দেশের অন্যতম বড় শিল্প হলো ইস্পাত খাত। ছোট বড় মিলিয়ে মোট কারখানার সংখ্যা দুই শতাধিক। এখন পর্যন্ত এই খাতে ৭৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে এবং বছরে লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু দেশের বিপুল কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম এই খাতে এখন প্রায় স্থবির অবস্থা।
হঠাৎ করেই ব্যাপকভাবে চাহিদা কমেছে রডের। হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেছেন অর্ধেক ক্রেতা। শিল্প টিকিয়ে রাখতে রডের দাম কমাতে হচ্ছে উৎপাদকদের। গত চার বছরের মধ্যে রডের দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। এতে লোকসানে পড়ছে হচ্ছে কারখানা মালিকদের। কিন্তু তাতেও ফিরছে না ক্রেতা। স্বাভাবিকভাবেই চরম দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে দেশের ইস্পাত খাত।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরই বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ স্তিমিত হয়ে গেছে।
অনেক ঠিকাদার গা ঢাকা দিয়েছেন। স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বাদ দেওয়ায় সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের উন্নয়নকাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
এর সঙ্গে যোগ হয়ে আবাসন খাতের সংকট। দেশের চলমান পরিস্থিতি ও ড্যাপের কারণে ফ্ল্যাট-প্লটের বাজারে চরম খরা দেখা দিয়েছে। এই খাতেও ক্রেতা নেই বললেই চলে। ফ্ল্যাট বিক্রি কমে যাওয়ায়, স্বাভাবিকভাবেই প্রভাব পড়েছে ইস্পাত শিল্পের ওপর।
এই অবস্থার মধ্যে চাহিদা না থাকায় ৭৫-গ্রেডের প্রতি টন এমএস রড বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮২ হাজার টাকায়। অথচ গত জুলাই মাস পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৯৫ হাজার টাকা। এই হিসাবে চার মাসের ব্যবধানে এমএস রডের দাম প্রতি টনে কমেছে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
এই দামে সর্বশেষ রড বিক্রি হয়েছিলো ২০২০ সালে। ২০২১ সাল থেকে দফায় দফায় রডের দাম দোম বাড়ে এবং ২০২২ সালে প্রতিটনের দাম এক লাখ টাকা ছাড়িয়ে পড়েছে।
হঠাৎ করেই ক্রেতা অর্ধেক হয়ে যাওয়ায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে ব্যবসায়ীদের। বিশেষ করে উৎপাদকরা পড়েছেন মহা দুশ্চিন্তায়। কারখানা টিকিয়ে রাখা নিয়েও সংশয়ে আছেনে অনেকে।
উৎপাদকরা বলছেন, ৭৫-গ্রেডের প্রতিটন রড উৎপাদনে খরচ পড়ছে ৯৫ হাজার টাকা। আর বিক্রি করতে হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ হাজার টাকায়। এখানে লাভ তো দূরের কথা, প্রতিটন রডে ১৫ হাজার টাকার মতো লোকসান গুনতে হচ্ছে।
দেশের অন্যতম রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম। এই কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বলছেন, নির্মাণ মৌসুমের সময়, অর্থাৎ নভেম্বর থেকে মার্চ মার্স পর্যন্ত, প্রতিদিন গড়ে রড বিক্রি আড়াই থেকে তিন হাজার। কিন্তু বর্তমানে তা নেমে এসেছে এক হাজার টনের নিচে।