লঞ্চ ও নৌকার পাশাপাশি ট্রলারডুবির ঘটনা বাড়ছে। কিন্তু ঢাকা ও আশেপাশের ইউনিট ব্যতীত সারাদেশে মাত্র ৪৯ জন ডুবুরি উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে। এমনি কয়েকটি বিভাগে ৮ টি জেলার জন্য দুই থেকে তিনজন ডুবুরি বরাদ্দ। যার ফলে যথাসময়ে উদ্ধার কাজ চালানো যাচ্ছে না আবার একটি উদ্ধার কাজ চালানোর সময়ে অন্যটি হচ্ছে না।
রংপুরের ৮ জেলায় ১ জন ডুবুরি
রংপুরে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি সংকট ও উদ্ধার অভিযানে তৎপরতার অভাবে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। বর্তমানে রংপুর বিভাগের প্রায় দেড় কোটি মানুষের ভরসা একজন ডুবুরিকে ঘিরে। ওই একজন দিয়েই চলছে উদ্ধারকাজ। বর্ষা মৌসুমে প্রতিমাসে পানিতে পড়ার মতো অন্তত ২০-২৫টি দুর্ঘটনা ঘটছে। শুধু জরুরি প্রয়োজনে ডুবুরির সংকট থাকায় পানিতে পড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। সঙ্গে যেকোনো উদ্ধার কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
রাজশাহীর ৮ জেলায় ৩ ডুবুরি
রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত এমন ১৭টি ডাক পেয়েছে রাজশাহী ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। তাঁরা ১৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন। জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছেন একজন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক ছাবের আলী প্রামাণিক জানান, তাদের অফিসে ডুবুরির পদই নেই। পদ সৃষ্টির জন্য তিনি জানিয়েছিলেন। অন্তত জেলা পর্যায়ের স্টেশনগুলোতে ডুবুরি দল থাকা উচিত বলেও মনে করেন এই কর্মকর্তা।
ডুবুরি নিয়োগেও বিলম্ব
ফায়ার সার্ভিস বিভাগের তথ্যমতে, ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনা বেশি ঘটে বর্ষাকালে। অনেক ঘটনার তথ্য ফায়ার সার্ভিসে আসে না। তবে ডুবে যাওয়ার পর দীর্ঘ সময় জীবিত বা লাশ উদ্ধার না হলেই ফায়ার সার্ভিসকে বলা হয়।
২০১৮ সালে ৪ নভেম্বর ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ডুবুরি ইউনিট সম্প্রসারণ’ নামে ১৬৫ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। যা চলতি ২০২১ সালের জুন মাস নাগাদ শেষ হবার কথা। দেশের সাতটি ইউনিট ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, খুলনা, বরিশাল ও রংপুরে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু এখন পর্যন্ত ডুবুরিই নিয়োগ দিতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। এদিকে বিশেষ বিবেচনায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও একবছর বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস।
প্রকল্পের আওতায় সাতটি ইউনিটে কমপক্ষে ৪২ জন ডুবুরি রাখার কথা থাকলেও বর্তমানে ২২ জন রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যার ফলে মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করে দ্রুত ২০ জন ডুবুরি নিয়োগ দেওয়ার জন্য পদ ঘোষণা করা হবে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।
করোনাকালীন সময়ে ডুবুরি নিয়োগ হয়নি
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপ সচিব এবং ডুবুরি প্রকল্পের পরিচালক মো: মোশাররফ হোসেন দ্য রিপোর্টকে বলেন, করোনার কারনে নিম্ন অগ্রাধিকার থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে। এছাড়া ডুবুরি নিয়োগের ক্ষেত্রে পদ সৃষ্টিতে জটিলতা দেখা গেছে। তবে বরাদ্দের পরিমান বৃদ্ধি না করেই প্রকল্পের মেয়ার আরও একবছর বৃদ্ধির আবেদন করা হবে।
তিনি আরও জানান, আমাদের জনবল দিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম সঠিকভাবে হয়নি বিধায়ে এই প্রকল্প নেয়া হয়েছে। আশা করি দ্রুতই সমাধান হবে।
দ্রুত উদ্ধার কাজের পরিকল্পনা
জলভাগে ও নৌরুটে দুর্ঘটনা কবলিত ব্যক্তি ও যানের অবস্থান শনাক্ত করা এবং উদ্ধার কাজ পরিচালনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সক্ষমতা বাড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আধুনিক উদ্ধার সরঞ্জাম ও প্রযুক্তির সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের ডুবুরিদের পরিচিত করা এবং আধুনিক উদ্ধার কৌশল প্রয়োগে পারদর্শী করা এবং যেকোনও দুর্ঘটনায় উন্নত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
এ লক্ষ্যে সরকার একটি স্যালভেজ ফায়ার ফাইটিং টাগ, সাতটি পন্টুন ও জেটি, ১৪টি হেভি ডিউটি রেসকিউ বোট, ১৪টি লাইট ডিউটি রেসকিউ বোট, সাতটি রেসকিউ ভেহিক্যাল, ৪২টি ডাইভং অ্যাপারেটারস সেট, সাতটি এয়ার কমপ্রেসার মেশিন, সাতটি লাইট ট্রাক (রেসকিউ বোড পরিবহন), সাতটি পোর্টেবল ডি-কমপ্রেসার চেম্বার, একটি বিল্ড ভেহিক্যাল মাউন্টেড ডি-কমপ্রেসার চেম্বার এবং বিভিন্ন রেসকিউ সরঞ্জাম সংগ্রহ করবে।