভ। বিজেপি কৌশল হলো- হিন্দু ভোট একাট্টা করা। ভোট ভাগ হওয়ার মানে হলো, সংখ্যালঘুরা ফল নির্ধারণ করে এমন আসনেও তখন তারা এগিয়ে থাকবে। 

সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গ এত জটিল নির্বাচন কখনো দেখেনি। এক জটিল রসায়ন তৈরি হয়েছে সেখানে। মোদি-অমিত-নাড্ডাদের মিশন বাংলা এবার কতদূর পৌঁছোয় সেটাই দেখার বিষয়। তবে ক্ষমতায় আসুক বা না আসুক-বিজেপি এখন পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় বিরোধীশক্তি। ধর্মনিরপেক্ষতা আর উদার সংস্কৃতির পশ্চিবঙ্গ এখন প্রবল দক্ষিণপন্থী বিজেপি-আরএসএস দ্বারা প্রভাবিত। শেষমেশ ক্ষমতা দখল করলে মোটেই অবাক করার মতো কোনো বিষয় হবে না সেটা।

 সহ-সম্পাদক, কালের কণ্ঠ।

 

Link copied!