এপ্রিল ৬, ২০২৩, ১০:১৭ পিএম
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ডাকে বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে আর্থিক সহায়তা নিয়ে দাঁড়ানো ব্যক্তির তালিকা ক্রমেই বাড়ছে।সংগীতশিল্পী তাহসান এক লাখ টাকায় একটি পোড়া লুঙ্গী কিনে নেওয়ার পর পর্যায়ক্রমে চিত্রনায়িকা বুবলি, অভিনেত্রী-মডেল বিদ্যা সিনহা মিম, সংগীতশিল্পী কোনাল, পরিচালক অমিতাভ রেজা, নায়িকা নিপুন ও সাবিলা নুর, চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও রিয়াজ বঙ্গবাজারে আগুনে পুড়ে যাওয়া পোশাক কিনেছেন।
'আশা করছি আমরা ভালো কিছু করতে পারবো," দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে এমন আশাবাদের কথাই বললেন বিদ্যানন্দের করপোরেট কমিউনিকেশন সেল প্রধান সালমান খান ইয়াসিন।
সালমান বলেন, শুরুটা হঠাৎ করেই। আমরা বিদ্যানন্দের পক্ষ থেকে উদ্ধার কাজে সহায়তা করতে গিয়েছিলাম। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আহাজারি আমাদের ব্যাকুল করে তোলে। তাৎক্ষণিক আমরা টেক্সট মেসেজ দিয়ে প্রথমে তাহসান এবং পর্যায়ক্রমে অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীকে আর্থিক সহায়তার বিষয়ে আ্যাপিল করি। তাহসান নিজে এ আহবান তাঁর সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন। এরপর থেকে আমাদের ডাকে সাড়া দেওয়া ব্যাক্তির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
‘আমরা একটা সিম্বলিক কাজ করার চেষ্টা করি যা কল্যাণমূলক এবং অন্যরা তা রেপলিকেট করবে— এটাই আমাদের চ্যারিটি ওয়ার্কের কনসেপ্ট ‘ যোগ করেন সালমান।
সালমান বলেন, প্রতিবছর বঙ্গবাজার থেকে কাপড় কিনি। আমাদের দাতা ও শুভ্যানুধায়ীদের দেওয়া অর্থ দিয়ে সর্বাধিকসংখ্যক অভাবি মানুষকে সেবা দেওয়ার প্রচেষ্টা থাকে। আর তাই সাশ্রয়ী দামে ভালো মানের পোশাকের একটা বড় সাপ্লাই হয় বঙ্গবাজার থেকে। এবার তারা অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্ব হারিয়েছে। এ সময় তাদের পাশে কীভাবে থাকা যায়— সে ভাবনা থেকেই তারকাদের নিয়ে পোড়া কাপড় বিক্রি'র এ কর্মসূচী।
সালমান বলেন, সুপারশপ 'স্বপ্ন' কর্তৃপক্ষ আমাদের এ বার্তা টেক্সট মেসেজ আকারে তার গ্রাহকদের পাঠাচ্ছে সহযোগিতা চেয়ে। এটাও একধরনের প্রচার ও মানবিক এ কর্মসূচীতে অংশগ্রহন। বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান সামাজিক দায়িত্ববোধ বা করপোরেট স্যোশাল রেসপমন্সিবিলিটি (সিএসআর) ফান্ড নিয়ে আমাদের এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করতে পারে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সাধারনত দুঃস্হ ও অসহায় মানুষদের জন্য ১ টাকার বিনিময়ে ১ বেলা পেট পুরে খাবারের সরবরাহ করে আলোচনায় আসে।আরও কর্মসূচির মধ্যে আছে ১ টাকায় চিকিৎসা, দরিদ্র পরিবারের অন্তসত্বা নারীর জন্য ১ টাকায় ১ গ্লাস দুধ, দুঃস্হ ও পথশিশুদের জন্য বিনামূল্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, শিক্ষা বৃত্তি কার্যক্রম, দানকৃত যাকাতের টাকায় দরিদ্র পরিবারের স্ব-কর্মসংস্হান, পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্যের বিনিময়ে নিতপন্যসামগ্রী দান, ইমারজেন্সি রিলিফ সাপোর্ট ও দুঃস্হদের জন্য ইফতার বিতরন।
এছাড়াও বিদ্যানন্দকে চট্রগ্রামে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কতৃক বিনা ভাড়ায় দেওয়া একটি ভবনে কোভিডকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
এ ফাউন্ডেশনের মানবিক ও সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রম স্বল্প সময়ে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। স্বতস্ফুর্তভাবে অনেক পেশার মানুষ এ প্রতিষ্ঠানকে অর্থ দান করে আসছেন।
অডিট প্রতিষ্ঠান একনাবিন (লেভেলে-১৩, বিডিবিএল ভবন, কারওয়ান বাজার) এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১২ মাসে মোট অনুদান পায় ২ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকার কিছু বেশী। আর একই সময়ে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে বিদ্যানন্দ ব্যয় করেছে ২ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকার কিছু বেশী।
২০১৯ সালে জানুয়ারি-ডিসেম্বর সময়ে এ প্রতিষ্ঠান মোট ৬ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা অনুদান পায় এবং ব্যয় করে ৬ কোটি ২১ লক্ষ টাকা। ২০২০ সালে করোনার বছরে প্রথম ছয় মাসে এ প্রতিষ্ঠান অনুদান পায় ২১ কোটি ৮ লক্ষ টাকার মতো। আর মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২০ কোটি ৪ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা।
বিদ্যানন্দ ফউন্ডেশনটি প্রতিষ্ঠা করেন পেরু প্রবাসী বাঙালী কিশোর কুমার দাস। তাঁর হয়ে দেশে যাবতীয় যোগাযোগ ও ব্যবস্হাপনা পরিচালনা ও দেখাশুনা করেন করপোরেট কমিউনিকেশন সেল প্রধান সালমান খান ইয়াসিন।
সালমান দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, বিদ্যানন্দ অনুদান হিসেবে যা পায় তাঁর ৯৭ শতাংশ এন্ড ইউজার বা টার্গেট বিনিফিসিয়ারী (লক্ষ্যিত জনগোষ্ঠী)'র কাছে পৌঁছায়। বাকী ৩ শতাংশ থেকে পরিচালন ব্যায়, পরিবহন খরচ ও বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করে।
বিদ্যানন্দ তাঁর মানবিক ও সামাজিক কল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে দেশব্যাপী আলোচিত হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার এবছর বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনকে 'একুশে পদক' এ ভূষিত করেছে। গত ১২ই ফেব্রুয়ারি সরকার ২১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এ পদকের জন্য মনোনয়ন ঘোষণা করে।
অনেকে বলেছেন, দেশে ব্রাক, আশা ও প্রশিকাসহ অনেক বড় বড় এনজিও বা বেসরকারী সংস্হা কর্তৃক বাস্তবায়িত সামাজিক ও মানবিক কর্মসূচিগুলোতে বিদ্যানন্দের মতো নিঃস্বার্থে নিবেদিত ও স্বচ্ছ কার্যক্রম দেখা যায়নি।
তারা বলেছেন, বিদ্যানন্দের কার্যক্রম ওইসব এনজিও-র কর্মকান্ডের অনেক উর্ধ্বে উঠে আলো ছড়াচ্ছে।
একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে প্লানিং কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত মোর্শেদ হায়দার বলেন, বিদ্যানন্দ সত্যিকারের ভালো কাজ করছে। বিদ্যানন্দ দেশের অন্য সব এনজিওকে ছাড়িয়ে উর্ধ্বে উঠে যাবে। কারণ তাদের সাথে জনগণ আছে।