পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান দলীয় শীর্ষ পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন! কারণ হিসেবে তাঁর দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, আইনি জটিলতা এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত।
গত বছরের এপ্রিলের শুরুর দিকে পাকিস্তানি সংসদ সদস্যদের অনাস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়েন পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সাবেক এই বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক।
সংবিধানের ৬৩ (১) (পি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অক্টোবরে ইমরান খানকে দেশটির পার্লামেন্ট ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। রাষ্ট্রীয় উপহার হিসেবে পাওয়া সম্পদ তিনি বিক্রি করেছেন এবং সেই তথ্য গোপন করেছেন বলে অভিযোগ আনে নির্বাচন কমিশন। এরপরই আসে এই সিদ্ধান্ত।
তাঁর বিক্রি করে দেয়া উপহারের মধ্যে কয়েকটি দামী হাতঘড়ি ছিল, যা কোন একটি রাজপরিবারের দেয়া এবং এগুলোর মূল্য ৬ লাখ ৩৫ হাজার ডলারের সমান, যার মূল্যমান বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭ কোটি টাকা।
ইমরানের বিরুদ্ধে এই দুর্নীতির অভিযোগটি তোশাখানা বিতর্ক নামে পরিচিতি লাভ করে। ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত ৪ জানুয়ারি আদালতে ইমরান খান পিটিশনও দায়ের করেন। পরে ৫ জানুয়ারি দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরানোর আদেশ স্থগিত করে লাহোর হাইকোর্ট।
তবে পিটিআইয়ের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বা প্যাট্রন-ইন-চীফ পদে ইমরান খানকে নিযুক্ত করার বিষয়টি দল থেকে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে পিটিআইয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়। আইনি জটিলতা এড়াতে দলীয় প্রধানের পদ ছেড়ে ইমরানকে ওই পদে বসানোর বিষয়ে পিটিআইয়ের সভায় আলোচনা হয়েছে।
সাবেক তারকা ক্রিকেটার এবং পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কও ছিলেন তিনি। পাশাপাশি ২০০৫ এবং ২০১৪ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ছিলেন ইমরান।
ক্রিকেটার কাম রাজনীতিবিদ ইমরান খানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার উত্থান-পতনের। এক সময় বিশ্ব ক্রিকেটে রাজত্ব করেছেন তিনি। দেশকে এনে দিয়েছেন বিশ্বকাপ ক্রিকেটের চ্যাম্পিয়ন ট্রফি। খেলার জগৎ ছেড়ে ব্রিটেনের অন্যতম ধনকুবের স্যার জেমস গোল্ডস্মিথের মেয়ে জেমিমা স্মিথকে বিয়ে করেন, পরে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৯৬ সালের ২৫ এপ্রিল, রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই প্রতিষ্ঠা করেন ইমরান খান। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন দলটির।
এক সময় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন পাকিস্তানের মতো একটি অস্থিতিশীল দেশের। পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে সেনাপ্রধান ও আদালত তাঁর বিপক্ষে চলে গেলে বিরোধী দলের আনা অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান।
পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবার একজন প্রধানমন্ত্রীকে অনাস্থা ভোটে পরাজিত হয়ে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। সেই প্রধানমন্ত্রীই ইমরান খান। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও তাঁর ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এ ক্ষেত্রে নাটের গুরু হিসেবে কাজ করেছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে গদিচ্যুত হওয়ার পর প্রধান বিরোধী দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন ইমরান। গদি হারালেও রাজনীতির মাঠ ছাড়েননি তিনি। সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করলে এক সভায় গুলিতে আহতও হন তিনি। এতে সাধারণ জনগণ তাঁর পক্ষে ব্যাপকভাবে সাড়া দিতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তাঁকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর চেষ্টা শুরু করে।
এ ক্ষেত্রে ‘তোশাখানা বিতর্ক’ ইস্যুটি তাঁরা অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয়। এই বিতর্কের জেরে দলীয় প্রধান হিসেবে ইমরান খান থাকতে পারবেন না বলে ঘোষণা দেয় দেশটির নির্বাচন কমিশন। পিটিআই প্রধান এর বিরুদ্ধে আপিল করলে নির্বাচন কমিশনের ওই রায় স্থগিত করে লাহোর হাইকোর্ট। তারপরও ইমরান খান আইনি জটিলতা এড়াতে দলীয় প্রধানের পদ ছাড়তে চলেছেন। তাহলে ইমরান কি শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটের মতো রাজনীতির মাঠ থেকে গ্যালারিতে ফিরে যাচ্ছেন? এমনই জল্পনা শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মাঝে।