এবারের বিশ্বকাপই হবে যে তারকা খেলোয়াড়দের জীবনের শেষ বিশ্বকাপ!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ২৬, ২০২২, ০৯:২১ পিএম

এবারের বিশ্বকাপই হবে যে তারকা খেলোয়াড়দের জীবনের শেষ বিশ্বকাপ!

এবারের কাতার বিশ্বকাপই হয়ত জীবনের শেষ বিশ্বকাপ হবে বিশ্বের বেশ কয়েকজন তারকা ফুটবলারের। এরকম অন্তত দশজন ফুটবলার আছেন, যাদের বিশ্বকাপ খেলা এবারই শেষ হবে। এরপর প্রিয় জার্সি আর বুটজোড়া খুলে রাখতে হবে সেলফে! কবি নজরুলের ভাষায়, চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়। ফুটবলারদের বয়স একটি বড় ফ্যাক্টর। সেই বিবেচনায় এই ফুটবলাররা নিজেদের অবসর ঘোষণা করে দিতে পারেন এই বিশ্বকাপ আসরেই।

এ ক্রীড়াভুবনের ক্রীড়ামঞ্চের অসংখ্য ক্রীড়াবিদ তাদের মেধার বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে, সামর্থ্যরে সীমানা পেরিয়ে, প্রতিভার স্ফূরণ ঘটিয়ে, সাফল্যের দ্যুতি প্রজ্বালন করে, স্বীয় নৈপূণ্যে সমুজ্জ্বল হয়ে, ভক্ত-দর্শক-সমর্থক-সমালোচক-বিশ্লেকদের মন মাতিয়ে, তাদের হৃদয়ের এক কোণে ঠাঁই পেয়ে যখন ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে উপনীত হন, তখন তাঁদের ইচ্ছে না থাকলেও বিদায় নিতে হয় খেলার মাঠ থেকে। গ্রহণ করতে হয় বিষাদের অবসর। তবে সব ক্রীড়াবিদই তাঁদের গৌরবময় বিজয় দিয়ে মনমতো অবসর নিতে পারেন না। পরাজয়ের স্বাদ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়। তবুও সেই বিদায় গৌরবেরই। কারণ খেলার মাঠে জয়ই সব কথা নয়। দর্শকদের মনে জায়গা নেওয়াও এক বিজয়।

২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপ শুরু হতে আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। বিশ্বকাপ নিঃসন্দেহে ফুটবলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আয়োজন। এই টুর্নামেন্টে নিজ দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা প্রতিটি খেলোয়াড়ের স্বপ্ন। ইতোমধ্যেই বিশ্বের সেরা দলগুলোই বিশ্বকাপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করে মুখিয়ে আছে মাঠে নামতে।

তবে আরলিং হাল্যান্ড, মোহাম্মদ সালাহ, মার্কো ভেরাত্তি এবং ডেভিড আলাবার মতো ফুটবলের ক’জন বড় তারকা তাদের নিজ নিজ জাতীয় দল যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় ২০২২ বিশ্বকাপে অংশই নিতে পারবেন না। এবারের আসরে সম্ভবত শেষবারের মতো আমরা ফুটবলের সবচেয়ে বড় মঞ্চে কিছু আধুনিক দিনের গ্রেটদের দেখতে পাব। এমনই শীর্ষ ১০ ফুটবলারকে নিয়েই এই লেখা।

এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (আর্জেন্টিনা)

এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া গত এক দশকে আর্জেন্টিনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ইনজুরির কারণে তাঁর অনুপস্থিতিকে ২০১৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা জার্মানিকে হারাতে ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ব্যাপকভাবে দেখা হয়। ২০২১ কোপা আমেরিকার ফাইনালে লা আলবিসেলেস্তের জয়সূচক গোলটি করেন মারিয়াই।



