জুন ২৮, ২০২২, ০৭:১৭ পিএম
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহি দেখতে চাওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন এমন কিছু না হয় তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাহিনীটির সংস্কার চায় বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত রাষ্ট্রদূত দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরে ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা বিভাগকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
ওই সাক্ষাতকারে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক, রোহিঙ্গা ইস্যু, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েও বিভিন্ন প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দিয়েছেন তিনি।
সাক্ষাৎকারের শুরুতেই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বর্ষপূর্তি নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত হাস বলেন, “বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের, বন্ধুত্বের ৫০তম বর্ষপূর্তির এই সময়ের চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে! গত ৫১ বছরে বাংলাদেশ অসাধারণ সব উন্নতি করেছে।”
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকিসিন কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, “একেবারে শূন্য থেকে শুরু করে কেবল স্বাধীনতার ধারণা নিয়ে পথচলা দেশটি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চমৎকার উন্নতি করেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় দেশটি এশিয়ার মধ্যে অন্যতম। উন্নতি করেছে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণেও। আমার কাছে যেটা বিস্ময়কর সেটা হলো, ৯৬% টিকাদানের হার, যা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ।”
গত বছর ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার’ অভিযোগে বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
এবিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পিটার ডি হাস বলেন, “বিচারবহির্ভূত হত্যা একটা ইস্যু। মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনগুলোতে র্যাব দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়টি অনেক বছর ধরেই উঠে এসেছে। এসব নিয়ে উদ্বেগের কারণে আমরা ২০১৮ সালে র্যাবকে প্রশিক্ষণ প্রদানও বন্ধ করে দিয়েছি। সুতরাং, অবশ্যই র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার একটা প্রভাব তো রয়েছেই। এগুলো অবশ্যই পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।”
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, “নিরাপত্তা ক্ষেত্রে যেমন আমরা নিরাপত্তা বাহিনীকে নিবিড়ভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশে ইতিপূর্বে ঘটে যাওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহি দেখতে চাই এবং ভবিষ্যতে র্যাব যেন এমন কিছু না করে সেজন্য বাহিনীটির সংস্কার চাই।”
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদানে বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করে পিটার ডি হাস বলেন, রোহিঙ্গারা যখন বার্মাতে (মিয়ানমারে) গণহত্যার শিকার হচ্ছিল, তখন অন্য কোনো দেশ নয়, বাংলাদেশই তাদের আশ্রয় দিয়েছিল। আমার মনে হয়, বাংলাদেশ বা বিশ্বের কেউই তখন প্রত্যাশা করেনি যে, তারা ৫ বছর ধরে (এখন পর্যন্ত) এখানেই থাকবে।”
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, “তারা (রোহিঙ্গারা) যেন নিরাপদে, আত্মমর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে (যেমনটি তারা চায়) সেটি নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, যতক্ষণ তারা নিজ দেশের বাইরে অবস্থান করছে ততক্ষণ তাদের জীবিকা, শিক্ষা এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এসব নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে যাতে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়, যাতে তারা নিজ দেশে ফিরে গিয়ে নিজেদের দক্ষতা দিয়ে টিকে থাকতে পারে, বেঁচে থাকতে পারে। “
দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিষয়ে কথা বলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, “কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান হলো মুক্ত গণমাধ্যম। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের কারণে এটা বাংলাদেশে চাপের মধ্যে রয়েছে। এই আইনের কিছু প্রস্তাবিত ‘রেগুলেশন’ বরং সাংবাদিকদের জন্য কাজ করাটাকে আরও কঠিন ও ভয়ঙ্কর করে তুলবে।”
সরকারের কোনো ভুল দেখলে তার সমালোচনা করার যেন গণমাধ্যমের সম্পূর্ণ অধিকার থাকে আশাবাদ ব্যক্ত করে হাস আরও বলেন, “আমি মনে করি, নির্বাচনের সময় এ বিষয়টি অত্যন্ত মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সক্রিয় গণমাধ্যম ছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রেও অনেক রাজনীতিবিদ গণমাধ্যমকে পছন্দ করেন না কারণ গণমাধ্যম তাদের ঘাম ছুটিয়ে দেয়।”
যুক্তরাষ্ট্রে এবং বাংলাদেশে ফিরে আসা বাংলাদেশি আমেরিকানদের সাফল্য আমাকে আনন্দিত করে উল্লেখ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, “বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে যেভাবে এগিয়ে নিতে চায় আমরাও ঠিক সেভাবেই এগিয়ে যেতে চাই।”