মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে শুরু হচ্ছে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ ফুটবল বিশ্বকাপ। রবিবার উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে স্বাগতিক কাতার এবং ইকুয়েডের। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায়। উদ্বোধনী দিনে একটাই ম্যাচ।
ফুটবল বিশ্বকাপ মানেই দারুন উম্মাদনা। এই উম্মাদনা ও উত্তাপের আঁচ আমাদের দেশেও বেশ ভালোভাবেই লেগেছে। ঘরে ঘরে উড়ছে ব্রাজিল,আর্জেন্টিনা, ইংল্যান্ডেসহ পছন্দের প্রিয় দলের পতাকা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে প্রিয় দলকে নিয়ে নানা আয়োজন। এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন দেশের শোবিজ তারকারাও। একেকজন একেক দল সমর্থন করছেন, প্রিয় দলের জার্সি পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিও পোস্ট করছেন।
বাংলার গানের যুবরাজ’খ্যাত আসিফ আকবর খেলাধুলার প্রতি দুর্বল এটা সবার জানা। আর ক্রিকেটে বাংলাদেশের সমর্থন হলেও ফুটবলে তিনি বরাবরই ব্রাজিলের পক্ষে। তার পরিবারের কেউ কেউ জার্মানি, ইতালির পক্ষে থাকলেও ছিল না আর্জেন্টিনার সমর্থক। এবার পরিবারে এসেছে আর্জেন্টিনার সমর্থক।
আসিফ আকবরের বড় ছেলে শাফকাত আসিফ রণের স্ত্রী ইসমত শেহরীন ঈশিতা আর্জেন্টিনার ভক্ত। আর সেকথা আসিফ নিজেই জানিয়েছেন এক ফেসবুক পোস্টে। দ্য রিপোর্ট ডেট লাইভের পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘১৯৮২ সালে ক্লাস ফোরে পড়ি। বাসায় ছয় চ্যানেলের সাদাকালো ফিলিপস টিভি। রাত জেগে খেলা নিয়ে আব্বার কোনো অবজেকশন নেই। এদিকে আম্মাও ব্রাজিল সাপোর্টার। তিনি খেলা দেখেন, সঙ্গে আমরাও। বাসায় লোকজন ভরপুর একটা উৎসবমুখর পরিবেশ। বেগম জার্মানির সাপোর্টার হলেও ব্রাজিলের প্রতি দুর্বল, রণ সরাসরি ব্রাজিল। রুদ্র মেসি সাপোর্টার হলেও বেসিক ব্রাজিল। আমার মেয়ে রঙ্গন ছোট হলেও ওর ম্যাচুরিটি বলে সেও ব্রাজিল সাপোর্টার। ভাই-বোনদের মধ্যে ইতালি জার্মানি আর ইংল্যান্ডের আনকমন সাপোর্টারদের অকার্যকর উপস্থিতি সহনীয় পর্যায়েই আছে।
আর্জেন্টিনার কোনো সাপোর্টার নেই ঘরে, কষ্টদায়ক ব্যাপার একটু। গতকালই খবর পেলাম বৌমা ঈশিতা আর্জেন্টিনা সমর্থক, অবশ্য এই বিষয় নিয়ে তার ব্রাজিলিয়ান হাজবেন্ডের সঙ্গে এখনো সাংঘর্ষিক কোনো কিছু দৃশ্যমান হয়নি। শ্বশুর হিসেবে আমি স্বাগত জানিয়েছি। চার বছর পরপর ফুটবল বিশ্বকাপ ফিরে আসে গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ আখ্যা নিয়ে। ক্রিকেট খেলা শিখেছি, নিজে স্পোর্টিং মেন্টালিটির। ইদানিং খেলাধুলার মূল স্পিরিট অভদ্র লেভেলের তর্কে পৌঁছে গেছে। সমর্থকদের আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে প্রতিমূহূর্তে স্পোর্টিং স্পিরিট নিহত হচ্ছে। অথচ বিশ্বভ্রাতৃত্বের সিম্বলিক যথার্থতা খোঁজা হয় বিশ্বসেরা এসব টুর্নামেন্টে।
আমার আশেপাশে আর্জেন্টাইন সাপোর্টারের সংখ্যা আশঙ্কাজনক। জার্মানি, ইতালির কিছু জেনুইন সাপোর্টারও ফসিল হিসেবে টিকে আছে। আজকে আর্জেন্টাইন বন্ধুদের কাছে মুচলেকা দিয়েছি- ব্রাজিল ভালো না খেললেও তাদের সঙ্গে অসৌজন্যতা করব না। যদি করি, তাহলে তারা বাসায় খেলা দেখবে, আমাকে বয়কট করবে। এই ধরনের হুমতির মুখে আরও স্পোর্টিং হওয়ার শপথ নিতেই হয়েছে। আসুন বিনোদিত হই, খেলাকে খেলা হিসেবেই নেই, অনেক কাহিনীতে জর্জরিত বিশ্বে একটু আনন্দিত থাকি। আনন্দ করুন, সমালোচনা করুন, মজা করুন, স্মার্ট সমর্থক হিসেবে অন্য দলের সমর্থকদেরও সম্মান দিন। যেকোন স্পোর্টস নিছক বিনোদন নয়, জীবনযুদ্ধের বৈশ্বিক কাঠিন্যের বিরুদ্ধে কিছুটা আনন্দ পাবার জন্য এক মহাবিদ্রোহ। পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা বা শত্রুতা তৈরির ক্ষেত্র নয়। তাই আর কোনো মুর্খতা নয়, বি স্পোর্টিং।’