ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪, ০৮:৪৫ পিএম
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশবিরোধী শক্তি যখন অপপ্রচার করছিল যে শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি বহির্বিশ্বের সমর্থন নেই, তখন আইএমও নির্বাচনের মতো এমন আন্তঃরাষ্ট্রীয় একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্লাটফর্মে ১২৮টি দেশের অকুণ্ঠ সমর্থন সেই সব কুচক্রীদের অপপ্রচারকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে। এই বিজয় বাংলাদেশের জন্য একটি গৌরবজনক অর্জন এবং এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও নৌ বাণিজ্যে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।
রবিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আইএমওতে বাংলাদেশের যোগদানের সাফল্য উদযাপনের এক আয়োজনে এ কথা বলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর লন্ডনে আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থার (আইএমও) সদর দপ্তরে ২০২৪-২০২৫ সালের জন্য আইএমও কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল যেখানে ১৬৪টি সদস্য দেশের সরাসরি ভোটের মধ্যে ১২৮টি দেশের ভোট পেয়ে বাংলাদেশ ক্যাটাগরি সি সদস্যপদ লাভ করে।
এই বিজয় প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের আপামর মানুষের বিজয় উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন দেশের পরিবেশ সুরক্ষার সাথে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি, দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণের মত বিষয়ে আরও সক্ষমতা অর্জন করতে পারব। তাই এই বিজয় প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের আপামর মানুষের বিজয়, এই বিজয় শেখ হাসিনার সরকারের বিজয়। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে আমরা ২০১২ সালে মিয়ানমারের কাছ থেকে এবং পরবর্তীতে ভারতের কাছ থেকেও আন্তর্জাতিক সমুদ্র আদালতের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমুদ্র বিজয় লাভ করেছি যার ফলশ্রুতিতে আমাদের সুনীল অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়েছে। আর এই নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে নৌবাণিজ্যের কর্তৃত্ব নিয়ে ২০৪০ সালের ভিতর উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
নৌপ্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ১৭৫টি দেশের সংগঠন আইএমও বিশ্বের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। তেলের মূল্য নির্ধারণ, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সরবরাহ ও ব্যয় ব্যবস্থাপনার মত বৈশ্বিক নানাবিধ সূচক সমূহের উপর এই আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংগঠনটির বিধি বিধান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। সংগঠনটির মূল চালিকা শক্তি ৪০ সদস্যের কাউন্সিলের সদস্য পদ লাভের ফলে বিশ্বের পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধের পাশাপাশি বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করার সুযোগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের জন্য।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে আমরা ইতিমধ্যে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছি। আজ ভাবতেই ভালো লাগে যখন শুনি উন্নত বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বাংলাদেশের ম্যাক্রো ও মাইক্রো অর্থনীতিকে নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, বুঝতে চেষ্টা করছে বাংলাদেশের উন্নয়নের রহস্য।
নৌপ্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমি নির্দ্বিধায় বলতে চাই এই উন্নয়নের একমাত্র চাবি হল শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি দেশের মানুষের অবিচল আস্থা ও অকুণ্ঠ সমর্থন। এর প্রমাণ হল সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেখানে দেশের মানুষ শেখ হাসিনার উপর আস্থা রেখে তাকে টানা চতুর্থবারের মত প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছেন। দেশ বিরোধী গোষ্ঠী আজ নির্বাক। তাদের সকল ষড়যন্ত্র আজ ব্যর্থ হয়েছে।
উল্লেখ্য, আইএমও জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত সংস্থা। ১৭৫টি সদস্য রাষ্ট্র এবং ৩টি সহযোগী রাষ্ট্রের এই সংস্থার সদরদপ্তর লন্ডনে অবস্থিত। ১৯৪৮ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালে এর নাম ছিল ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম কনস্যাল্টেটিভ অর্গানাইজেশন (আইএমসিও)। ১৯৮২ সালে এর নাম ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন হয়।
সদস্য রাষ্ট্রগুলো প্রতি দুই বছর অন্তর অ্যাসেম্বলিতে মিলিত হয় কিন্তু আইএমও মূলত পরিচালিত হয় সমমর্যাদার ও ক্যাটাগরির ৪০ সদস্য বিশিষ্ট কাউন্সিল দ্বারা। আর এই কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয় প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের ভোটের মাধ্যমে। গত ১ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে আইএমও এর ৩২ তম সাধারণ অ্যাসেম্বলিতে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে/বাংলাদেশ ১২৮ টি ভোট পেয়ে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয়। এটি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অঙ্গনে নেতৃত্বের আসনে নিয়ে আসতে সহযোগিতা করবে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ছাড়া শুধুমাত্র বাংলাদেশ এই সম্মানজনক সদস্য লাভ করেছে।