৩৪ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় ফরাসী ক্লাব পিএসজি ছেড়ে ইতালিয়ান ক্লাব জুভেন্টাসে যোগ দিয়েই চোটে পড়েছেন। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এই চোট দীর্ঘায়িত হলে কাতার বিশ্বকাপে না-ও দেখা যেতে পারে আর্জেন্টিনার হয়ে ১২২ ম্যাচে ২৫ গোল করা মারিয়াকে।

এডিনসন কাভানি (উরুগুয়ে)

এডিনসন কাভানি তাঁর প্রজন্মের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার। উরুগুয়ের এই খেলোয়াড় তাঁর জাতীয় দলের হয়ে এ পর্যন্ত ১৩৩ ম্যাচে ৫৮ গোল করেছেন। ক্লিনিক্যাল ফিনিশিং, দৃঢ়তা এবং কখনও হার না মানা মনোভাবের জন্য বিখ্যাত তিনি। তাঁর বয়স এখন ৩৫ বছর এবং এবারের বিশ্বকাপই সম্ভবত তাঁর শেষ বিশ্বকাপ।

কাভানি হয়তো এবারই শেষবারের মতো ঘরোয়া ফুটবলে ইউরোপের মাটিতে খেলছেন (ইংলিশ ক্লাব ম্যান ইউর হয়ে)। বয়স বেড়েছে তাঁর, কিন্তু তিনি নিজের সেরা দিনে এখনও বিপজ্জনক হওয়ার ক্ষমতা রাখেন গোলস্কোরার হিসেবে। নিশ্চয়ই তিনি কাতার বিশ্বকাপে নিজের সেরাটাই দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

লুইস সুয়ারেজ (উরুগুয়ে)

কাভানির স্ট্রাইকিং পার্টনার লুইস সুয়ারেজও ৩৫ বছর বয়স্ক। ইউরোপ ছেড়ে নিজ দেশের ক্যারিয়ারের প্রথম ক্লাব নাসিওনালের হয়ে খেলছেন। দেশের হয়ে ১৩২ ম্যাচ খেলে ৬৮ গোলের মালিক, যা সর্বোচ্চ। আধুনিক যুগের সবচেয়ে ভাল স্ট্রাইকারদের মধ্যে একজন হিসেবে তাঁকে এক সময় বিবেচনা করা হতো। সুয়ারেজ এখন তাঁর শীর্ষ বছরগুলো পার করে ফেলেছেন। সাম্প্রতিক মৌসুমে তার ফর্মও হ্রাস পেয়েছে। ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপই সম্ভবত ‘এল পিস্তলেরো’র শেষ বিশ্বকাপ।



মার্কো রিউস (জার্মানি)

মার্কো রিউস নিঃসন্দেহে তাঁর প্রজন্মের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড। দুর্ভাগ্যবশত, ইনজুরির কারণে জার্মান জাতীয় দলে তার সম্পৃক্ততা সীমিত ছিল। জাতীয় দলের হয়ে ৪৮ ম্যাচ খেলে ১৫ গোল করা রিউস বিশ্বকাপে মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলেছেন। বিশ্লেষকদের ধারনা, এবার কাতার বিশ্বকাপ মাতাবেন তিনি। তবে ৩৩ বছর হয়ে যাওয়ায় এটিই হতে পারে তাঁর শেষ আসর।



থিয়াগো সিলভা (ব্রাজিল)

আসন্ন কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিশ্বমানের ডিফেন্ডারের অভাব নেই। কিন্তু তারপরও ৩৭ বছর বয়সী চেলসির সেন্টার ব্যাক থিয়াগো সিলভাই ব্রাজিলের ভরসার নাম। এটি সম্ভবত সিলভার শেষ বিশ্বকাপ। বিদায় নেওয়ার আগে ব্রাজিলকে শিরোপা জেতাতে জানপ্রাণ দিয়েই খেলবেন ব্রাজিলের হয়ে ১০৭ ম্যাচ খেলে ৭ গোল করা সিলভা।

টমাস মুলার (জার্মানি)

