স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে এসব হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর টিকার প্রয়োগ শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারটি, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারটি, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চারটি এবং কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে একটি বুথে নিবন্ধিতেদের করোনা টিকা দেওয়া হয়।
ওই পাঁচটি হাসপাতালে ৫০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য ধরে সকালে কাজ শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ৫৪১ জন। সকাল ৯টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বুথে প্রথম টিকা নেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।
পরে বেলা পৌনে ১১টার দিকে টিকা নেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনিই দেশের প্রথম সংসদ সদস্য এবং সরকারের প্রতিমন্ত্রী, যিনি টিকা পেলেন। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান, তথ্য সচিব খাজা মিয়া বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে গিয়ে টিকা নেন। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিন বলেন, বেলা ২টা পর্যন্ত টিকাদান চলে, মোট ১৯৮ জনকে টিকা দেওয়া হয়।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদও এদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা নেন। সেখানে এদিন ১২০ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে বলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক জানান। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, বৃহস্পতিবার ১০০ জনকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য ছিল তাদের।
“আগ্রহীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আরও ২০ জনকে দেওয়া হয়েছে। এখানে খুবই সুন্দরভাবে টিকাদান কার্যক্রম শেষ হয়েছে।”
বেলা ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে’ টিকা দেওয়া হচ্ছে। ‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ’ টিকা নিচ্ছেন। একটা আনন্দঘন পরিবেশে টিকা দেওয়া কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অনেকেই টিকা নিয়েছেন, অনেকেই এসেছেন। যে পরিবেশ, মনে হল যে ঈদের ভাব। যেভাবে ঈদ হয়, সেরকম আনন্দমুখর পরিবেশে টিকা নেওয়া হচ্ছে। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হয়েছে ‘
এখন পর্যন্ত যারা টিকা নিয়েছেন, তারা সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন এবং কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা শোনেননি বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
মুগদা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসক, নার্সসহ ৬৫ জনকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ মো. আহমাদুল কবীর। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের স্টাফদের অনেকেই টিকা নিতে চাচ্ছে। ভ্যাকসিনের সেরকম কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। অথচ বিভিন্ন ধরনের গুজব আছে। ধীরে ধীরে মানুষের সংশয় দূর হয়ে যাবে। মানুষও টিকা দিতে আগ্রহী হবে।’
বৃহস্পতিবার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৫৮ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে বলে হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ছিল ৫০ জনকে দেওয়ার। তবে আগ্রহীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এ সংখ্যাও বেড়েছে। আজ আমাদের হাসপাতালের স্টাফরাই টিকা নিয়েছে। আমি নিজেও নিয়েছি। কারও মধ্যে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।”
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এদিন ১০০ জনকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। শেষ পর্যন্ত সেই ১০০ জনকেই টিকা দেওয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এ হাসপাতালের একজন নার্সকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে বুধবার বিকালে বহু প্রতীক্ষিত টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয় বাংলাদেশে।
বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা, যা ‘নিরাপদ এবং অধিকাংশের ক্ষেত্রে কার্যকর সুরক্ষা দিতে পারে’ বলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে। আট সপ্তাহের ব্যবধানে এ টিকার দুটি ডোজ নিতে হবে সবাইকে।
বাংলাদেশে যেহেতু এ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি, তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী প্রথম দফায় ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যক্তির উপর এ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে তাদের পর্যবেক্ষণ করা হবে। সব ঠিক থাকলে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন।