কনস্টেবল কাউসার মানসিকভাবে ‘অসুস্থ’, দাবি পরিবারের

জাতীয় ডেস্ক

জুন ১০, ২০২৪, ০৪:১১ পিএম

কনস্টেবল কাউসার মানসিকভাবে ‘অসুস্থ’, দাবি পরিবারের

কনস্টেবল কাউসার আলী

গুলশানের ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে দায়িত্ব পালনের সময় সহকর্মীকে গুলি করে হত্যা করা কনস্টেবল কাউসার আলী ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ বলে জানিয়েছে তার পরিবার। কাউসারের স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন সাথী বলেছেন, “চাকরিতে থাকা অবস্থায়ই কয়েকবার পাবনায় একটি হাসপাতালে আমার স্বামী (কাউসার) চিকিৎসা নিয়েছেন।”

এদিকে পরিবারের পক্ষ থেকে কাউসারকে মানসিক ভারসাম্যহীন দাবি করা হলেও পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কাউসারের মানসিক অসুস্থতার কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।

চলতি সপ্তাহের শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর গুলশানে ফিলিস্তিন দূতাবাসের উত্তরপাশের গার্ডরুমের সামনে দায়িত্ব পালনের সময় কাউসার এসএমজি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে কনস্টেবল মনিরুল ইসলামকে হত্যা করেন। তার গুলিতে জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক সাজ্জাদ হোসেন শাহরুখও আহত হন।

এ ঘটনায় নিহত মনিরুলের ভাই কনস্টেবল মাহাবুবুল হক গুলশান থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কাউসারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

কাউসার আলীর বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা সদর ইউনিয়নের দৌলতখালী দাড়েরপাড়া গ্রামে। বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়াত আলী মাস্টারের ছোট ছেলে তিনি। তার স্ত্রী ও দুই ছেলে গ্রামের বাড়িতেই থাকতেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন কাউসার। ২০১০ সালের দিকে তার মধ্যে মানসিক অসুস্থতার উপসর্গ দেখা দেয়। তিনি কারও সঙ্গে কথা বলতেন না ও অল্পেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতেন। চাকরিরত অবস্থায় এই ধরনের উপসর্গের কারণে তাকে কয়েক দফা চিকিৎসাও করানো হয়। স্বজনদের ভাষ্য, কাউসার মাদকাসক্ত ‘ছিলেন না’ ও পারিবারিকভাবে তেমন কোনো ‘সমস্যাও ছিল না’।

কাওসারের স্ত্রী সাথী বলেন, “গত ৪-৫ দিন ধরে আমাদের সঙ্গে কম কথা বলছিল। মাঝেমধ্যে যখনই মানসিক রোগে আক্রান্ত হতো, এরকম করতো। কয়েকবার পাবনায় একটি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসাও করানো হয়েছে। চিকিৎসার কাগজপত্র আমার স্বামীর কাছে আছে। আমাদের পারিবারিকভাবে সমস্যা ছিলো না। তবে মানসিক রোগে আক্রান্ত হলে কম যোগাযোগ করতো।”

কাউসারের মা মাবিয়া খাতুন বলেন, “আমার ছেলে এমনিতে খুব ভালো। তার মাথার সমস্যা আছে। চাকরি শুরুর কয়েক বছর পর ও অসুস্থ হয়। আমার সঙ্গে শনিবার রাতে শেষবার কথা হয়েছে। আমার সঙ্গে ভালোভাবেই কথা বলেছে। ‘মা কেমন আছো, আব্বা কেমন আছে’- এগুলো জিজ্ঞাসা করেছে। তবে কয়েকদিন ধরে বাড়িতে একটু কম কথা বলতো আমার ছেলে।”

এই পরিবারের প্রতিবেশী দৌলতপুর সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, “কাউসার মাদকাসক্ত ছিলেন না। তবে মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন তিনি। চাকরিতে যোগদানের ৫ বছর পর থেকে তিনি মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। চিকিৎসা করানোর পর সুস্থ হলে আবার চাকরিতে যোগ দেন তিনি।”

ঠিক কী কারণে কাউসার তার সহকর্মীর ওপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি চালন, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, সেদিন রাত পৌনে ১২টার দিকে কাউসার আলীর সঙ্গে ‘ডিউটি করা নিয়ে’ মনিরুলের বাগবিতণ্ডা হয়েছিল। একপর্যায়ে কাউসার উত্তেজিত হয়ে অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকেন।

পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, মনিরুলের শরীরে এলোপাতাড়ি গুলি করা হয়। মাথার বামপশে একাধিক গুলির চিহ্ন ছিল। বামচোখ, বাম হাতের বাহু, ডান হাতের কনুই, গলার নিচ থেকে কোমর পর্যন্ত- বুকে, পেটে, পিঠে বিভিন্ন স্থানে গুলির ক্ষত রয়েছে।

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, “টরাস এসএমটি সাবমেশিন গান দিয়ে কাউসার গুলি করেন। তার কাছে দুটি ম্যাগাজিন ছিল। প্রতিটা ম্যাগাজিনে ৩০টি করে ৬০ রাউন্ড গুলি থাকে। একটা ম্যাগাজিন শেষ হওয়ার পর আরেকটা ম্যাগাজিন অস্ত্রে লাগিয়ে ৮ রাউন্ড গুলি করে। পরের ওই ম্যাগাজিন থেকে ২২ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া গেছে।

কাউসার মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে থাকলে তিনি কীভাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন জানতে চাইলে গুলশান থানার ওসি বলেন, “সে মানসিকভাবে অসুস্থ এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। এমন দাবির পক্ষে পরিবার এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।”

Link copied!