ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪, ১২:৩৮ এএম
মিয়ানমারের রাখাইনে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে রবিবার পর্যন্ত দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) মোট ৬৮ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশে আসা বিজিপি সদস্যদের অস্ত্র ছিল। তাদের নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫ জন সদস্যের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মিয়ানমার সীমান্তের পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিজিপি সদস্যদের ফেরত পাঠানো হবে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, গতকাল শনিবার দিবাগত রাত তিনটার পর থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত তুমব্রু সীমান্তের ওপার থেকে তুমুল গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। পরে দুপুর ১২টার দিকে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী হেলিকপ্টারে করে আরাকান আর্মির ক্যাম্পে হামলা চালালে গোলাগুলির শব্দ কমে আসে।
গত রাতে গোলা এসে পড়ায় বাইশফাঁড়ির একটি ঘরে আগুন ধরে যায়। আরও কয়েকটি বাড়িঘরে গুলি এসে পড়েছে। রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সীমান্তের ওপার থেকে আসা গুলি হাতে বিদ্ধ হয়ে তুমব্রু ক্যাম্পপাড়ার এক বাসিন্দা আহত হন।
প্রচণ্ড গোলাগুলি শুরু হওয়ার পর থেকে আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে গেছেন তুমব্রু, কোনারপাড়া, ভাজাবনিয়া ও বাইশফাঁড়ি সীমান্তের শত শত পরিবার। এখন সীমান্তজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি, মিয়ানমারের বাহিনীর সদস্যদের বিজিবির তুমব্রু সীমান্তচৌকিতে আশ্রয় নেওয়ার ব্যাপারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেছেন, সীমান্তে বিজিবি ও পুলিশ সতর্ক অবস্থায় আছে।
জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্তের নিরাপত্তার সমস্যায় থাকা পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। সীমান্তের পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা বন্ধ রাখা হয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ির কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানান, যে এলাকা থেকে গোলাগুলির শব্দ আসছে, সেখানে বিজিপির তুমব্রু রাইট ক্যাম্প এবং ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি অবস্থিত। এ দুই স্থাপনা ছাড়া আশপাশের প্রায় ৪৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় বিজিপির বাকি সব চৌকি আরাকান আর্মি দখলে নিয়েছে। বাকি স্থাপনাগুলো দখলে নেওয়ার উদ্দেশ্যে সেখানে আরাকান আর্মির হামলা চলছে।
তুমব্রু ক্যাম্পপাড়ার বাসিন্দারা সীমান্তের ওপারের সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছেন, সীমানা খাল তুমব্রুর ওপর অবস্থিত মৈত্রী সেতু পার হলেই মিয়ানমারের বিজিপির তুমব্রু রাইট ক্যাম্প। সেখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি। এর চার কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে তুমব্রু লেফট ক্যাম্প। বিজিপির এই তিন স্থাপনা মাসখানেক ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছে আরাকান আর্মি।
বড় ধরনের আক্রমণে বিজিপি সদস্যরা টিকতে না পারলে জেলা শহর মংডু টাউনশিপের দিকে তাঁদের পশ্চাদপসরণের সুযোগ তেমন একটা নেই। এ ক্ষেত্রে তাঁরা বিকল্প হিসেবে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন।