ডিসেম্বর ১২, ২০২৩, ০৭:১৬ পিএম
বাংলাদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নাগরিক পরিসর সংকুচিত হওয়ার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বিশ্বের ছয়টি সংগঠন। এছাড়াও দেশটির এই পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও মৌলিক অধিকার রক্ষার পক্ষে কাজ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানায় তারা।
সংগঠনগুলো হলো- রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস (আরএফকেএইচআর), ক্যাপিটল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট (সিপিজেপি), দ্য ইউনাইটেড অ্যাগেইনস্ট টর্চার কনসোর্টিয়াম (ইউএটিসি), এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সেস (এএফএডি), অ্যান্টি-ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক (এডিপিএএন) ও ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস (আইসিএইডি)।
মঙ্গলবার রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের (আরএফকেএইচআর) ওয়েবসাইটে সংগঠনগুলোর একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, রাজনৈতিক বিরোধীদের সমন্বিত বিক্ষোভ-সমাবেশের পর গত অক্টোবরের শেষের দিক থেকে ক্ষমতাসীন দল প্রতিবাদ ও রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনে সহিংসতার আশ্রয় নিয়েছে।
আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নির্বিচারে ও মাত্রাতিরিক্ত কাঁদানে গ্যাসের শেল, লাঠি, রাবার বুলেটসহ অনুরূপ হাতিয়ার ব্যবহারে সহিংসতা বৃদ্ধি গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছে বলে জানায় সংগঠনগুলো। তারা পুলিশের সরঞ্জামের অপব্যবহার মোকাবিলায় অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে মনে করছে।
সংগঠনগুলো জানায়, এই ধরনের হাতিয়ারের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার শুধু নাগরিকদের মৌলিক অধিকারকেই লঙ্ঘন করে না অধিকন্তু তা উত্তেজনা বাড়ায়, এমন পরিবেশ ভীত পরিবেশ তৈরি করে, যা ভিন্নমত, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও গণতান্ত্রিক সংলাপের ভিত্তিকে দুর্বল করে।
সংগঠনগুলো বিবৃতিতে আরও বলেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবশ্যই জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের বলপ্রয়োগ ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার-সম্পর্কিত জাতিসংঘের মৌলিক নীতি, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কম প্রাণঘাতী অস্ত্রের বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার নির্দেশিকা অনুসরণ।
সংগঠনগুলো জানায়, ক্ষমতাসীন দলের দমনপীড়নের জেরে একজন সাংবাদিকসহ ১৭ জন নিহত হয়েছেন। প্রায় ৮ হাজার ২৪৯ বিরোধী নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে হবিগঞ্জের শায়েস্তানগর এলাকায় আয়োজিত মানববন্ধনের সময় পুলিশ, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত অক্টোবরের শেষ দিক থেকে এ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। ব্যাপক ও নির্বিচারে আটক এসব ব্যক্তি বিরোধী দলের সদস্য বলে মনে করা হয়। হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের ওপর কথিত নির্যাতন গত মাসের ঘটনার মধ্যেই শুধু সীমাবদ্ধ নয়। বরং অতীতেও তা হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়।
হেফাজতে কথিত নির্যাতনের মধ্যে আছে মারধর, বৈদ্যুতিক শক, ওয়াটারবোর্ডিং, পঙ্গু বানাতে ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি করা, হাঁটুভাঙা, মেরে ফেলার উদ্দেশ্যমূলক ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা, জোরপূর্বক নগ্ন করা। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে প্রধান বিরোধী নেতাদের গণহারে দোষী সাব্যস্ত করতে সরকার পদ্ধতিগতভাবে বিচার বিভাগকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
এতে আরও বলা হয়, গণতন্ত্রের মৌলিক নীতিগুলো সমুন্নত রাখার পরিবর্তে বাংলাদেশ সরকারের সহিংস ও দমনমূলক প্রতিক্রিয়া নাগরিকদের জন্য ভয়, উদ্বেগ ও চরম নিরাপত্তাহীন একটি পরিবেশ তৈরি করেছে।
তাই তারা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি এই আহ্বান জানাচ্ছে— অবিলম্বে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করুন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতার অধিকার নিশ্চিত করুন। জীবন, স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত অখণ্ডতার অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা দেখান।
নিঃশর্তভাবে সব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার করুন। নির্বিচারে আটক সব কর্মী ও বিরোধী দলের সদস্যকে মুক্তি দিন। সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ বিচারপ্রক্রিয়া নিশ্চিত করুন।