এমন বর্ষবরণ আর দেখেনি বিশ্ব। গত কয়েক শতকের মধ্যে বিশ্বে সবচেয়ে অনাড়ম্বর আয়োজন ছিল এবারের বর্ষবরণে৷ করোনার কারণে বেশিরভাগ আয়োজনে ছিল না দর্শকের উপস্থিতি৷ তবে ব্যতিক্রমও ছিল। উত্তর কোরিয়া কিংবা বাংলাদেশের কথাই ধরা যায়, এরকম হাতে গোনা কয়েকটি দেশের বর্ষবরণ আয়োজন দেখলে মনেই হবে না যে, বিশ্বে এ মূহুর্তে করোনা নামের একটি মহামারী চলছে।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে তরুন-যুবকরা রাত বারোটা বাজার আগেই পথে নেমে আসে। যদিও রাজধানীতে দর্শকদের উপস্থিতি ছিল কম। এ অবস্থায় অনেকে নিজের বাসভবনের ছাদে উঠে আতশবাজি ও আগুনের ফানুস উড়িয়ে দেন। সরেজমিনে রাত সোয়া একটার দিকে গ্রিনরোডের হাতিরপুল কাঁচাবাজারের কাছে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিশালাকার একটি আগুনের ফানুস মোতালেব টাওয়ারের সামনের রাস্তায় গিয়ে নামে। আরেকটু হলেই আগুনসহ ফানুসটি কোনো ভবনে বা ইলেকট্রিকের তারে গিয়ে পড়তে পারত। রাস্তায় পড়ার পর এক পথচারি গিয়ে ফানুসের আগুনটি দ্রুত নিভিয়ে দেন।
রাজধানীর কারওয়ানবাজার, কলাবাগান, মতিঝিল, শাহবাগ, মহাখালী, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় লোকজন রাত জেগে নিজেদের সাউন্ড সিস্টেমে ইংরেজি, হিন্দি, বাংলা গান বাজিয়ে রাতভর উৎসব করেন। সবচেয়ে বেশি বেজেছে ইংরেজি গান। এরপরই হিন্দির দাপট ছিল। তবে বাংলা গানও বাজিয়েছেন অনেকে। কলাবাগানের বশিরউদ্দিন রোডের প্রায় প্রতিটি বাসায় ধুমছে গান বেজেছে। রাত তিনটার দিকে একটি বাসার তিন তলা থেকে উচ্চস্বরে ভেসে আসছিল আইউব বাচ্চুর ‘এক আকাশ তারা তুই একা গুনিসনে/ গুনতে দিস তুই কিছু মোরে’ গানটি। মোট কথা করোনার কালো রাতকে রাজধানীবাসী আতশবাজির আলোয় ধাঁধিয়ে দিয়েছিল এদিন।
দক্ষিণ কোরিয়া:
রাজধানী সিউলে ছিল অন্যরকম এক পরিবেশ। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, সেখানে নতুন বছরের কোনো আয়োজন সেখানে চোখে পড়েনি৷ প্রশাসন সবধরনের বর্ষবরণ আয়োজন বাতিল করেছিল আগেই। অথচ সিউলে প্রতি বছর বর্ষ বরণের আয়োজনে রাস্তায় লাখো মানুষের ঢল নামে।
অস্ট্রেলিয়া:
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবারে বর্ষ বরণ প্রতিবছর চমক নিয়ে আসে। কিন্তু এবার নতুন বছরকে বরণ করতে ১২ মিনিটের একটি সংক্ষিপ্ত আতশবাজি পোড়ানোর অনুষ্ঠান হয়। করোনার কারণে গুটি কয়েক দর্শক ছিল এই আয়োজনে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত:
দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় বরাবরের মতো ইংরেজি নতুন বছরকে বরণ করতে আতশবাজির আয়োজন ছিল। আট মিনিটের এই সংক্ষিপ্ত প্রদর্শনী দেখতে সেখানে উপস্থিত ছিল অল্প কয়েকজন দর্শক। স্থানীয় প্রশাসন করোনার কারণে শহরজুড়ে আগে থেকেই কড়াকড়ি জারি করে।
রাশিয়া:
রাজধানী মস্কোর রেড স্কয়ার এবার অবিশ্বাস্যরকমের ফাঁকা ছিল। ক্রেমলিনের স্পাসকায়া টাওয়ারে আতশবাজির ঝলকানি দেখা গেছে যদিও। করোনার কারণে মধ্যরাত থেকে বার, রেস্তোরাঁ সবই বন্ধ ছিল।
ফ্রান্স:
বিশ্বের সাংস্কৃতিক রাজধানী প্যারিসে ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টা থেকে জারি হয়েছিল কারফিউ। রাস্তায় রাস্তায় টহল ছিল পুলিশের। নিউ ইয়ারের আয়োজনে যেখানে ক্যাম্পস এলিসি এভিনিউ লোকে লোকারণ্য হয়ে থাকতো, সেখানে ছিল না কোনো মানুষের উপস্থিতি।
যুক্তরাষ্ট্র:
করোনায় বিপর্যস্ত নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে জনসাধারণের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। প্রশাসন আগে থেকেই কড়াকড়ি আরোপ করে জনসমাগমের ওপর। তবে পিটবুল আর জেনিফার লোপেজের পারফর্মেন্স লাইভ দেখানো হয়েছে টিভিতে।
চীন:
চীনের উহান, যেখান থেকে করোনার উৎপত্তি, সেই শহরে বর্ষবরণের আয়োজন ছিল প্রতিবছরের মত স্বাভাবিক! কেবল জনগণের মুখে ছিল মাস্ক।
উত্তর কোরিয়া:
কম্যুনিস্ট রাষ্ট্রটির রাজধানী পিয়ং ইয়ং-এর বর্ষবরণ আয়োজন দেখলে মনে হবে না বিশ্বে কোনো মহামারী দেখা দিয়েছে। নাচে গানে ভরপুর আয়োজনে উপস্থিত ছিল হাজারো দর্শক। তাদের মুখে মাস্ক থাকলেও ছিল না সামাজিক দূরত্ব। প্রশাসন সেখানে উৎসবে অংশও নিয়েছে!