এবারের আসরে জার্মানি ফেবারিট দল নয়। তারপরও তাঁদের আছেন টমাস মুলার নামের এক ফরোয়ার্ড, যাঁকে ইউরোপের ‘এ্যাসিস্ট কিং’ বলা হয়। অনেক ফুটবলবোদ্ধাই তাঁকে এই গ্রহের সবচেয়ে টেকনিক্যালি, ট্যালেন্টেড এবং ইন্টেলিজেন্ট ফুটবলারদের মধ্যে একজন বলে বিবেচনা করেন। বায়ার্ন মিউনিখের এই ফরোয়ার্ডের বয়স ৩৩ প্লাস।



জাতীয় দলের হয়ে ১১৬ ম্যাচে যে ৪৪ গোল করেছেন, তাঁর ১০টিই করেছেন বিশ্বকাপে। জার্মান ফুটবলপ্রেমীরা আশায় আছেন, কাতার বিশ্বকাপেও নিজের বিশ্বকাপ গোলসংখ্যা আরও বাড়িয়ে দলকে অন্তত ভাল একটা পর্যায়ে নিয়ে যাবেন মুলার।

করিম বেনজেমা (ফ্রান্স)

ছয় বছর অনুপস্থিতির পর ২০২১ সালে ফ্রান্স জাতীয় দলে ফিরিয়ে আনা হয় করিম বেনজেমাকে। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দল ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন এই ফ্রেঞ্চম্যান, যার ফলে তিনিই ফিফা ব্যালন ডি’অর জিততে চলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। আর এ জন্যই ফরাসী ফুটবলপ্রেমীরা ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপে তার কাছ থেকে বড় কিছু আশা করছে। তবে জাতীয় দলের হয়ে ৯৭ ম্যাচে ৩৭ গোল এবং রিয়ালের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা বেনজেমার বয়স এখন ৩৪ বছর এবং এটাই সম্ভবত তাঁর শেষ বিশ্বকাপ।



লুকা মদ্রিচ (ক্রোয়েশিয়া)

লুকা মদ্রিচ ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ‘গোল্ডেন বল’ জিতেছিলেন। সেবার তিনি ক্রোয়েশিয়াকে ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে তাঁর দল শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সের কাছে হেরে গিয়েছিল। কাতার বিশ্বকাপের সময় লুকার বয়স হবে ৩৭। তারপরও তিনি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন এবং আবারও ক্রোয়েশিয়ার ত্রাণকর্তা হওয়ার যোগ্যতা রাখেন তিনি।



লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)

লিওনেল মেসি এ সময়ের সেরা ফুটবলারদের একজন। রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী। ১৯৯৩ সালের পর আর্জেন্টিনা আন্তর্জাতিক শিরোপা (কোপা আমেরিকা) জিতেছে তাঁর নেত্বতেই। আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড়ও তিনিই ছিলেন। ৩৫ বছর বয়সী জাতীয় দলের হয়ে ১৬২ ম্যাচে ৮৬ গোল করা মেসি ৫১টি এ্যাসিস্টও করেছেন। বিশ্বকাপই অর্জন থেকে বাদ পড়া একমাত্র ট্রফি এবং তিনি এটি জিততে চাইবেন যা আমরা তাঁকে শেষবারের মতো টুর্নামেন্টে দেখতে পাব। তা ছাড়া টানা ৩৩ ম্যাচে অপরাজিত থাকা আর্জেন্টিনাও আছে দুর্ধর্ষ ফর্মে।



ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো (পর্তুগাল)

পুরুষদের আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১১৭ গোল (১৮৯ ম্যাচে) করে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার নাম ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। এই পর্তুগীজকে সবাই খুব মিস করবে যখন তিনি শেষ পর্যন্ত তাঁর বুটগুলো ঝুলিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁর বয়স এখন ৩৭। এবং ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপে তিনি খেলবেন, এমন সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। বিদায়বেলায় কাতারে পর্তুগালের জন্য তাঁর সর্বস্বই নিংড়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

Link copied!