রাজধানীর ৬৬ শতাংশ ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ২৯, ২০২১, ০৭:১৮ পিএম

রাজধানীর ৬৬ শতাংশ ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ

রাজধানীর অধিকাংশ ভবনগুলোর অনুমোদন ও নকশার বাহিরে গিয়ে নির্মিত। যার ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দূর্ঘটনার ঝুঁকি। রাজধানীর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) মতে রাজধানীর ৬৬ শতাংশ ভবনই নিয়ম ভঙ্গ করে নির্মাণ করা হয়েছে। এর ফলে পরিকল্পিত নগরায়ন ব্যহত হবার পাশাপাশি দূর্ঘটনার ঝুঁকিতে রয়েছে ভবনগুলো। তবে জরিপের তথ্য পাওয়ার ২ বছরের মধ্যেও কোন কার্যকরী পদেক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

নিয়ম মানা হয়নি অধিকাংশ ভবন নির্মাণে

রাজধানীর ৩ তলা বা তার বেশি উচ্চতার ভবনগুলো নিয়ে জরিপ করেছে রাজউক। জরিপে দেখা যায় ২ লাখ ৪ হাজার ১০৬টি ভবনের মধ্যে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬২৫টি ভবন নিয়ম ভঙ্গ করে নির্মাণ করা হয়েছে। শতকরা হিসেবে এটা ৬৬.১১ ভাগ৷ ২০১৮ সালে প্রায় ৭ মাস ধরে এই জরিপ চালান হয়।

ড্যাপ-এর করা জরিপে দেখা যায়, ঢাকা শহরে সাততলা বা তার চেয়ে উঁচু ভবন আছে ১৬ হাজার ৯৩০টি৷ আইন অনুযায়ী এসব ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক৷ কিন্তু ফায়ার সার্ভিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মাত্র ৫ হাজার ২৪টি ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ৩৪ শতাংশ ভবনই ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র নেয়নি। এদিকে ফায়ার সার্ভিস ৫ হাজারেরও বেশি ভবনকে নোটিশ দেয়৷ কারণ তাদের ফায়ার সিস্টেম নেই বা কার্যকর নয়৷

দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস

মগবাজারের ভবন বিস্ফোরণের পর আবারও ভবন নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যার ফলে ইতোমধ্যে ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে রাজউক। এছাড়া জরুরী ভিত্তিতে নগর পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে বৈঠকও ডেকেছে।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী দ্য রিপোর্টকে বলেন, জরিপ করার পর অভিযান চলেছিল। তবে মহামারীর কারনে অভিযানের গতি কিছুটা কমে গিয়েছিল। শীঘ্রই তালিকা ধরে ভবনগুলো সংশোধনে জোরদান করা হবে। জরিপে ক্রুটিপূর্ণ ভবনগুলো আশেপাশের ভবনগুলোর জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। যার ফলে এই বিষয়ে দ্রুতই পদক্ষেপ নেয়া হবে।

Nuri

বৃহস্পতিবার নগর পরিকল্পনাবিদদের সাথে বৈঠক করবেন বলে জানান রাজউক চেয়ারম্যান।

মগবাজারের ভবন বিস্ফোরণের ঘটনায় ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, পুরো রাজধানী জুড়েই ভবনগুলো সংস্কারের প্রয়োজন। যার ফলে আমরা নগর পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে জরুরী বৈঠক ডেকেছি চলতি সপ্তাহে। তাদের মতামত ও পরামর্শক্রমে আমরা সিদ্ধান্ত নিব।

গুচ্ছ আকারে ভবন চিহ্নিত করার তাগিদ

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, সারা ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করলে লাভ নেই। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মার্কেট, শপিং কমপ্লেক্স, অফিস, বাণিজ্যিক কেন্দ্রর মতো ভবন, যেখানে লোক সমাগম বেশি হয় সেগুলো নিয়ে আগে কাজ করা দরকার৷ সেগুলোর ফায়ার সেফটি ও সিকিউরিটি নিয়ে আগে ভাবা উচিত৷

নতুন ৪০ হাজার ভবনে সনদ ১৬১ টি

২০০৮ সালে ইমারত নির্মাণ আইন পরিবর্তন করে অকুপেন্সি সার্টিফিকেটের বিধান করা হয়৷ এই বিধান অনুযায়ী, ভবন নির্মাণের পর রাজউক এবং এক্সপার্টদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটি ভবনটি অনুমোদিত নকশা এবং সব নিয়ম মেনে তৈরি হচ্ছে কিনা, তা দেখে ব্যবহারের ছাড়পত্র দেবে৷ তারপর গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন দেয়া হবে৷

স্থপতি ইকবাল হাবিব জানান, ২০০৮ সালের পর থেকে ঢাকা শহরে ৪০ হাজার ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নিয়েছে মাত্র ১৬১টি ভবন৷ এই কাজের গাফলতি সম্পূর্ণ রাজউকের। মানুষ মারা গেলে তারা বলে ভবনটি অননুমোদিত।এই অননুমোদিত ভবনের দায় রাজউকের৷ এরজন্য তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

Link copied!